দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আসছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে গোলাপ গ্রাম খ্যাত সাভারের বিরুলিয়ায় চাষিদের মধ্যে থাকে বেচা বিক্রির ব্যস্ততা। গেল বছর করোনার প্রভার পড়েছিল এই গোলাপ গ্রামে চাষিদের ভাগ্যে। এবার অজানা ভাইরাসে নুয়ে পড়েছে গোলাপের পাপড়ি। এতে দেখা দিয়েছে চাষিদের মধ্যে হতাশা সেই সঙ্গে চাহিদার তুলনায় ফুলের যোগান না থাকায় গোলাপের বাজার এখন চড়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারে প্রায় ২০টি গ্রামে ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ২০০ হেক্টর জমি শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, বাগ্নীবাড়ি, কালিয়াকৈর, সাদুল্লাপুর, আকরাইন, ভবানীপুর, রাজারবাগ, সারুলিয়া গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে গোলাপ ফুলের বাগান।
সাদুল্লাপুরের গোলাপ চাষি ফারুক জানান, গত বছরের করোনার কারণে ফুলের বাজার মন্দা ছিল। এবার ফুলের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু ১৫/২০ দিন আগে হঠাৎ করেই এক অজানা ভাইরাসের কারণে ফুলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কলি থেকেই ফুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার যে ফুল ফুটেছে সেই ফুলের পাপড়ি কালো হয়ে পচে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে শ্যামপুরের ফুল চাষি আমিনুল হক জানান, এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে গোলাপ ফুলের চাষাবাদ করেছিলেন তিনি। সারা বছর বাগানে পরিচর্যায় নিজে ও শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, সার ও ভিটামিন দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এক ভাইরাসে তার বাগান আক্রান্ত। এখন ফুল কালো হয়ে ঝরে যাচ্ছে।
মৈস্তাপাড়ার ফুল চাষি শাহেদ সংসার চালাতেন ফুল চাষ করে। গত বছরে করোনার কারণে ফুলের বাজার মন্দা থাকায় অনেকের মতোই তারও ক্ষতি হয়েছে। এবার বাগানে ফুলের কলি এসেছিল অনেক। ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে লাভের স্বপ্ন ছিলেন শাহেদও। কিন্তু এবার হঠাৎ বাগানে ভাইরাসের কারণে ফুল নষ্ট হওয়ায় তার স্বপ্নেও ভেঙে গেছে।
মৈস্তাপাড়া গোলাপের হাটে ফুল কিনতে আসা খুচরা ফুল বিক্রেতা আলমগীর জানান, এবার ফুলের উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। তাই চাষিরা ফুলের দাম একটু বেশি চাচ্ছে। একশ ফুলের দাম আকার ভেদে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. নূর আলম জানান, গোলাপ গাছ লিফ কার্ল, ইয়েলো লিফ কার্ল ও মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সূক্ষ্ম এক ধরনের সাদা পোকার মাধ্যমে ওই ভাইরাসগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রতিরোধের জন্য চার সপ্তাহ পর পর কীটনাশক সাইফার মেথিন, অর্গানো ফসফরাস ও ছত্রাক নাশক সিসটেমিক টিল্ট বাগানে স্প্রে করতে হবে বলে জানান তিনি।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ জানান, সমস্যাগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। এটা আবহাওয়ার কারণে হতে পারে। সেই সঙ্গে ছত্রাক আক্রান্তের কারণে গাছ মাটি থেকে খাবার নিতে পারছে না। সমস্যা সমাধানের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।