মুজিব বর্ষ-বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২১, ০২:০০ পিএম

বিদায়ী বছরে (২০২১ সাল) ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী। তবে মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সব আয়োজন সীমিত করা হয়। বছর জুড়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বনেতাদের সফর ছিল আলোচনার শীর্ষে।

চলতি বছর সীমিত আকারে হলেও সরকার এই উৎসবটি বিভিন্ন আয়োজনে পালন করেছে সরকার। সেই সঙ্গে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ উদযাপন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তীও।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এ উৎসব উদযাপন করার কথা ছিল। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৯ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর উপহার

মুজিব জন্মশতবর্ষে ৯ লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে সেমিপাকা টিনশেড ঘর। সারা দেশে ৬৪ জেলার ছিন্নমূল ও দুস্থ পরিবারকে এ ধরনের বিশেষ ঘর দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি পরিবারের জন্য সর্বনিম্ন ২ শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও দেওয়া হয়েছে তিন বা পাঁচ শতাংশ জমি। এর মধ্যে দুটি শোয়ার ঘর, একটি বসার ঘর, একটি টয়লেট এবং একটি রান্নার ঘর রয়েছে। ঘরপ্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ হিসেবে গৃহহীনদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ১১৬৮ দশমিক ৭১ কোটি টাকা খরচ করা হয়।

এছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে। 

ডিপিপি অনুযায়ী, বরাদ্দ হওয়ার অর্থের পরিমাণ ৪৮২৬ দশমিক ১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরও ১ লাখ একক গৃহ বরাদ্দ করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে মোট ৯ লাখ পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে। এর প্রথম ধাপে ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ৭৪৩টি ব্যারাকে ৩ হাজার ৭১৫ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। 

সরকারের হিসাবমতে, সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। 

এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমনও পরিবার রয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংখ্যা ২ হাজার ১৭২টি। নির্মিত ব্যারাক সংখ্যা ২২ হাজার ১৬৪টি। ব্যারাকে পুনর্বাসিত ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৮টি। জমি আছে কিন্তু ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই এমন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৪ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য নির্মিত বিশেষ ডিজাইনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ৫৮০টি। ২৩ বছরে পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি। এর আগে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কক্সবাজার জেলার খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত পাঁচতলাবিশিষ্ট ২০টি বহুতল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। খুরুশকুল প্রকল্পটি বিশ্বের একক বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ২৩ জুলাই এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাকি ১১৯টি বহুতল ভবন ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক পৃথক ডিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ এর গিনেস রেকর্ড 

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ শিল্পকর্মটি বানানো হয়। ১০০ বিঘা ধানক্ষেতে পুরো আয়তনজুড়ে এই ক্যানভাস। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ (মঙ্গলবার) বিকেলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইটে এটি যুক্ত করা হয়।

জানা যায়, ড্রোন ব্যবহার করে ম্যাপ করে স্কেচ তৈরির পর টানা দেড় মাস ধরে চলছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। আশপাশের অর্ধশতাধিক কিষান-কিষাণি, ১০০ রোভার স্কাউট সদস্য এই কর্মযজ্ঞে যোগ দেন। যাদের নেতৃত্ব দেন আটজন কৃষি প্রকৌশলী ও কৃষি কর্মকর্তারা। 

এছাড়া এতে কাজ করেছে শস্যে কীটতত্ত্ব-রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যসহ আরও অনেকে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ’। এটি বাস্তবায়ন করেছে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ মিটার প্রস্থের ক্যানভাসে দুই রঙের ধানের চারা লাগানো হয়। এর মধ্যে সবুজ রঙের চারার ধানের নাম ‘জনকরাজ’। সবুজের ভেতরে ভিন্ন রঙ ফুটিয়ে তুলতে চীন থেকে আনা হয় হাইব্রিড জাতের এফ-১ ধান।

জানা গেছে, ক্রপ আর্টে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরির মাধ্যমে গিনেস রেকর্ড গড়ার এই শস্য চিত্রের একটি অন্যতম উদ্দেশ ছিল। ক্রপ ফিল্ড মোজাইক বা শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর এতোবড় প্রতিকৃতি বিশ্বে এটাই প্রথম।

মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীতে শপথ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের প্রথমদিন ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

এ সময় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্ব নেতাদের সফর

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই সঙ্গে মহামারি করোনার কারণে অনেক দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত না হয়ে পাঠিয়েছেন ভিডিও বার্তা।

১৭ থেকে ২৬ মার্চ ১০ দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতারা অংশ নেন। 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে দুদিনের সফরে ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

এ সফরের সময় তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।  

এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিভিশন’ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও কাশিয়ানী উপজেলার মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন। এছাড়াও তিনি সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরও পরিদর্শনে যান।

অন্যদিকে মোদির ঢাকা সফরের প্রাক্কালে ঢাকাস্থ ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের দেয়া অর্ডারের ভিত্তিতে তার সফরসঙ্গীদের জন্য ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাদির তৈরি একশ মুজিব কোট সরবরাহ করা হয়। ৬ বোতাম বিশিষ্ট কালো রংয়ের মুজিব কোট নিচের অংশে দুটি পকেট এবং উপরে বাম পাশে বুকে একটি পকেট থাকবে। উন্নতমানের খাদি কাপড় দিয়ে এই মুজিব কোটগুলো তৈরি করা হয়।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সফর 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার (১৯ মার্চ) ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।

এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। রাজাপাকসেকে স্বাগত জানিয়ে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। 

ঢাকায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যোগ দিতে বুধবার (১৭ মার্চ) ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

ঢাকায় নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২২ মার্চ (সোমবার) ঢাকায় আসেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে নেপালের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান।

এ সময় ২১ বার তোপধ্বনির পর, বিমানবন্দরে নেপালের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

এটিই বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রপতি পর্যায়ের প্রথম সফর। বিদ্যা দেবী ভান্ডারি ২২ ও ২৩ মার্চ দুইদিন ঢাকায় অবস্থান করবেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফর

তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৩ মার্চ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসাবে ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।