সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। বন্ধু হিসেবে কারও সঙ্গে সখ্য গড়ে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, সিলভার কাপড়ে মোড়ানো ১৮টি বান্ডেল, প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইলফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম এন্থনি ইকুয়েনজে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওজুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডো ও বাংলাদেশি সহযোগী ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনী আক্তার।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, “গ্রেপ্তাররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে এবং বিদেশি মেয়েদের নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেকক্ষেত্রে তার অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে দেবেন কিংবা দামি উপহার পাঠানোর ফাঁদে ফেলেন। উপহার হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করেন ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনী।”
সংবাদ সম্মলনে হাফিজ আক্তার আরো বলেন, “চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশে উপহার পাঠিয়েছে অথবা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিতো।”
প্রতারকচক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু ও চিসম ইমানুয়েল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ দুজনই মূলত বাংলাদেশি সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা গ্রহণ ও প্রতারকচক্রের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। অন্য বিদেশি সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করে থাকেন।”
চক্রটি মূলত তিনটি উপায়ে প্রতারণা করে থাকে উল্লেখ করে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “তারা ভুয়া ডলার বাক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখায়। এই বাক্সে সুইস ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যাংকের সিলযুক্ত ডলার ব্যবহার উপযোগী করার কথা বলে প্রতারণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে সুকৌশলে তারা দু-একটি ডলার ব্যবহার উপযোগী করেছে এরকম ভেলকি দেখায়।”
প্রতারণার পাশাপাশি এই আফ্রিকান নাগরিকরা ভিজিট এবং বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে পরে অবৈধভাবে অবস্থান করে। মাদকদ্রব্যের আন্তর্জাতিক চোরাচালানসহ মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, অন্যান্য অবৈধ দ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে। অপরাধমূলক কাজে পাওয়া অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে নিজের দেশে পাচার করে থাকে। তারা যে সকল এলাকায় বসবাস করে, অনেক ক্ষেত্রে বসবাসের স্থানের পরিবেশ নষ্ট করে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশৃঙ্খল আচরণ করে থাকে। অনেক বাড়িওয়ালা বেশি ভাড়ার আশায় তাদেরকে বাসা ভাড়া দেন। অনেক ক্ষেত্রে এসকল প্রতারক একাধিক মাসের ভাড়া বকেয়া রেখে কৌশলে বাসা পরিবর্তন করে থাকে। এছাড়াও এই প্রতারকরা বিভিন্ন বাংলাদেশি মেয়েদের অল্প সময়ের জন্য বিয়ের কথা বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং পরে তাদেরকে ছেড়ে চলে যায় বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।