গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৪৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১২ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৪৬ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ১৪৩ জন এবং শিশু ১৩০টি। এই সময়ে আরও ১২টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং ২৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৫ মার্চ) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশের শীর্ষ সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৫ জন নিহত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৪৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৪৩ জন নিহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪১৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৬৯ জন। এই হিসাবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত দুই মাসে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই ঘটেছে ৩৫৮টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ২১ শতাংশ। এতে নিহত হয়েছেন ৪০৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যু ১ হাজার ১২ জনের ২০২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
জানুয়ারি মাসে ১৮৭ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২১৬ জন নিহত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭১ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৮৭ জন। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাণহানি সামান্য কমলেও এটি কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৮৩২ জন, অর্থাৎ ৮২ দশমিক ২১ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ট্রাক ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালানো এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। পথচারী নিহতের মাত্রাও চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।
সংগঠনটি বলছে, এই প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
দুর্ঘটনা রোধে ১০ দফা সুপারিশ জানিয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।