ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার বরিশুর এলাকায় পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর আত্মগোপনে থাকা আসামি নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, ১২ বছর আগে নিহত রেশমার সঙ্গে নুরুলের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১০ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর অনুমতি নিয়ে রেশমা জর্ডান চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় দুজনের মধ্যে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে তাদের বিচ্ছেদ হয়।
রোববার (২২ মে) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে নুরুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল র্যাবকে জানান, পেশায় তিনি বাবুর্চি। পাশাপাশি তার বোরকা তৈরির একটি কারখানা ছিল। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার (২৩ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০-এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৮ এপ্রিল রেশমা দেশে ফিরে এলে তালাক হওয়া সত্ত্বেও প্রাক্তন স্বামী নুরুল তাকে নিয়ে আবার সংসার করতে চান। এজন্য রেশমাও তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিভিন্নভাবে আকুতি-মিনতি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সবাই রাজি হলে গত ১৫ মে থেকে আবারও সংসার শুরু করেন তারা।
র্যাব-১০-এর এই অধিনায়ক বলেন, “ঘটনার দিন সকালে এই দম্পতি তাদের ছেলে মো. ইয়াসিনকে (১০) মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে যান। ফেরার পথে ইয়াসিনকে তার নানার বাসায় পাঠিয়ে দুজন মিলে পাসপোর্টের ফটোকপি করতে যান। এরপর বেলা পৌনে ১টার দিকে নুরুল তার শ্বশুরবাড়ি এসে জানান, রেশমাকে তিনি তার ভাড়া করা মেসে আটকে রেখে এসেছেন। পরে স্বজনেরা মেসের দরজা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় রেশমার গলা কাটা লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এ ঘটনায় নিহত রেশমার বোন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো. নুরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরো দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এসময় আত্মগোপনে থাকা নুরুলকে কাকরাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।”
ডিআইজি মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, “রেশমার সঙ্গে ফের সংসার শুরুর দুদিনের মাথায় তার সঙ্গে কাতার প্রবাসী এক যুবকের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ হয় নুরুলের। এছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে নুরুল তার স্ত্রীকে ভাড়া বাসায় নিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। হত্যার পরপরই নুরুল আত্মগোপনের জন্য প্রথমে বরিশাল ও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যান। দুদিন থাকার পর সেখানে নিজেকে নিরাপদ মনে না করায় পুনরায় ঢাকা হয়ে বরিশাল যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।”
গ্রেপ্তার নুরুলকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।