রেলমন্ত্রীর আত্মীয়কে জরিমানা করে বরখাস্ত টিটিই!

পাবনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২, ০৯:৪৯ এএম

টিকিট ছাড়াই পাবনা থেকে এসি কামরায় বসে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিন যাত্রী। টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) এলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দেন তারা। তখন টিটিই বিনা টিকিটে ভ্রমণের জন্য তাদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন। পাশাপাশি এসি কামরাও ছাড়তে হয় তাদের।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতে। আর এ ঘটনার পরপরই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় দায়িত্বরত ওই টিটিই শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার তিনি আর কাজে যোগ দিতে পারেননি।

বরখাস্তের বিষয়টি মোবাইলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পাকশীর ডিসিও নাসির উদ্দিন।

জানা যায়, বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত। ঘটনার রাতে টিটিই শফিকুল ইসলাম ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে কর্তব্যরত ছিলেন। আবার ট্রেনে ডিউটিরত অবস্থায়ই তিনি বরখাস্তের আদেশটি ফোনে জানতে পারেন।

রেলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাগামী আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫ এপ্রিল রাতে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। এ সময় ট্রেনের কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন ট্রেনযাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১০৫০ টাকায় জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট বানিয়ে দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ করার অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।

বরখাস্ত আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরতুল্লাহ আলামিন মুঠোফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, “লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে সুন্দরবন ট্রেনে বিনা টিকিটধারী তিন ট্রেনযাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে তারা রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল ফোনে অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমাকেও অবহিত করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”

ঘটনা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম বলেন, “বরখাস্তের বিষয়টি আমি ট্রেনে ডিউটিরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি। এ কারণে শুক্রবার থেকে ডিউটিতে যাওয়া হয়নি। ঈশ্বরদী থেকে অল্পবয়সী তিন ট্রেনযাত্রী রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি কেবিনে ওঠেন। মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি সম্মান দেখিয়ে এসিও স্যারের পরামর্শে এসির টিকিট না কেটে সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের বানিয়ে দিই। আমি তো তাদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।”