হর্নমুক্ত বাংলাদেশ: সকলের জন্য একার উদ্যোগ

সুব্রত চন্দ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২, ০৬:৪৮ পিএম

চলছে চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো। সাংবাদিক, চলচ্চিত্রের কলাকুশলী, নিমন্ত্রিত অতিথিতে ভর্তি পুরো হল। একটা সময় শেষ হলো ছবিটি। সবার চোখ ছলছল করছে অশ্রুতে।হল থেকে বের হতে গিয়ে, সকলেই মুখোমুখি হচ্ছেন এক ব্যক্তির। দর্শক একটু কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে থাকছেন ওই ব্যক্তির দিকে, আর তার হাতে ধরে থাকা প্ল্যাকার্ডের দিকে, তাতে লেখা: ‘হর্নমুক্ত বাংলাদেশ, আরো সুস্থ বাংলাদেশ’।

এভাবেই হর্নজনিত শব্দ দূষণ রোধে প্রচারণা চালান এ বি এম নাজমুল হুদ। অনেকে তার এই প্রচারণার কৌশল দেখে পাগলামি ভাবতে পারেন। এমনকি অনেকে প্ল্যাকার্ডের লেখার মর্মার্থ বুঝতে না পারায় তাকে এড়িয়েও যান। কিন্তু ইট-কাঠের এই ব্যস্ত নগরীতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা শব্দ দূষণ নিয়ে যখন কারো মাথাব্যাথা নেই, তখন একাই প্ল্যাকার্ড হাতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ বি এম নাজমুল হুদা পেশায় একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন মনপুরা, অন্তর্যাত্রা, গেরিলার মতো চলচ্চিত্রে। সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শুধু সিনেমা হল নয়, ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজে যেখানেই তিনি যান, প্ল্যাকার্ড হাতে শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও খুলেছেন একটি পেইজ ও গ্রুপ। দুটোরই নাম দিয়েছেন ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’।

মূলত রাজধানী ঢাকায় চলাফেরা করতে গিয়ে যানবাহনের অযথা হর্নের শব্দে এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন নাজমুল। লক্ষ্য করেন যে, তার মতো প্রত্যেকেই হর্নের শব্দে বিরক্ত। তখন ভাবতে শুরু করেন কীভাবে এই জনদুর্ভোগ লাঘব করা যায়। যানবাহনের চালকসহ অনেক মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে বুঝতে পারেন, একদিনে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা ও প্রচারণা। তাই নিজের ভাবনাটাকে ছাড়িয়ে দিতে শুরু করেন প্রচারণা।

এ বি এম নাজমুল হুদা বলেন, ‍“রাস্তায় চলাফেরার সময় যানবাহনের হর্ন আমাকে বিরক্ত করত। তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য কী করা যায় ভাবতে থাকলাম। নিজে বিরক্ত হচ্ছিলাম বলে খেয়াল করলাম, আমার মতো সাধারণ মানুষ যারা রাস্তায় চলাফেরা করে তারাও এই হর্নের আওয়াজে বিরক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ চোখ কুচকে বা গাড়ির চালককে বকা দিয়ে সেই বিরক্ত প্রকাশও করছেন। তখন মনে হলো, মানুষকে বোঝাতে পারলে বা সচেতন করতে পারলে এই সমস্যা দূর করা যাবে। তাই বন্ধুরা মিলে আলোচনা করে ২০১৭ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ফেসবুকে একটি পেইজ ও গ্রুপ খুললাম। ধীরে ধীরে তৈরি করলাম এই সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড, লিফলেট। এরপর থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক বন্ধু শুরুতে পাশে থাকলেও মাঝে করোনাকালীন বাস্তবতায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আবার অনেকে পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এখন আর সেভাবে সময় দিতে পারেন না। কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যখন যেখানে যাই সঙ্গে প্ল্যাকার্ড রাখার চেষ্টা করি। মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করি।”

হর্ন আমাদের স্বাস্থের জন্য খুব ক্ষতিকর উল্লেখ করে নাজমুল বলেন, “হর্ন নিয়ে প্রচারণা চালাতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, ১০-১৫ বছর আগেও ঢাকাসহ সারাদেশে কানের চিকিৎসা করে এমন প্রতিষ্ঠান অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন এই ঢাকা শহরেই এমন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে। তার মনে আমাদের শ্রবণ শক্তি সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কয়েকটি ভিডিও তৈরি করেন নাজমুল। সেগুলো সকলের দেখবার জন্য আপলোডও করেন ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’ ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে।

তেমনি একটি ভিডিওতে জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা পৃথিবীর প্রায় ৩৫ কোটি লোক বর্তমানে শ্রুতি হীনতায় ভুগছে। যার অধিকাংশ শব্দ দূষণের কারণে এই সমস্যায় পড়েছে। এই ৩৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বয়স্ক এবং বাকিরা শিশু ও কিশোর। এছাড়া মোট শ্রুতিহীনতার ৩০ শতাংশ সৃষ্টি হয়েছে রাস্তা-ঘাটে যানবাহনের হর্ন থেকে।

প্রায় এক বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গবেষণা চলান এই চিকিৎসক। শব্দ দূষণের ফলে কত মানুষ শ্রুতিহীন হচ্ছেন, সেটিই ছিল এই গবেষণার মূল লক্ষ্য। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো প্রকার শ্রুতিহীনতায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল শব্দ দূষণ।

প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন মুখ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবহন ও শব্দের মতো নানা ক্ষতিকর দূষণ। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের শারীরিক সুস্থতার ওপর। কিন্তু এসব দূষণ যে শুধু নিম্নবিত্ত বা অশিক্ষিতরাই সৃষ্টি করছে তা নয়। বরং শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত মানুষের অসচেতনতা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।

এ বিষয়ে এ বি এম নাজমুল হুদা বলেন, “গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, বেশিরভাগ চালকেরই অযথা হর্ন দেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শুধু কম শিক্ষিত বা নিম্নবিত্তরাই নয়, শিক্ষিত মানুষও অযথা হর্ন বাজান। সামান্য বাসার গেইট খুলতে দারোয়ানকে ডাকার জন্য অনেকে মধ্যরাতে বিকট শব্দে হর্ন বাজান। অথচ একটাবার চিন্তা করেন না, তার এই হর্নের শব্দে আশপাশের মানুষের কতটা ক্ষতি হচ্ছে। হয়তো আজই কোনো নবজাতক হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছে, হয়তো কোনো ছোট বাচ্চা মাত্রই ঘুমিয়েছে, হয়তোবা কোনো হার্ট কিংবা স্ট্রোকের রোগী বা ভয়াবহ মাথা ব্যাথার রোগী মাত্র ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে, হয়তো কেউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব বিবেচনা না করে অসভ্যের মতো হর্ন বাজান অনেকে। অথচ চাইলেই দারোয়ানকে ফোন করে গেইট খোলার ব্যবস্থা করা যায়।”

শব্দ দূষণের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মূলত তিনটি কারণে এটি হয়ে থাকে। এক, উৎপাদনজনিত কারণে সৃষ্ট শব্দ, দুই, নির্মাণজনিত কারণে সৃষ্ট শব্দ এবং তিন, যানবাহনের হর্নজনিত। মানুষের জীবিকার তাগিদে যেহেতু উৎপাদন করতে হবে, সেহেতু উৎপাদনজনিত শব্দ দূষণ সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, কোনো এক স্থানে কোন কিছু নির্মাণ করলে সেটি একটি নির্দিষ্ট সময় পরে শেষ হয়ে যায়। যেহেতু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে, জীবনমানের উন্নয়ন হবে না, তাই এখানেও কিছু করার সুযোগ নেই। কিন্তু যানবাহনের হর্নের কারণে যে শব্দ দূষণ হয়, সেটি চাইলেই অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন এ বি এম নাজমুল হুদা।

এই চলচ্চিত্র নির্মাতা আরো বলেন, “অযথা যানবাহনের হর্ন না বাজালে কারো দুই পয়সারও ক্ষতি নেই। বরং এটি করতে পারলে আমরা নিজেরাই নিজেদেরই সুস্থ রাখতে পারবো। এটা ঠিক যে, আমাদের রাস্তাঘাট পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়নি। ভিন্ন ভিন্ন যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা আলাদা লেন নেই। কিন্তু এটা তো আজ নতুন হয়নি। এটা আমরা ছোট থেকেই দেখে বড় হয়েছি। তো সবাই একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হলে এবং পথ চলতে একটু সচেতন হলে এতটা হর্ন বাজে না। ‍যিনি গাড়ির চালক এবং পথচারী দুইজনেরই সচেতনভাবে পথ চললে এত হর্ন বাজাতে হয় না। যদি কারো খুব জরুরি দরকার থাকে তাহলে হর্ন বাজাতেই পারে। কিন্তু অযথা হর্ন বাজানো মানে নিজেকে মানুষের চেয়ে ইতর প্রাণি হিসেবে প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই না।”

এ বি এম নাজমুল হুদা আক্ষেপ করে আরো বলেন, “অনেকে প্রশ্ন করেন, হর্ন যদি নাই বাজাই, তাহলে সেটি গাড়িতে দেওয়া হয়েছে কেন? হর্ন দেওয়া হয়েছে বাজানোর জন্যই। কিন্তু আপনাকে সেটি বিবেচনা করতে হবে, কোথায়, কখন, কেন হর্ন বাজাবেন। অনেকে আবার বলেন, ‘তাহলে আপনি বলতে পারতেন, অকারণে হর্ন বাজাবেন না’। তখন আমি তাদের বলি, আমি তো কাউকে হর্ন বাজাতে নিষেধ করছি না। আমরা শুধু আমাদের ভাবনাটা ছড়িয়ে দিচ্ছি, ‌‘হর্নমুক্ত বাংলাদেশ, আরো সুস্থ বাংলাদেশ’। এখন আপনি ভেবে দেখেন। যদি মনে হয় যে, এটা যথার্থ, তাহলে আপনিও আপনার জায়গা থেকে চেষ্টা করুন।”

যে উদ্দেশে এই প্রচারণা তা কতটুকু সফল হয়েছে জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “উদ্দেশ্য খুব বেশি সফল হয়নি। এর পিছনে কিছু কারণ আছে। বস্তুগত পরিবর্তন যত দ্রুত হয়, আচরণগত বা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ততটা দ্রুত হয় না। এর জন্য সময় লাগে। আমি হয়তো আমার জীবদ্দশায় শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে কোনো হর্নজনিত শব্দ দূষণবিহিন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারবো না। আইন দেখে যেতে পারবো না। কিন্তু এটি অন্য আর দশজনের মতো আমাকে বিরক্ত করছে, তাই এই বিষয়ে কিছু করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।”

কেন শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, “প্রথমত, আমরা একে অন্যের অধিকার বিষয়ে সচেতন না। কারণ আমরা নিজেরাই নিজের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানি না। এ বিষয়ে আমাদের বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক কেউ শেখায় না। তারা শেখায় কীভাবে পরীক্ষার ফল ভালো করতে হবে, কীভাবে পাশের বেঞ্চের বন্ধু, সহপাঠীকে টেক্কা দিতে হবে। ভালোমন্দ জিনিসটা আমাদের এমনভাবে শেখানো হয় যে, আমরা পক্ষপাতি হয়ে বেড়ে উঠি। আমরা একজন সচেতন মানুষ হিসেবেই বেড়ে উঠছি না। আর এই সচেতনতার অভাবেই শব্দ দূষণের মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে।”

“দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে হর্ন প্রসঙ্গে আইন আছে, কিন্তু সেটির যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে। কারণ আমরা যথেষ্ট সচেতন না। সম্প্রতি আইন হয়েছে, ঢাকা শহরে আবাসিক এলাকায় রাত দশটার পর হর্ন বাজানো নিষেধ। এছাড়া হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো, কেনা, বিপনন, আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ। কিন্তু এগুলো কেউ সেভাবে মেনে চলে না। আইনের প্রয়োগ যদি আরেকটু শব্দ হয়, তাহলে মানুষ মানতে বাধ্য হবে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু দেখা যায়? তৃতীয়ত, আমাদের রাস্তাঘাটগুলো পরিকল্পিত না। কিন্তু সেটা চাইলেও রাতারাতি ঠিক করা সম্ভব না। এটা হতে যেমন সময় লাগবে, তেমনি দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরও এ বিষয়ে চিন্তা করা দরকার। চতুর্থত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রসঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আর জনসচেতনতা বাড়াতে হলে মানুষের কাছে সেই প্রসঙ্গিত তথ্য এবং ভাবনা পৌঁছাতে হবে। যা রাষ্ট্রের পক্ষেই করা সহজ।” যোগ করেন নাজমুল।

এই জায়গায় গণমাধ্যমের অনেক দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “গণমাধ্যম চাইলেই মানুষের মাঝে বিষয়টা ছড়িয়ে দিতে পারে। যেমন- এসিড নিক্ষেপ ও যানবাহনে ধূমপান বন্ধে গণমাধ্যম সোচ্চার হয়েছিল বলেই এর সুফল পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে মানুষ সচেতন হয় খুব ধীরে। কারণ, মানুষ বেশি, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কম কম। সেই কারণে প্রতিযোগিতা বেশি। তাছাড়া আমাদের শিক্ষার হার ও মান ভালো না। যে কারণে মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক সচেতনতায় যাওয়া কঠিন। এই জায়গায় আমাদের ঘাটতি আছে। আর এই কারণে আমাদের অনেক সমস্যা বাড়ছে।”

এ বি এম নাজমুল আরো বলেন, “মূল কথা, রাষ্ট্র ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানসহ সকলের সহযোগিতা লাগবে শব্দ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে। নইলে আমরা প্রতিনিয়ত আরো অসুস্থ হতে থাকবো। দেড়-দুই কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকা যদি বাসযোগ্য না হয়, তাহলে মানুষ থাকবে কী করে? তাহলে কি এখানে মানুষ নেই? আমরা মানুষ হিসেবে কতটা মানবিক, কতটা সচেতন তার উপর নির্ভর করবে আমরা কতটা সুস্থ-সবল জীবন যাপন করবো।”

রাজধানীবাসী হর্নের বিকট শব্দের মধ্যেও কীভাবে ঘুমায় এবং জীবন-যাপন করে সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি গাড়িতে বিনা কারণে হর্ন বাজায়। রাত্রে আমার নিজেরই ঘুম হয় না। তখন আমার মনে হয় আমি পরিবেশমন্ত্রী, আমিই ঘুমাতে পারতেছি না হর্নের শব্দে। তাহলে আমার ঢাকা সিটির মানুষ কীভাবে ঘুমাচ্ছে।”

মন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা অকারণে গাড়িতে হর্ন বাজাই, মাইলের পর মাইল, তাও এমন হর্ন যেটা নিষিদ্ধ, ‘টেইটং টেটাইটং টং’। এ হর্নের কারণে আমি রাত ৩টা-৪টার সময়ও ঘুমাতে পারছি না। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথভাবে দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং বাধ্য করতে হবে। আমরা আইন মানি না। আইন মানতে বাধ্য করা হলেই আমরা আইন মানি।”

শব্দ দূষণ রোধে গত কয়েক বছর প্রচারণা চালানোর পরও তেমন পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু হতাশ হননি নাজমুল। তার মতে, শব্দ দূষণ রোধের প্রয়োজনীয়তা যদি পৃথিবীতে থাকে, তাহলে প্রকৃতি নিজেই এটি ছড়ানোর ব্যবস্থা করবে।