ঈদুল ফিতরের ঠিক আগে ও পরে সারাদেশের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে ভোজ্য তেল সয়াবিন তেলের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। সে সময় দোকানে তেল না থাকলেও সারাদেশেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের গুদামে ছিল লাখ লাখ লিটার ভোজ্য তেল। তেলের হঠাৎ এমন সংকটে ঈদের পরে সারাদেশে প্রতিদিনই লাখ লাখ টন অবৈধভাবে মজুদ করা সয়াবিন তেল জব্দ করে ভোক্তা অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঈদের পর থেকে মনিটরিং সংস্থাগুলোর অভিযানে প্রায় ১০ লাখ লিটারের বেশি সয়াবিন ও পাম অয়েল জব্দ করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকারের সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার টন থেকে পাঁচ হাজার টন সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা রয়েছে এবং তা মিল পর্যায় থেকে পূরণও করা হয়। ঈদের সময় যখন বাজারে তেলের সঙ্কট চলছিল, তখনও মিল থেকে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকারের সূত্রে আরও জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরুর পরও ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ৭৮৮ টন সয়াবিন তেল ও ১ হাজার ৬৪১ টন পাম তেল সরবরাহ করেছে সিটি গ্রুপের (তীর ব্র্যান্ড) মিল। এমনকি ঈদের ছুটির সময়ও ৩০ এপ্রিল থেকে ৪ মে— এই পাঁচ দিনে ৯৪৩ টন সয়াবিন ও ৩৯২ টন পাম তেল বিপণন করা হয়েছে। একইভাবে মেঘনা গ্রুপের মিল থেকে ৭ মে তারিখে ২৫৪ টন সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু মিল থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও খুচরা ও পাইকারি বাজারে সাধারণ ক্রেতারা তেল পাইনি।
এদিকে রোজার মাসে তেলের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার তেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে। কিন্তু হঠাৎ করে ঈদের আগে খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় দেশের রান্নার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সয়াবিন তেল। এরপর ব্যবসায়ীকদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করে।
হঠাৎ তেলের এমন কৃত্রিম সংকট দেখা দিলে মাঠে নামে ভোক্তা অধিকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় তারা পাইকারি খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে সারাদেশে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার অবৈধ মুজদে রাখা সয়াবিন তেল জব্দ করে।
গত শুক্রবার (১৩ মে) সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ লিটার জব্দ করা হয়েছে। ১২ মে (বৃহস্পতিবার) ৩ লাখ লিটার জব্দ করে প্রশাসন। ১১ মে (বুধবার) সারাদেশে প্রায় ২ লাখ লিটার তেল জব্দ করা হয়। ১০ মে (মঙ্গলবার) সারাদেশে আড়াই তেল জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বাজারে ভোজ্যতেলের এমন কৃত্রিম সংকটের মাঝেও মুজদে রাখা তেল জব্দে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “দেশে এখন যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, এই অবস্থায় তেলের এমন সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো আগুনে ঘি ঢালার মতো।”
গোলাম রহমান আরও বলেন, “একদিকে বাজারে তেলের সংকট, অন্যদিকে পাইকারি ও খুচরা দোকানিদের গুদামে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল জব্দ করছে প্রশাসন। যে তেল লিটার ১৬০ টাকা বিক্রি করার কথা, এখন ভোক্তাদের জিম্মি করে, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেটা ৪০ টাকা বেশি মুনাফা করবেন। এতে করে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মজুদদারদের পকেটে চলে যাবে।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সারাদেশে তেলের দাম বৃদ্ধির আগে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তেল মজুদ করেছে ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকার সারাদেশে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি টিমের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছে। এসময় অভিযানে অবৈধ মুজদে থাকা প্রতিটি গুদাম থেকে হাজার হাজার লিটার তেল জব্দ হচ্ছে।”
অবৈধ ব্যবসায়ীদের হুশিয়ারি করে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান আরও বলেন, “আমরা মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাব। কারণ তারা সংকটকালে এসব তেল বিক্রি না করে মজুদ করে রেখেছিল। পাশাপাশি তেল মুজদ রাখা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধের চলমান অভিযান আরও কঠোর করা হবে।”