‘অনেক উন্নতি হয়েছে বলে যানজট হচ্ছে’

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২২, ০৫:২৮ পিএম

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে যানবাহন বেড়েছে। ফলে যানজট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আপনারা হতাশ হবেন না, শিগগিরই যানজট নিরসন হবে।”

সোমবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সেবা খাতের রিপোর্টারদের সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট : সমাধান কী?’ সংলাপে তাজুল ইসলাম বলেন, “এই ১৩ বছরে অনেকগুলো উন্নতির কারণেই ট্রাফিক সমস্যাটা আমাদের কাছে একটা মাথাব্যথা হয়ে গেছে। ট্রাফিক সমস্যা নেই, পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা নেই। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, তা মাথায় নিয়ে সমাধানের চিন্তা করতে হবে।”

মন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সাড়ে চার হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ হবে। তখন এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে গাড়িঘোড়া বাড়বে। এটা হলে গ্রামের মানুষও অনেকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়বে। উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে। ফলে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

সংলাপে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ছাড়াও নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, “ঢাকায় অনেক মেগাপ্রজেক্ট করা হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি।”

ড. শামসুল হক আরও বলেন, “সমস্যা সমাধানে গণপরিবহনের ওপর জোর দিতে হবে। ফ্রাঞ্চাইজির আওতায় এসব বাস চালাতে হবে। গণপরিবহনের ওপর জোর দিয়ে যারা সফল হয়েছে, তাদের পথে হাঁটলে আমাদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।”

অনুষ্ঠানে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “রাজধানীর বেইলি রোডে সচিবদের জন্য আবাসন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিব গাড়ি নিয়ে বের হন। তাদের অনেকে এ সময় সড়কের উল্টো দিকে গাড়ি নিয়ে চলেন, এ সময় যানজট তৈরি হয়। ১১৪ জন সচিব, অতিরিক্ত সচিবদের যদি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাস বা মিনিবাসে করে সচিবালয়ে নিয়ে আসা হয়, তাহলে ওই ১১৪টি গাড়ি রাস্তায় বের হবে না। আপনারা কি পারবেন ওই কাজটি করাতে?”

ঢাকায় যানজট সমস্যার সমাধানে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। চাইলে এখনও যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট পরিস্থিতির উন্নতি কীভাবে হয়েছে, সে তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “যানজট নিরসনে কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ শহর যানজটমুক্ত ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। সেখানে এখন যানজট হয় না।”

এ সময় ইলিয়াস কাঞ্চন সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, “কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। ‘অমুক করতে হবে, তমুক করতে হবে, এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত’ বলেই চলেছি। কিন্তু করবেটা কে?”

ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক। এতে ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, যানজট ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. আসাদুর রহমান মোল্লা বক্তব্য দেন।