রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে বিস্ফোরক আইন ও হামলার অভিযোগ করে দুটি মামলা করেছে পুলিশ এবং অপর হত্যা মামলাটি করেছে নিহত কুরিয়ার কর্মী নাহিদ হাসানের চাচা। তিন মামলায় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে সংবাদ প্রকাশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়ুম।
ওসি কাইয়ুম বলেন, “ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২৪ জন এজাহারনামীয় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী-কর্মচারী অজ্ঞাতনামা প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
ওসি আরও বলেন, “বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা আরেকটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী কর্মচারীদের সংঘর্ষে পুলিশ দুটি মামলা করেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলা নিয়ে পুলিশ কোনো মামলা করেনি কেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “হামলার শিকার হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সংঘর্ষে সাংবাদিক যারা আহত হয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না আসাতে মামলা করা হয়নি। তবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করলে অবশ্যই মামলা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মো. মুরসালিন (২৪) নামে এক দোকান কর্মচারী মারা গেছেন।
এ বিষয়ে স. ম. কাইয়ুম বলেন, “নিহত মুরসালিনের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা তা গ্রহণ করব।”
এর আগে, সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে টানা দুদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে রাজধানীর নিউ মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান খোলার স্বস্তি থাকলেও নতুন করে আবার কোনো উত্তেজনা তৈরি হয় কি না এ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েই গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় দেখা গেছে, ভোরে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত আসার পরই সকালে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলেছেন। অনেকে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের যেমন ভিড় থাকার কথা তেমন জনসমাগম লক্ষ্য করা যায়নি।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তিনদিন দফায় দফায় সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব ও সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত উভয় রাস্তায়ই যান চলাচল করছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাস্তার দুপাশেই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকেই তারা নিরাপত্তা দিতে নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান করছেন।’
তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ পুলিশের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন।