সরকার অনুমোদিত ২ হাজার ৪২০ টনের বিপরীতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ দিনে ভারতে গেছে সর্বমোট ৫৩২ টন ইলিশ। ভারতে ইলিশ রপ্তানির শেষ দিন শনিবার (১২ অক্টোবর) ৩৬ টন ইলিশ পাঠানো হয়েছে।
দেশে ইলিশ সংকট আর দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ এবার রপ্তানি করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে রপ্তানির জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
এদিকে শনিবার মধ্যরাত থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরা, মজুত বা সংরক্ষণ এবং বিপণন সবই নিষিদ্ধ।
এ বছর ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ গড়ে ১০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হয়েছে, যা দেশের ১ হাজার ১৮০ টাকার মতো। দেশের বাজারে অবশ্য আরও অনেক বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের ৪৯ রপ্তানিকারককে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। ওই দিন থেকেই ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়। শনিবার (১২ অক্টোবর) ছিল শেষ দিন।
আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় থাকলেও উৎপাদন সংকটের কথা বলে ২০১২ সালে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজার সময় ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়।
জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যে ভারতের ব্যবসায়ীরা দুর্গাপূজা ইলিশ চেয়ে অনুরোধ পাঠান। তবে প্রথমে ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে পরে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি’ হবে বলে জানিয়ে দেন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তে অনড় থাকেনি সরকার। দেড় মাসের মাথায় ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।
গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ টন। রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৬৩ টন। এ বছর ভারতে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে অনুমোদিত পরিমাণের ইলিশ পাঠাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রপ্তানি হয়। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়। সে হিসাবে ৫ বছরে মাত্র ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হয় ভারতে।
ইলিশ রপ্তানিকারক বেনাপোলের সততা ফিশের রেজাউল করিম জানান, দেশে ইলিশ সংকট আর বেশি দামের কারণে চাহিদা মতো রপ্তানি করা যায়নি। সময় বাড়ালে হয়তো আরও কিছু রপ্তানি সম্ভব।
বেনাপোল স্থলবন্দর মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, পূজার ছুটির মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি চালু ছিল। আজ শেষ দিনে ৩৬ টনের মতো ইলিশ ভারতে রপ্তানি হতে পারে। আজ ইলিশ রপ্তানির শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৫৩২ টন ইলিশ গেছে ভারতে।