নগদ টাকার সংকট মেটাতে বাজার থেকে এক মাসের জন্য টাকা উত্তোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ সিদ্ধান্ত বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে গত মাসে তুলে নিয়েছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আর সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে তুলে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলেই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়েছে। অনেক ব্যাংকই এখন এ সঙ্কট মেটাতে দ্বারস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সবমিলেই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে গত প্রায় দুই বছর বিনিয়োগ চাহিদা কমে যায়। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে অনেক শ্রমিক ফিরে আসায় বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স জমা হয়। বিনিয়োগ চাহিদা কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহারও কমে যায়। এতে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত ডলার ছিল। বাজারে ডলার চাহিদা কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে নেয়। বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়া হয়।
অপরদিকে প্রণোদনা কর্মসূচির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকার সরবরাহ করা হয়। এ কারণে একদিকে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। এতে কমে যায় আমানত প্রবাহ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরে এসে তা হয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে পণ্য আমদানি বেড়ে যায়। বিশেষ করে বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। আর গত সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৭ শতাংশ।
আর জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। যা আগের বছরে ছিল ঋণাত্মক প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। বিপরীতে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকায় বাজারে ডলারের সংকট বেড়ে যায়। এ সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে থাকে। এভাবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ১.৮ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এতে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
অপর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়। গত মাসের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল করা হবে।