খুলনা বিভাগীয় শহর এবং এর আশপাশের উপজেলায় সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব অনেকটা কাটলেও দুপুরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, “ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করছে। খুলনা অঞ্চলে দানার প্রভাব অনেকটা কেটেছে। তবে দুপুরে দানার প্রভাবের শেষ ধাক্কা হিসেবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।”
খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরব, রূপসা ও কাজী বাছার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক।
তবে দানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের উপজেলায় মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
[102298]
দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগমনী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশিত কুমার মণ্ডল বলেন, “আইলা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এর পর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের পরান কাঁপে।”
নিশিত কুমার মণ্ডল আরও বলেন, “গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুতারখালী নদী। নদীর ভাঙনে আমাদের গ্রামের তেলিখালী এলাকায় ওয়াপদা রাস্তা প্রায় বিলীন হতে চলেছে। যেকোনো জলোচ্ছ্বাসে একেবারে ভেঙে যাবে এ রাস্তা। তাই ঝড়ের কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবু এখন যে উঁচু জোয়ার হচ্ছে, তাতে ভয় আমাদের কাটেনি। এলাকার একমাত্র আমন ফসল ঘরে তুলতে পারব কি না, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।”
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য খুলনার ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অনেকটা কমে এলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবার কয়েক দফায় বৃষ্টি ঝরে। আজ সকাল থেকে রোদ ওঠায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
[102292]
শুক্রবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, এটিই শেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে উত্তর ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করেছে।
এটি বর্তমানে উত্তর ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও পশ্চিম–উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কলকাতায় তেমনভাবে পড়েনি। বলা হয়েছিল, এর প্রভাবে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। তবে তেমন কিছু দেখা যায়নি।
রাতের দিকে ঝোড়ো হাওয়ার বেগ কিছুটা বেড়েছিল। বৃষ্টিও তুলনামূলক কম হয়েছে কলকাতায়। রাতে দানার আঘাত শুরু হওয়ার পরও কলকাতায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি ছাড়া তেমন কিছু দেখা যায়নি।
শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি রয়েছে। দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চলতে পারে।