অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করছেন। এটি তার চতুর্থ বাজেট। ঘোষিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের সম্পূরক শুল্ক, আমদানিশুল্ক অথবা মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। এতে কিছু পণ্যের আমদানিতে ব্যয় বাড়তে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে বাড়তি কর দিতে হবে। ফলে দাম বাড়তে পারে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে তা নিচে দেওয়া হল
বাজেটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাপানুকুল সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার এমএস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি ক্ষেত্রে জনপ্রতি ২০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মোবাইল টেলিফোনের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট, পিপিই, প্রটেক্টিভ গার্মেন্টস, প্লাস্টিক ফিশ সিল্ড, মেডিকেল প্রটেক্টিভ গিয়ার ছাড়াও বেশকিছু মেডিকেল পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এ ধরণের পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, এলপিজি সিলিন্ডারের ওপরে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমানের ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ আছে। যা আরও এক বছরের জন্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এছাড়া বডি স্প্রে, প্রসাধনী পণ্য, প্যাকেটজাত খাদ্য দ্রব্য, আমদানি করা ফল-ফুল, আমদানি করা ফার্নিচার, কসমেটিকস, বিড়ি-সিগারেট, তামাক, প্রাইভেটকার, আমদানি করা ফ্রিজ, এসি, আমদানি করা মোটরসাইকেল, আমদানি করা মুঠোফোন ও গুঁড়ো দুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বেলা ১২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনে এ বৈঠক শুরু হয়। এতে অর্থমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা অংশ নেন।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার।
এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।