দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তার ‘অবনী বাড়ি আছো’ কবিতাটি এখনও সবার মুখে মুখে। তিনি পঞ্চাশ দশকের শক্তিমান কবি। কবি হিসেবে তিনি খ্যাতিমান হলেও একাধারে কবি ও কথাসাহিত্যিক। গদ্য সাহিত্যেও তার অবস্থান মজবুত। লেখালেখির জগতে তার প্রবেশ গদ্য দিয়ে। সাহিত্য জগতে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন ‘কুয়োতলা’ নামের উপন্যাস দিয়ে। তবে কবিতাকে ভালোবেসে তিনি নাম দিয়েছেন ‘পদ্য’। বেশকিছু কালজয়ী কবিতা উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’। কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজি এবং মৈথিলী ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। ১৯৮৩ সালে এ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত ছেঁড়া তমসুখ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘যম’ কবিতা সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি কৃত্তিবাস এবং অন্যান্য পত্রিকার জন্য লিখতে শুরু করেন। বুদ্ধদেব বসু তাকে নবপ্রতিষ্ঠিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য কোর্সে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি কোর্সে যোগদান করলেও সম্পন্ন করেননি।
কবি হিসেবে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার শক্তি কোথায়? এটি খুবই সহজ প্রশ্ন। কারণ তার শক্তিমত্তা সম্পর্কে সমালোচকরা যথার্থই বলে গেছেন। ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় জীবনের জয়গান’ প্রবন্ধে সাগর জামান বলেছেন, “শক্তির কবিতার বক্তব্য স্বতন্ত্রধর্মী। সমুদ্র, আকাশ, নদী, বৃক্ষ, নক্ষত্র, বৃষ্টি, জঙ্গল, মহুয়া, ফুল, বীজ, টিলা, জ্যোৎস্না, ঝিঝি, রাত্রি, অন্ধকার, পাহাড়, পাথর, জীবন-মৃত্যু, জীবনের স্বপ্ন আশা, ভালোবাসা ক্লেশ তার কবিতার বিষয় হয়েছে। তার কবিতায় দৃশ্যমান সবকিছুর পাশাপাশি জীবনের সুখ-দুঃখের অনুভূতি উঠে এসেছে। তার কবিতায় নিজস্ব জীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। তার আলাদা পদ্যরীতি বক্তব্য প্রকাশের শক্তিময় ভাষা কবিতাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে তার সুষমামণ্ডিত কবিতা দীপ্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। কালের প্রবাহে তার কবিতা আড়ালে চলে যায়নি। বরং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এ কথা খুব শক্তভাবে বলা যায়। তার কবিতা নতুন লেখক ও পাঠকদের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে। তার মৃত্যুর এত দিন পরেও কবি পরিচয় ম্লান হয়নি একটুও। তার অবস্থান ক্ষুণ্ণ হয়নি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় নামের আড়ালে তিনি ‘স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার’ ও ‘রূপচাঁদপক্ষী’ ছদ্মনামে অসংখ্য রচনা সৃষ্টি করেছেন।” (যায়যায়দিন, ১২ নভেম্বর ২০২১)
তার কবিতায় মৃত্যুভাবনা, অভিমান, হাহাকার, অন্তর্গত যন্ত্রণা, দার্শনিক চেতনা, অস্তিত্ব চেতনা, লাবণ্য, মায়া-মমতা, জীবন আকর্ষণ, আনন্দ-বেদনার প্রতিধ্বনি ফুটে উঠেছে। তার কবিতার বিষয় বৈচিত্র্য, শিল্পরূপ ও বহুমাত্রিকতা পাঠককে মুগ্ধ করেছে। তিনি ভিন্নধারার নিজস্ব এক কাব্যভাষা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবনানন্দ উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে ‘হাংরি আন্দোলনের জনক’ মনে করা হয়; তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।
জয় গোস্বামী তার ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: অবচেতনের উদ্ধার’ প্রবন্ধে বলেছেন, “অবচেতনের উদ্ধার কাকে বলে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম যুগের কবিতায় আছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’, ‘ধর্মে আছ জিরাফেও আছ’, ‘সোনার মাছি খুন করেছি’, ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি তুমি, অন্ধকারে’, ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’—এইসব কাব্যগ্রন্থ ষাটের দশকে একের পর এক প্রকাশিত হয়ে চলেছিল—সত্তর সালে প্রকাশিত হয় শক্তির ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ নামক একশোটি সনেটের সংগ্রহ, সেইসব সনেটও লেখা হয়েছিল ষাটের দশকে। অর্থাৎ ষাটের দশকে লিখিত শক্তির অজস্র কবিতার মধ্যে লক্ষ করা যাবে ‘অবচেতনের উদ্ধার’, এই কথাটি কী ধরনের কাব্যের উদ্ভাসন আমাদের সামনে নিয়ে আসছে।” (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১)
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে পাঠ নিলে তার কবিতার শক্তি সম্পর্কে হয়তো সম্যক ধারণা তৈরি হবে। কিছু কবিতার পঙক্তি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি—
১.
‘‘…পচা ধানের গন্ধ, শ্যাওলার গন্ধ, ডুবোজলে তেচোকো মাছের আঁশগন্ধ সব আমার অন্ধকার অনুভবের ঘরে সারি-সারি তোর ভাঁড়ারের নুন-মশলার পাত্র হল, মা। আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না, তখন তোর জরায় ভর করে এ আমায় কোথায় নিয়ে এলি। আমি কখনও অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না।
কোমল বাতাস এলে ভাবি, কাছেই সমুদ্র। তুই তোর জরার হাতে কঠিন বাঁধন দিস। অর্থ হয়, আমার যা-কিছু আছে তার অন্ধকার নিয়ে নাইতে নামলে সমুদ্র সরে যাবে শীতল সরে যাবে মৃত্যু সরে যাবে।
তবে হয়তো মৃত্যু প্রসব করেছিস জীবনের ভুলে। অন্ধকার আছি, অন্ধকার থাকব, বা অন্ধকার হব।
আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।।
(জরাসন্ধ)
২.
অন্ধকারে বেজে ওঠে—‘যাই’
চেয়ে দেখি, কেহ কোথা নাই
দেওদার-সড়কে
এ-নিশুতি রাতে গাড়ি ঢোকে
শুকতারা পুবে
আমারই অস্তিত্ব যেন আছে মেঘে ডুবে
গাড়ি থেকে তার
লুণ্ঠন সমাপ্ত হলে রক্তমাখা হাড়
এসে পড়ে
বহুদিন ছিলাম না ঘরে
দুয়ার জানালা খোলা নাই
তুমি এসেছিলে—চিহ্ন পাই
প্রিয়, পথ জুড়ে
অন্ধকারে বেজে ওঠে—‘যাই’
চেয়ে দেখি, কেহ কোথা নাই
তৃণে ও অঙ্কুরে
(অন্ধকারে)
৩.
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে—
‘অবনী বাড়ি আছো?’
(অবনী বাড়ি আছো)
৪.
আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
(অবনী বাড়ি আছো)
৫.
মন্দিরে ঐ নীল চূড়াটির অল্প নিচে তিনি থাকেন
একমুঠি আতপের জন্যে ভিক্ষাপাত্র বাড়িয়ে রাখেন
দিন ভিখারী
(মন্দিরে ঐ নীলচূড়া)
৬.
এই বাংলাদেশে ওড়ে রক্তমাখা নিউজপেপার
বসন্তের দিনে
বসন্তের দিনে করে বসবাস নেপথ্য ও স্টেজ
হিন্দু ও অহিন্দু করে কোলাকুলি, হত্যা, মুষ্ঠ্যাঘাত!
(এই বাংলাদেশে ওড়ে রক্তমাখা নিউজপেপার বসন্তের দিনে)
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি শক্তিমান কবিতা ‘অবনী বাড়ি আছো’। কবিতাটি এক বর্ষামুখর রাতের কবিতা, যেখানে কবি নিজেকেই অবনী চরিত্রে প্রকাশ করেছেন। তবে এ কবিতা রচনা প্রসঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, নির্জন বাড়িতে মহুয়ার বোতলকে সঙ্গী করে কবি যখন সামনে মেঘদূত মালাকে দেখলেন, তখন তার মনে হলো অসংখ্য গরু যেন যাত্রা করেছে। মেঘেরা গাভীর মতো চড়ে বেড়াচ্ছে। অবনী দুয়ার এঁটে ঘুমিয়েছে, কে বা কারা যেন তার দরজার কড়া নাড়ছে। কে যেন তাকে ডাকছে আয় আয়। অবনী যেতে চায়নি। অবনী বলছে তুমি আমায় ডাকছো আমি চলে যেতে পারি। কিন্তু কেন যাবো? আমার তো একটা ছোট শিশুসন্তান আছে, ওর মুখ ধরে চুমু খাবো। এই যে পারিবারিক মায়া-মমতা কবিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চাইছে। পরক্ষণেই হয়তো কবি আবার বুঝতে পারলেন, সে ইচ্ছা করলেই থাকতে পারবেন না। চলে তার যেতে হবে। কোনো মমতার বন্ধন সন্তানের লাবণ্যময় মুখ তাকে আঁকড়ে রাখতে পারবেন না। এসব ভেবে কবি আবার বললেন, আমি যাবো কিন্তু এখনি যাবো না। ২০১৭ সালের আগস্টে কবিতাটি অবলম্বনে একই নামে একটি গান প্রকাশিত হয়। যা এখন সংগীতপ্রেমীদের মুখে মুখে।
তাই তো সমীর সেনগুপ্ত বলেছেন, “মহুয়াসিক্ত দ্বিপ্রহরে যেদিন ‘অবনী বাড়ি আছ’ আর ‘আমি স্বেচ্ছাচারী’ লিখে প্রথম শ্রোতা আমাকে পড়ে শুনিয়েছিল (শক্তি)—সেদিন সেইসঙ্গে আরও তিন চারটি সদ্য রচিত কবিতা শুনেছিলাম ওর মুখে। ঘরের মধ্যে আমি আর শক্তি, বাইরে জ্বলন্ত দ্বিপ্রহর। লেখা শেষ করে একহাতে গেলাসে মহুয়া পাশের সাঁওতাল গ্রাম চিত্রাপাথর থেকে সংগ্রহ করে আনা, অন্য হাতে সদ্যরচিত পাণ্ডুলিপি, উন্মত্ত দরবেশের মতোই লুঙ্গি পরা খালি গায়ে শক্তি পদদাপ করে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঈষৎ স্খলিত উচ্চকণ্ঠে সেই টাটকা কবিতা পড়তে পড়তে। পূর্ব পূর্ব জন্মের বহু সুকৃতির পুণ্য সঞ্চিত থাকলে তবে এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়া যায়—সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ঈশ্বরের এমন একজন ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বীর।” (অগ্রন্থিত পদ্যগদ্য)
এছাড়া অবিস্মরণীয় রহস্যময়তাও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান একটি শক্তি। তার ‘প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই’ গ্রন্থের দুটি লাইন পড়লে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে:
‘‘বনের মধ্যে কে যায়?
মনের মধ্যে দৃষ্টি আমার বর্ষাতিটা ভেজায়
কে যায় এবং কে কে?
এক ভাঙা ইট থাকল পড়ে হায় রে আমার থেকে।’’
এমন রহস্যময়তা তার অসংখ্য কবিতায় খুঁজে পাওয়া যাবে। যা পাঠককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তার কবিত্বশক্তিকে আরও বেশি প্রোজ্জ্বল করে তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে ‘কবিতায় খোঁজা সময়ের মুখ’ প্রবন্ধে সুমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার ভিতর, তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যকৃতির পাতায় পাতায় এই অপরিসীম পরিশ্রমের ইতিহাস লুকানো আছে। বাইরে যার অনর্গল চেহারায় ভুলে থাকছেন পাঠক। তাঁর শতবার্ষিকীর দিকে যেতে যেতে আমাদের কাজ, সেই শ্রম আর মেধার চেহারাটা খুঁজে আনা। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদ কবিতার দিকে যদি তাকানো যায়, দেখা যাবে নিজের মনঃস্বভাবী কবিদের তিনি খুঁজে দেখছেন না, অনুবাদ করছেন গীতা কিংবা রিলকের দুইনো এলেজি। যেখানে অতীন্দ্রিয়ের প্রকাশ-ভাষা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। প্রকাশ, ভাষা বা শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাঁর সিদ্ধি আমাদের মনে হয়েছে কল্পনাতীত, অক্লেশে যিনি চূড়ান্ত অপশব্দের সঙ্গে বিবাহ দিতে পারেন সাধোত্তমের, সেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ই ভাষার অর্থবহ একক ‘শব্দ’ আর কবিতা লেখার রহস্য নিয়ে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। কবিতার শব্দ খুঁজে আনা তাঁর কবিতায় নানান অনিশ্চয় চেহারায় ধরা আছে। স্বতঃস্ফূর্ত কবি-স্বভাবের যে গল্প পাঠকসমাজে গড়ে উঠেছিল এক দিন, সে-কাহিনীর বদলে এক শব্দসন্ধানী কবির ক্ষতবিক্ষত চেহারা ফুটে ওঠে, ‘বুকের রক্ত মুখে তুললেও কবি বলে মানায় না হে’।’’ (আনন্দবাজার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২)
কবিতাকে যথার্থ কবিতা করে তুলতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের তুলনা হয় না। চিত্রকল্প, উপমা, রূপক, অলংকারে কবিতাকে শক্তিময় করে তুলতেন তিনি। যেন পাঠকের দরজায় কড়া নেড়ে বলতো, ‘অবনী বাড়ি আছো?’ তার সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে আর উপায় নেই। শুধু তা-ই নয়, সেই দরজা খুলে একবার কবিতার অন্দরে প্রবেশ করে গেলে আর ফিরে আসার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে তার কবিতার শক্তি এমনই। ফলে একটি ঘোর এবং বাস্তবতার মধ্য দিয়েই এগিয়ে গেছে তার কবিতা। তিনি বাস্তবতাকেও আগলে ধরেছেন পরম মমতায়। তাই তো তার কবিতা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মানুষ। ঘোরগ্রস্ত মানুষ, বাস্তবতার মানুষ।
এ কারণেই হয়তো ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা—প্রসঙ্গ বাস্তবতা’ প্রবন্ধে পার্থসারথি মিশ্র বলেছেন, “একথা সত্য যে কবি শক্তির কবিতা জুড়ে রয়েছে মানুষ। সময় যত এগোচ্ছে মানুষ তত যান্ত্রিক প্রযুক্তির নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে, ফলে দূরত্ব বাড়ছে, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, নিঃসঙ্গতার মত ব্যাধি সমাজকে কাবু করে ফেলছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়কে, সমকালীন যুগযন্ত্রণাবোধ আসলে কবির জীবন সঞ্জাত বাস্তব, তিনি চেয়েছিলেন সমাজ ও মানুষের আলগা শিকড়ে ভালোবাসার মাটি পৌঁছে দিতে, তাই তিনি মানুষকেই ভালোবেসেছেন। সুতরাং রাজনীতি, সমাজ ও সময় প্রভৃতি বাস্তব উপাদানই শক্তির কবিতায় রয়েছে। তাই তার কবিতাকে বাস্তবতাহীন এই তকমা আঁটা যায় না। এ কবিতা মানুষের, জীবনের তাই এ কবিতা অবাস্তব হতে পারে না। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আসলে সম্পূর্ণ সময় ও সমাজ সচেতন একজন কবি। যিনি মানুষের কান্নার শরিক হতে জানেন আবার মৃত্যুর পরেও স্বচ্ছন্দে হেঁটে বেড়াতে পারেন হেমন্তের অরণ্যে।” (পেজফোর, ২৫ নভেম্বর ২০২১)
সবশেষে বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা অনন্তকাল আমাদের শক্তি জোগাবে। তার ধ্যান-জ্ঞান আমাদের সমৃদ্ধ করবে। বাংলা সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কবিতাকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে সমাসীন করবে। আজ এই শক্তিমান কবির প্রয়াণ দিবসে ভক্তি ভরে স্মরণ করছি তাকে।