করোনা পরীক্ষা : কাল পজিটিভ, আজ নেগেটিভ

সুব্রত চন্দ প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২, ০৯:৫৮ পিএম

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন ৫৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা সবিতা বিশ্বাস। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখালে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গেই সেই হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য দেন তিনি। আধাঘণ্টা পর রিপোর্ট আসে পজিটিভ।

এদিকে পরিবারের কথা চিন্তা করে পরদিন একই হাসপাতালে ছেলের নমুনা করোনা পরীক্ষা করেন তিনি। কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মনের সন্দেহ থেকে সবিতা দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষা করলে তার রিপোর্টও নেগেটিভ আসে।

একদিনের ব্যবধানে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দুই রকম হওয়ায় অনেকটা সংশয়ের মধ্যে পড়েছে পরিবারটি। কোন রিপোর্টকে সঠিক মনে করবেন ভেবেই কুল পাচ্ছেন না তারা। আগে থেকেই বার্ধক্যজনতি নানা রোগে আক্রান্ত এই বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হবেন কিনা সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না। এদিকে করোনামুক্ত মনে করে সাধারণভাবে চলাফেরা করলে সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

সবিতা বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। থাকেন রাজধানীর মুগদা এলাকার সবুজবাগে ছেলের বাসায়। তার ছেলে রুদ্র বিশ্বাস (২০) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মায়ের এমন করোনা পরীক্ষার দুই রকম রিপোর্টে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি নিজেও।

রুদ্র বিশ্বাস বলেন, ‍“গত কয়দিন ধরে আমার মা জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন। কোনোভাবেই কমছে না। তাই রোববার (২৩ জানুয়ারি) মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা দেখে করোনা পরীক্ষা করতে দেন। পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আমি আর মা একই কক্ষে থাকি। পরে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) আমিও করোনা পরীক্ষা করি। কিন্তু আমার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। একই কক্ষে থাকার পরও আমার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় মনে সন্দেহ জাগে। তাই আবার মায়ের করোনা পরীক্ষা করি। কিন্তু এবার ওনার রিপোর্টও নেগেটিভ আসে।”

একদিনের ব্যবধানে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট কীভাবে পাল্টে গেল প্রশ্ন করে রুদ্র বিশ্বাস বলেন, “আমার মা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি গত ছয় মাস যাবত কিডনিতে সংক্রমণে ভুগছেন। এছাড়া চার মাস আগে ব্রেইন স্ট্রোকও করেছিলেন। আর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছয় বছর আগে। এমন শারীরিক অসুস্থ একজন মানুষের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট যদি সঠিকভাবে না আসে, তাহলে তো চিন্তায় পড়তে হয়। এখন আমরা একদিকে যেমন সংশয়ের মাঝে আছি, তেমনি আতঙ্কিতও। এত বড় একটি হাসপাতালের রিপোর্ট নিয়ে যদি সংশয়ের মধ্যে পড়তে হয় তাহলে রোগীরা যাবে কোথায়?”

দুই রকম করোনা রিপোর্ট আসার বিষয়ে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “যারা এই রিপোর্ট দিয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করেছি। তারা বলে, হয়তো ভালো হয়ে গেছেন, তাই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাদের কথায় বিশ্বাস না হওয়ায় আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তারা দেখা করতে দেননি।”

এই বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “করোনা পরীক্ষা বিভিন্ন রকমের হয়। ওই রোগী কোন পরীক্ষা করেছেন সেটি না দেখে বলা যাবে না, কেন এমন হয়েছে। সাধারণত আর.টি.পি.সি.আর পরীক্ষার রিপোর্ট দুইবার দুইরকম হয় না। আর র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা মাঝে মাঝে দুই রকম হতে পারে।”

এ সময় তিনি ওই রোগীকে রিপোর্ট নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন।