নিরাপদ সড়কসহ ১১ দফা দাবিতে গত ছয় দিন ধরে রাজধানীর রামপুরায় আন্দোলন করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই ভিন্নধর্মী কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (৫ ডিসেম্বর) সড়ক অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সড়কে চলমান অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে এর প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো :
১। সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
২। সারাদেশে সকল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস ভাড়া সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন অথবা শর্ত দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সকল রুটে বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩। গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪। ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫। সকল রাস্তায় ট্রাফিক লাইট ও জেব্রাক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬। বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সকল পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০। ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
১১। মাদকাসক্তি নিরসনে সমাজজুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি এক দিনের ব্যবধানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় এক শিক্ষার্থী ও এক সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কসহ ১১ দফা দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ। সবশেষ সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে রামপুরায় যাত্রীবাহী বাস চাপায় স্থানীয় একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরো জোরালো হয়।