গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো কবি রফিক আজাদের বাড়ির একাংশ, কারা করছে এ কাজ

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
ঘটনাস্থল। ছবি : সংগৃহীত

প্রয়াত কবি রফিক আজাদের ধানমন্ডির বাড়ির একাংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ৪ ইউনিটের বাড়িটির একটিতে থাকছেন কবির স্ত্রী দিলারা হাফিজ। বাকি ৩ ইউনিট অন্যদের নামে বরাদ্দ রয়েছে। বুধবার বাড়িটির পূর্বাংশের দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কের ১৩৯/৪এ ঠিকানার বাড়িটিতে (পশ্চিমাংশ) কমবেশি ৫ কাঠা পরিমাণ জায়গা রয়েছে। ১৯৮৮ সালে একতলা এ বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় ‘এস্টেট অফিস’। দিলারা হাফিজ তখন ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বরাদ্দ কপিতে দেখা যায়, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক এম বেগমের স্বাক্ষর করা এ বরাদ্দনামায় উল্লেখ করা হয়, এই বরাদ্দের দ্বারা বাসার ওপর কোনো অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।

দীর্ঘদিন পর বাড়িটি নিজের বলে দাবি করেন সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে নিজের মালিকানার পক্ষে আদালতের রায় পান তিনি। এ নিয়ে সৈয়দ নেহাল, হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে মামলা করেন দিলারা হাফিজ। এর ফলে আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেন। পরের বছর এই স্থিতাবস্থা স্থায়ী করেন আদালত।

পরবর্তীতে মামলাটি ঢাকার সপ্তম সহকারী জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। আগামী মে মাসের ২৫ তারিখ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। এইসব তথ্য উল্লেখ করে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পৃথক চিঠি দেন দিলারা হাফিজ। এর মাঝেই বুধবার সকালে বাড়িটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়।

দিলারা হাফিজ শিক্ষা ক্যাডারের একজন প্রভাষক হিসেবে বাড়িটির বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সরকারি তিতুমীর কলেজে ৪ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। তার স্বামী রফিক আজাদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তাদের দুই সন্তান অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ প্রবাসে রয়েছেন।

এ বিষয়ে দিলারা হাফিজ গণমাধ্যমকে জানান, জাতীয় জীবনে একজন অগ্রগণ্য কবি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ। তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও ধারণের জন্যে বাড়িটির অংশবিশেষের স্থায়ী বন্দোবস্তের আদেশ পেতে মঙ্গলবারও তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঘুরেছেন। মামলা চলমান থাকাবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আশা করেননি তিনি।

অভিযোগ করে দিলারা হাফিজ বলেন, “বাড়িটি ‘দখল করে হাউজিং তৈরির’ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, বাড়ি ভাঙার বিষয়ে তারা ‘কিছুই জানে না’।”

এর আগে গত ১১ এপ্রিল বাড়িটি রফিক আজাদের নামে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টাকে চিঠি লিখেছেন দিলারা হাফিজ।

চিঠিতে দিলারা হাফিস বলেন, “১৯৮৮ সাল থেকে আমি দিলারা হাফিজ, শিক্ষা ক্যাডারের একজন প্রভাষক হিসেবে বরাদ্দপ্রাপ্ত উপর্যুক্ত এই বাড়িতে বসবাস করছি। চাকরিজীবনের শেষভাগে সরকারি তিতুমীর কলেজে ৪ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার একজন চেয়ারম্যান হিসেবে চাকুরি-জীবন থেকে অবসরে যাই।”

২০১২ সালে নেহাল নামে এক ব্যক্তি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বাড়িটির পক্ষে তার নিজের মালিকানার রায় পেলে সরকারের পক্ষভুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে জজকোর্টে একটি মামলা রজু করা হয় বলে জানিয়েছেন দিলারা হাফিজ। তিনি বলেন, “এই মামলা পরিচালনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করি নিজস্ব তহবিল থেকে। পরবর্তী সময়ে মামলায় কথিত নেহাল সাহেব হেরে গেলে বাড়িটি সরকারের মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।”

[113722]

এদিকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ওই বাড়িটি ‘গণপূর্ত অধিদপ্তর ভাঙছে না’। তিনি বলেন, “গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বাড়িটি ভাঙলে আমি জানতাম। আমার কাছে এ ধরনের কোনো খবর নেই। তার মানে সরকারি প্রতিষ্ঠান ওই বাড়িটি ভাঙছে না।”
তথ্য : সমকাল ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।