রোকে দালতোনের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
কবি রোকে দালতোন

লাতিন আমেরিকার ছোট দেশ এল সালবাদোরের বড় কবি, বিপ্লবী রোকে দালতোনের জন্ম ১৪ই মে, ১৯৩৫ সালে। পড়াশোনা আইনশাস্ত্রে, স্বদেশে এবং অপর দুই প্রতিবেশী দেশ চিলে ও মেহিকোতে; যদিও একপর্যায়ে বামপন্থী, বিপ্লবী রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসাবে বেছে নেন। পাশাপাশি কবিতা, কথাসাহিত্য, সাহিত্য ও রাজনীতিবিষয়ক প্রবন্ধাদি লিখেছেন দুহাতে। দ্বীপদেশ কুবায় নির্বাসিতের জীবন কাটিয়েছেন ও ইউরোপের প্রাহা নগরীতে চর্চা করেছেন সাংবাদিকতার। স্বদেশে জেল খেটেছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন এবং সশস্ত্র বিপ্লব করতে গিয়ে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে আততায়ীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ১০ই মে তারিখে।

 

তার আগে অবশ্য গোটা পনেরো কাব্যগ্রন্থ এবং কিছু নাটক, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, জীবনীসাহিত্যও প্রবন্ধসংকলন রচনা করে গেছেন। রোকে দালতোন রীতিমতো অস্ত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষিত, একজন সম্মুখসারির যোদ্ধাবিপ্লবী হলেও তাঁর কবিতায় ছিল প্রকৃত সাহিত্য ও শিল্পের নিদর্শন। তিনি এমনকি তাঁর কবিতায় পরাবাস্তবতার চর্চা করতেও পিছপা হননি। তাঁর গদ্যও ছিল অত্যন্ত প্রসাদগুণসম্পন্ন, ব্যাঙ্গাত্মক ও বুদ্ধিদীপ্ত। ১৯৬৯ সালে তিনি Taberna y otros lugares (Taberna and Other Places) কাব্যগ্রন্থের জন্য কুবার অত্যন্ত মর্যাদাবান কাসা দে লাস আমেরিকাস সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। 

 

নিচের তিনটি কবিতা অনুবাদ করেছেন আলম খোরশেদ।

 ---

 

তোমার মতো

 

তোমার মতো আমিও

ভালোবাসি ভালোবাসা, জীবন,

বস্তুর মিষ্টি ঘ্রাণ,

জানুয়ারির নীলাভ নিসর্গ।

আমার রক্তও টগবগ করে

এবং আমিও সেই চোখেই হাসি

যারা জেনেছে অশ্রুর উদ্গম।

অমি বিশ্বাস করি পৃথিবী সুন্দর

এবং কবিতা, রুটির মতোই, সবারই প্রয়োজন।

এবং জানি আমার রক্ত আমার মধ্যেই ফুরিয়ে যায় না,

বহমান সেইসব যোদ্ধার অনামা শিরায়

যারা লড়াই করছে জীবন,

ভালোবাসা,

ছোটখাটো বস্তুসমুদয়,

এবং সবার জীবনের কবিতা,

সেই নিসর্গ ও রুটির জন্য।

 

---

 

তিন নম্বর প্রেমের কবিতা

 

যারা তোমাকে বলে আমাদের প্রেম অনন্যসাধারণ

কেননা তা অনন্যসাধারণ পরিস্থিতির ফসল,

তাদের বোলো আমরা যুদ্ধ করছি, যেন

আমাদের এই প্রেম

(রণাঙ্গনের সৈনিকদের মধ্যে ভালোবাসা)

হয়ে উঠতে পারে

খুবই সাধারণ এবং চির চলমান,

প্রায় তুলনাবিহীন,

এল সালবাদোরের এই ভালোবাসা।

 

---

 

নব বিদ্যালয়

 

প্রাচীন গ্রিসে

অ্যারিস্টোটল তাঁর শিষ্যদের পড়াতেন

একটা বিশাল উঠানে পায়চারি করতে করতে।

 

এজন্য তাঁর বিদ্যালয়কে বলা হতো ‘ভ্রাম্যমাণ’ ইশকুল।

 

যুদ্ধরত কবিরা

অ্যারিস্টোটলের পথিক পড়ুয়াদের চেয়েও অধিক ভ্রাম্যমাণ

কেননা আমরা

স্বদেশের পর্বত ও নগরসমূহের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে যেতেই

জনসাধারণের কবিতা ও দর্শনকে আত্মস্থ করে নিই।