শীতের সবজির দাম গত মৌসুমের চেয়ে এবার তিনগুণ

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
বাজারে শীতের সবজি। ছবি: সংগৃহীত

শীতের সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিমের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। সারা বছর ধরে অধীর অপেক্ষা থাকে শীত মৌসুমের টাটকা আর তরতাজা এসব সবজির জন্য। এবারও শীত পড়তেই বাজার ভরে উঠছে মৌসুমের সবজিতে। তবে সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামের কারণে শীতের লোভনীয় শাক-সবজি কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেক ক্রেতা।

গেল বছরের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর বাজারে শীতের জনপ্রিয় সবজি শিম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। সেই শিম চলতি বছরের ২২ নভেম্বর বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। গেল বছরের চেয়ে শিমের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে তিনগুণ। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না।

একইভাবে ফুলকপি আর বাঁধাকপির দামও গেল মৌসুমের চেয়ে বেড়েছে দ্বিগুণ। গেল বছরের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর বাজারে প্রতি পিস ফুলকপির দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সেই ফুলকপি শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ৪০ থেকে ৭০ টাকা পিস দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

একইভাবে গেল বছরে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকার বাজারে যে বাঁধাকপি প্রতিপিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনেছেন ক্রেতারা, ঠিক একবছর পর শুক্রবার (২২ নভেম্বর) তা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, আগের বছরে বড় আর ভালোমনের বাধাকপি বাজারে পাওয়া গেলেও এবার সেই মানের পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ দাম ছাড়ছেন না বিক্রিতারা।

শীত মৌসুমের সবজি হিসেবে সবচেয়ে সস্তায় মেলে মুলা। তবে এবার বাজারে মুলার দামও চড়া। ভালোমনের মুলাও মিলছে না। গেল বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তায় ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। সেই মূলাই এ বছর নভেম্বরের শেষে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এক বছরে মুলার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

এছাড়াও গেল বছরের চেয়ে এবার ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের অন্যসব সবজি। গেল বছরের ২৪ নভেম্বর রাজধানীতে আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজিতে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে।

এছাড়া গেল বছরের ২৪ নভেম্বর বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। সেই বেগুন এবার নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। গেল বছরে যে করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এবার সেই করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।

গেল শীত মৌসুমের চেয়ে এবারের শীত মৌসুমে ঠিক একই সময়ে সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, গাজর, শসা, উচ্ছে, পেঁপে, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, পটল, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, লাউ, মিষ্টি ও চালকুমড়া, কাঁচা কলা।

ভরা মৌসুমেও আলুর দাম না কমার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ক্রেতা আল মামুন। বললেন, “আলুর দামের লাগাম সরকারের শক্তভাবে টেনে ধরা উচিত। ভরা মৌসুমেও যদি এভাবে দাম না কমে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই কঠিন হবে।’

এ ব্যাপারে আলু বিক্রেতা ফরহাদ বললেন, “নতুন আলুর সরবরাহ কম। তাছাড়া জমিতে লাগানোর জন্য অনেকেই বাজার থেকে আলু বীজ হিসেবে কিনছেন। যে কারণে দাম বেড়েছে।”

শীতের সবজির চড়া দাম নিয়ে দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা আসাদুজ্জামান বললেন, “এখন তো শীতকালীন সব সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে দেখছি কোনো সবজির দামই কমেনি। বরং অনেকগুলোর দাম অনেক বেশি। এমন হলে তো শীতের সবজিও আর পাতে উঠবে না।”

সবজির দাম বাড়া নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি। তবে কেন সরবরাহ ঘাটতে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারছেন না তারা। বিক্রেতা আলা উদ্দিন বললেন, “শীতের সবজির দাম বাড়বে, কমবে সেটাই নিয়ম। শীতের সবজি গেল বছরের মতো এখনও আসতে শুরু করেনি। সে কারণে দাম বেশি। আর যেসব সবজির সিজন শেষ সেগুলোর দাম বেড়েছে।”

উত্তরের চাষিরা বলছেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার সবজির ফলন কমেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কমেছে।” তবে তারা মনে করছেন ডিসেম্বর মাসে সবজির সরবরাহ আরও খানিকটা বাড়বে।