দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চান আলমগীর

আবদুল্লাহ আল মামুন প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০৯:২৭ পিএম

বিজ্ঞাপনটি প্রথমে জেলার দেয়ালে-পিলারে, সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারপর ছড়িয়ে পড়ে মানুষের থেকে মানুষের কাছে। দেখা গেছে, দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর এক মানবিক আকুতি।

বগুড়ার জহুরুল নগর এলাকায় দেয়াল ও পিলারে এই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন স্থানীয় কলেজ-শিক্ষার্থী আলমগীর কবির।

বিজ্ঞাপনটি প্রথমে চোখে পড়ে মহসিন হোসেন নামে একজনের। এরপর সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে কল দেন তিনি। কথা বলেন আলমগীরের সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) মহসিন হোসেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স করা বিজ্ঞাপনদাতার নাম আলমগীর কবির। তিনি ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে মাসে কয়েকবার যাতায়াত করেন। রাতে একটা টিউশনি করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পান। ওই টাকা মূলত খরচ হয়ে যায় ঢাকায় আসা-যাওয়ায়। একটা বাসায় জায়গীর বা লজিং মাস্টার (থাকার বিনিময়ে পড়ানোর শর্ত) হিসেবে আছেন আলমগীর। বাবা পল্লী চিকিৎসক। গত বছর (২০২১) বাবা করোনা আক্রান্ত হলে তাদের হাটের দোকানটা বিক্রি করতে হয়েছে। দরিদ্র বাবা-মা নিজেরাই চলতে পারেন না। তাই আলমগীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কাউকে ১ ঘণ্টা পড়িয়ে একবেলা ভাত খাবেন।”

আক্ষেপের স্বরে মহসিন হোসেন বলেন, “প্রতি বছর ৭৭ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় । অথচ ভাতের জন্য প্রাইভেট পড়াতে চায় বলে পোস্টার দিতে হয় আলমগীরদের।’’

ঘটনা সত্যতা যাচাই করতে সংবাদ প্রকাশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় আলগীর কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা একজন ছাত্র। টিউশনি করিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা পাই। এটা আমার সরকারি বিভিন্ন চাকরি ইন্টারভিউ দিতে ঢাকার যাতায়াতে চলে যায়। বাবা একজন অসুস্থ মানুষ। তিনি পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। আমাদের হাটে একটা দোকান ছিল। এটার ভাড়া দিতে হতো ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর দোকানটি নেওয়ার আগে জামানত দিতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।’’

আলমগীর আরো বলেন, ‘‘গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বাবা। যার কারণে সেই দোকানটিও বিক্রি করতে হয়েছে। আমরা তিন বোন এবং দুই ভাই। বোনদের বিয়ে হয়েছে। আর আমার ছোট ভাইটা প্রতিবন্ধী। আমার তো কিছু করার নেই। তাই পড়ার বিনিময়ে হলেও যেন দু’বেলা ভাত খেতে পারি, সেজন্যই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছি।”