রাজধানীতে পার্কগুলো হচ্ছে শিশুদের খেলার মাঠ ও বিনোদনের জায়গা। সেই পার্কগুলো ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়। সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য, পচা খাবার, পলিথিন ব্যাগসহ নানা বর্জ্যে একাকার হয়ে থাকে। এমনি একটি পার্ক হচ্ছে রাজধানীর মিরপুর-১১-এর জল্লাদখানা এলাকার শিশুপার্ক।
জনবহুল রাজধানী ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। এই জনঘনত্ব অতিমাত্রায় অস্বাভাবিক। এমন গণহারে মানুষ বাড়ায় রাজধানীতে কমে আসছে নাগরিক সুবিধা। রাজধানীর মিরপুর জল্লাদখানার পাশে শিশুদের জন্য পার্ক করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। দৃষ্টিনন্দন এই পার্কের পাশে ডিএনসিসির ময়লার ভাগাড়। মিরপুর-১১ ও জল্লাদখানার আশের পাশের এলাকার বাসা বাড়ির ও ভাসমান রেস্তোরাঁর ময়লা নিয়ে আসেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। যানবাহনের চাকার সঙ্গে লেগে সেই ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূর পর্যন্ত। আর রাস্তার ওপর করপোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়িতে ময়লা তোলা হয়। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকাজুড়ে। দুর্গন্ধ আর দূষণের মধ্য দিয়ে নাক চেপে পার্কে বসে থাকতে হয়। ভোগান্তিতে পড়েন অভিভাবক ও শিশুরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পার্কে এসে কেউ সময় কাটাতে চাইলে নাক চেপে বসা লাগে। একইভাবে এই স্থান দিয়ে পার হচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। আর ভ্যান থেকে ময়লা-আবর্জনা সড়কে নামিয়ে তা ঘেঁটে বিভিন্ন ভাঙাচুরা জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আর ঘাঁটাঘাঁটির কারণেই ময়লার দুর্গন্ধ কয়েকগুণ বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। আবর্জনার পানি গড়িয়ে পড়ছে পার্কের ভেতর ও ঢুকার রাস্তায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কায়ুম হোসেন নিয়মিত পার্কে আসেন। কায়ুম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পার্কে প্রতিদিন বিকেলে এলাকার মানুষ আসেন সময় কাটাতে। কিন্তু পাশে থাকা ময়লার দুর্গন্ধ বাতাস পুরো পার্কে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পার্কে আসা ও বসাই দায়।”
একই এলাকার বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিকেলে হাঁটতে আসেন এই পার্কে। কিন্তু পার্কের পাশে যেখানে ময়লা ফেলা হয়েছে সেখানে নাক চেপে ধরে হাঁটতে হয়। ফলে পার্কে সুস্থ হতে এসে দূষিত বাতাসে অসুস্থ হয়ে যান তিনি।
পার্কের পাশেই এনামুল খন্দকার কবিরের দোকান। এনামুল বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে সিটি কর্পোরেশন থেকে শিশুদের জন্য পার্কটি নির্মাণ করা হয়। পার্কের সঙ্গেই স্থায়ীভাবে ময়লার এসটিএস (বর্জ্য ফেলার স্থান) নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। সেই ময়লার দুর্গন্ধে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন পার্কে ঘুরতে আসা শিশু থেকে যুবক।”
পার্কের পাশে ময়লা রাখার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকে স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, “জল্লাদখানার পাশে এই পরিত্যক্ত জায়গায় আগে নিয়মিত মাদকের আখড়া বসত। এলাকাবাসীর চাওয়ায় আমরা এখানে খালি জায়গায় ছোট পার্কটি নির্মাণ করি। বর্তমানে ময়লার গন্ধে পার্কে যাওয়া শিশুদের সমস্যা হচ্ছে, এটা সত্য। আমাদের পরিকল্পনা আছে দ্রুত বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা হলে ময়লা সরিয়ে নেওয়া হবে।”