প্রকৃতি

কাঁঠাল নিয়ে কিছু কথা

মোহাম্মদ আলি প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম
গাছে পাকা কাঁঠাল। ছবি: লেখক

গ্রীষ্মের ফল কাঁঠাল। এটি আমাদের জাতীয় ফল হলেও অনেকেই এই ফলটি খেতে পছন্দ করেন না। তবে কাঁঠালের গুণ কিন্তু শুধু ফলে নয়, রয়েছে পুরো গাছেই। এর ব্যবহার-উপযোগিতা যেমন রয়েছে, তেমন অনেক চমৎকারিত্বও রয়েছে এর অঙ্গে অঙ্গে। আমরা যদি এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনা দিতে যাই, তাহলে এর গুণ ও মহিমা আমাদের অভিভূত করবে নিশ্চিত। তবে ওই বর্ণনায় যাওয়ার আগে আমরা এ ফলের নাম-মাহাত্ম্যের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে পারি।  

কাঁঠাল আমাদের উপমহাদেশীয় ফল, সন্দেহ নেই। কেননা প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণে অন্যান্য অনেক গাছের সাথে এর উল্লেখ রয়েছে। তবে ‘কাঁঠাল’ হিসেবে নয়, ‘পনস’ হিসেবে—ঔষধি গুণের কথা মাথায় রেখেই এর এমন নাম। পনস অর্থ দূর করা বা তাড়িয়ে দেয়া। তবে ‘পনস’ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, আছে ‘কাঁঠাল’ নিয়ে। কেন এর এমন অদ্ভুত নামকরণ? জানা যায়, এর অন্যতম প্রাচীন নাম ‘কণ্টকী ফল’ কথাটা কালক্রমে ‘কাঁটাল’ হয়ে লোকমুখে বিবর্তিত হতে হতে ‘কাঁঠালে’ এসে ঠেকেছে। আর তা হওয়ারই কথা। এত যার ফলের গুণ, তাকে কি আর কণ্টক বা কাঁটা দিয়ে বিভূষিত করা যায়? হিন্দিতে একে ডাকা হয় কানথাল বলে; এবং তা সংস্কৃত ‘কণ্টকী ফল’ থেকেই যে এসেছে, তা না বললেও চলে।

বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে কাঁঠালের দেখা মিলবে। দেখা মিলবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আমেরিকাতেও। অনুমান করা যায়, দুনিয়ার অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা, যেমন আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশেও একে পাওয়া যাবে। আমাদের ঘরদোরপ্রাঙ্গণে অহরহ রোপিত গাছের নাম কাঁঠাল।

কাঁঠাল মাঝারি থেকে বড় আকারের বৃক্ষ। আমরা চারপাশে মাঝারি আকারের গাছ দেখতে পেলেও যেকোনো প্রতিষ্ঠিত কাঁঠালবাগানে গেলে দেখতে পাব ২০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার গাছ। চিরসবুজ বৃক্ষটি আমাদের দেশের দীর্ঘজীবী গাছের অন্যতম। অনুকূল পরিবেশ পেলে ১০০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত জীবন ধারণ করতে পারে বৃক্ষটি।

কাঁঠাল গাছ বিভিন্ন আকৃতি পেতে পারে। গোলাকৃতি ও ছড়ানো আকৃতি তো রয়েছেই, সবচেয়ে সুন্দর হয় মন্দিরাকৃতি পেলে। এর এমন ভঙ্গিমা সাধারণত অল্পবয়স্ক গাছে দেখতে পাওয়া যায়। মনোহরা কালচে সবুজ গাছে সব সময় অল্পবিস্তর লালচে পাতার উপস্থিতি মেলে কাঠবাদাম, জলপাই কিংবা সমুদ্রপারের গেওয়া গাছের মতো।

Moraceae পরিবারের অন্য অনেক সদস্যের মতো কাঁঠালের পাতা, ডালপালা, ফল ও কাণ্ডে দুধকষ রয়েছে। কাণ্ডের দৈর্ঘ্য খুব একটা বেশি হয় না। অল্পদূর বেড়েই ডালপালাগুলো বিস্তৃত হয়। কাণ্ডের বেড় হতে পারে ৮০ সেন্টিমিটারের মতো। বয়স্ক গাছের কাণ্ড এবড়ো-থেবড়ো আবার কুঁচকানোও হতে পারে। কাণ্ডের রঙ লালচে বাদামি, বাকল খসখসে, মাঝে মধ্যে চাড় ধরে ফেটে যায়। কাণ্ডের দ্বিতীয় স্তরের ছালের রঙ লালচে। ডালপালা ঊর্ধ্বমুখী ও বেশ মোটাসোটা। শিকড় সাধারণত ২ মিটারের বেশি গভীরতা পায় না, আবার আশেপাশেও এর বিস্তৃতি ২ মিটারের বেশি সাধারণত হয় না। কিন্তু ঝড়ে গগনশিরীয় কিংবা কৃষ্ণচূড়ার মতো উল্টে পড়েছে, এমন শোনা যায় না মোটেও।

কাঁঠালের পাতার সৌন্দর্য অনন্য। পাতার রঙ কালচে সবুজ, বিডিম্বাকৃতি, অর্থাৎ গোড়ার দিকে চিকন ও আগার দিকে প্রশস্ত; ১০-২০ সেমি লম্বা ও ৬-১২ সেমি চওড়া, পুরু, পার্শ্বশিরা ৭-৮ জোড়া। পাতার নিচে শিরাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সবৃন্তক পাতাগুলোর কিনারা অসমান নয়। পাতা এমনিতেই অখণ্ডক, তবে মাঝে মধ্যে তিন খণ্ডকও হয়। অনুমান করি, তা চারাগাছে। পাতার এই বিভিন্নতার জন্য কাঁঠাল গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের (Artocarpus heteriphyllus) শেষের অংশ heteriphyllus হয়েছে। এর উপপত্র বেশ বড়, বল্লমাকার ও নৌকাকৃতির; দ্রুত তা ঝরে পড়ে।

কাঁঠাল পৃথিবীর আশ্চর্যতম ফলগুলোর একটি। বলা হয়ে থাকে, কোনোরকম রান্না বা প্রক্রিয়া না করে মানুষ খেতে পারে, এমন ফলের মধ্যে কাঁঠাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফল। বড় আকারের একেকটি ফল ওজনে হতে পারে ২৫-৩০ কেজি! কাঁঠাল কিন্তু একটিমাত্র ফল নয়, অনেক অনেক ফলের সমষ্টি; যে-কারণে একে বলা হয় যৌগিক ফল। কাঁটা-কাঁটা খোসার মধ্যে যে কোষ বা কোয়া থাকে তার প্রত্যেকটিই একেকটি ফল। প্রমাণ—প্রত্যেক কোয়াতে একটি করে শক্ত বীজ থাকে। মজার ব্যাপার, এই প্রত্যেক কোয়া একেকটি ফুলের প্রতীকও বটে। আরো মজার ব্যাপার, কাঁঠালের গায়ে যে কাঁটাগুলো থাকে, তা গুনলে আমরা কোয়ার প্রায় মোটসংখ্যাও বের করে ফেলতে পারব। এরপরও যদি কাঁঠাল কিনতে গিয়ে কেউ ঠকে যায়, তাহলে কিন্তু নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দোষ দিতে পারব না! কোয়া ছাড়াও এদের আশেপাশে ভিড় করে থাকে ফিতার মতো অসংখ্য চিটা। কাঁটাময় খোসাসহ এই চিটাকে বলে ভুতি। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়-শ্রাবণে ভুতিপচাগন্ধের অভিজ্ঞতা সবারই রয়েছে নিশ্চিত। পাকা কাঁঠাল কিন্তু আবার দারুণ সুগন্ধিযুক্ত, একই সাথে তীব্রগন্ধিও। কাঁঠাল ভাঙলে পুরো বাড়ি গন্ধে মৌ-মৌ করতে থাকে। পোকামাকড়ের দল তখন হামলে পড়ে তার ওপর। কোয়া বা ফলগুলোর রঙ হতে পারে উজ্জ্বল হলুদ, কমলাটে বা ঘিয়ে রঙের।

কাঁঠালের ফুলের কথা এতক্ষণ বলা হয়নি। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, কাঁঠালের ফুল একলৈঙ্গিক। এর পুরুষ ও স্ত্রী ফুল একই গাছে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকে। ফুলের এই রকমফেরকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় বলে সহবাসী। ভিন্ন ভিন্ন গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকলে তাদের বলে ভিনবাসী; পেঁপে গাছ তার সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা। আর কে না জানে, একই ফুলে স্ত্রী ও পুরুষ প্রত্যঙ্গ থাকলে তাকে বলে উভলিঙ্গ, আদুরে নাম পূর্ণাঙ্গ ফুল। কাঁঠালের স্ত্রী ফুল কাণ্ডের গোড়ার দিকে, আর পুরুষ ফুল কাণ্ডের গোড়া ও উপর, উভয় দিকে ধরে। এ মঞ্জরীগুলোই আসলে কাঁঠালের মুছি, মুচি বা এঁচোড়। আমরা যে ‘ইঁচড়ে পাকা’ কথাটা বলে কমবয়সিদের আমরা গালাগাল করি, কাঁঠালের এঁচোড়ই সেটি। এটিই আসলে ফুলের মঞ্জরী। এ মঞ্জরীতে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল একসাথে অবস্থান করে। ছোট অবস্থায় পুরুষ ও স্ত্রী মঞ্জরীকে আলাদা করে চেনা যেতে পারে, কিছু বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করে। স্ত্রী-মঞ্জরী পুরুষের চাইতে লম্বা-চওড়ায় কিছুটা বড় হয়। পুরুষ ফুলের মঞ্জরীর উপরের দিকটা নরম ও মসৃণ থাকে; স্ত্রী ফুলের উপরের দিকটা অমসৃণ বা দানাদার হয়। পুরুষ মঞ্জরীদণ্ড চিকন ও লম্বা; স্ত্রী মঞ্জরীদণ্ড মোটা ও খাটো। তা ছাড়া স্ত্রী মঞ্জরীর বোঁটার কাছে মোটা রিঙের মতো অংশ থাকে, স্ত্রীরটা থাকে সরু। মজার ব্যাপার হল, একটি পুরুষ ফুল আসলে সবুজ রঙের চামড়াবৎ ও নলাকার পুষ্পপট দিয়ে ঢাকা একটিমাত্র পুংকেশর! পরাগরেণু ছড়াবার জন্য পুষ্পপট থেকে বেরিয়ে এসে মঞ্জরীর উপরের দিকে চলে আসে পুংকেশরগুলো। দিনকয়েক পরে পরাগরেণুতে ভরে যায় পুংমঞ্জরীর উপরের দিকটা। এই ফুল ফোটার বা পরাগরেণুর বিদারণের ৩-৪ দিনের মাথায় বাতাস বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে পরাগায়ন তথা গর্ভধারনকাজ নিশ্চিত হয়। কৃত্রিম পরাগায়নেও বেশ কাজ হয়। পরাগায়নের রীতিবদ্ধ কাজ শেষ হলে পুরুষ-মঞ্জরীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়; মানে ঝরে পড়ে। স্ত্রী-মঞ্জরী তখন ফল ফলাবার আশায় টিকে থাকে এবং তা একসময় বিরাটকায় যৌগিক ফলে রূপান্তরিত হয়।

আমাদের দেশের বনে-বাদাড়ে, বিশেষ করে পাহাড়ি বনে একধরনের বুনো কাঁঠাল পাওয়া যায়, তার নাম চাপালিশ বা চামফল। ফলগুলো কাঁঠালের চাইতে অনেক ছোট, গোলগাল; খোলসে রয়েছে অসংখ্য মিহি কাঁটা। এর ফলও কাঁঠালের মতো যৌগিক, কোষ রয়েছে অসংখ্য, ছোট ছোট। চাপালিশের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, গাছটি ছোট থাকতে পাতার আকার হয় বিশাল এবং অনেক খণ্ডে খণ্ডিত, যা বয়স্ক পাতার সাথে একেবারেই মেলে না। যৌগিক ফল হিসেবে কাঁঠাল কিংবা চাপালিশের কাছাকাছি আমাদের আরেকটি জনপ্রিয় ফলবৃক্ষ হল ডেউয়া। এর পাতা দেখকে অনেকটাই চাপালিশের মতো। এ তো গেল কাঁঠালেতর গাছগুলোর কথা। এবার মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক।

কাঁঠাল নিয়ে কত যে ইয়ার্কি-ফাজলামি রয়েছে আমাদের দেশে, তা বলে শেষ করা যাবে না! কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো, পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া, কাঁঠালের আমসত্ত্ব, ইঁচড়ে পাকা, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ইত্যাদি লোককথা, প্রবাদপ্রবচন, ফোঁড়নের মাধ্যমে কাঁঠাল বলিষ্ঠভাবে বাঙালিজীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। ইংরেজিতে যে একে Jackfruit বলা হয়, তা বনবাদাড় বাগানে পড়ে থাকা কাঁঠালে শেয়ালের মুখ লাগানো ব্যাপারটিকেই অনেকটা প্রতিনিধিত্ব করে। কাঁঠালকে গরিবের ফল বলেও টিটকারি করে থাকে অর্থগর্বী লোকজন। কেননা এর এক ফলেই পুরো পরিবারের এবেলা-ওবেলার খাবার নিশ্চিত হয়ে যায় বলেই হয়ত এমন হেলা করা। অনেক সমর্থ পরিবার কাঁঠালকে হেয় করে নিজ ঘরে তার স্থান দেয় না। জবরদস্ত আঠা, গন্ধের তীব্রতা ও ভুতির দ্রুত পচে যাওয়ার ব্যাপারটিই বোধহয় কাঁঠালের প্রতি তাদের অনাসক্তির কারণ। তবে বাংলাসাহিত্য ও লোকগানে এর ইতিবাচক উল্লেখ রয়েছে। লোকগানে বলা হয়েছে : ‍‍`পিরীতি কাঁঠালের আঠা লাগলে জোড়া ছাড়বে না ভাই‍‍`। জীবনানন্দের কবিতায় বেশ কয়েকবার এসেছে কাঁঠালের প্রসঙ্গ। পাঁচটি ফলের নাম জিজ্ঞেস করলে বাচ্চারা সাথে সাথে বুলি আওড়াবার মতো বলে ওঠে : আম জাম লিচু কলা কাঁঠাল। সত্যিকার অর্থে, বাঙালির কাছে এক বিস্মরণের অতীত ফলের নাম কাঁঠাল।

কাঁঠাল গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। পাতা, ফুল, ফল, কাঠ—এমনকি দুধকষ বা আঠা, শিকড়ও কাজে লাগে। এর পাতা গুরু-ছাগলের প্রিয় খাবার; বিশেষ করে ছাগলের আবশ্যক খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। ছাগলকে বশে আনতে কাঁঠালপাতার বিকল্প নেই! কাঁঠালের কাঠ উজ্জ্বল হলুদ রঙের। আসবাবপত্র তৈরিতে এর কাঠ আমাদের দেশে বেশ ভালোভাবেই ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া এর টেকসই কাঠ দিয়ে বানানো যায় দরজা-জানালার পাল্লা, বাদ্যযন্ত্র, বাক্স, কৃষি-উপকরণ, যানবাহনের চাকা, পিপা, মিস্ত্রিদের যন্ত্রাংশ। এর এঁচোড় বা মুচির ভর্তা আমাদের গ্রাম-এলাকার সুস্বাদু খাবারের একটি। কাঁচা-কাঁঠাল তরকারি হিসেবেও অনেক এলাকায় জনপ্রিয়। কাঁঠালের বিচিভাজা খায়নি এমন লোক বাঙালির মধ্যে কমই রয়েছে। তরকারিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। এ বিচি অনেকদিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। এর পরিত্যক্ত খোসা বা ভুতি গরুছাগলের বিশেষ প্রিয়। 
পাকা কাঁঠালে আছে দারুণ সব পুষ্টিগুণ। মাংসল ও রসালো ফল বা কোষগুলোও দারুণ সুস্বাদু। এক বসায় আস্ত কাঁঠাল সাবাড় করে ফেলতে পারেন কেউ কেউ, এমনি নেশা ধরে খেতে বসলে। খোঁটা সহকারে অসম্ভব জিনিস বোঝাতে আমরা যে বলি ‍‍`কাঁঠালের আমসত্ত্ব‍‍` বলি, তা কিন্তু সত্যিসত্যিই বানানো যায় এর কোয়ার রস দিয়ে। শুধু তাই নয়, কাঁঠাল দিয়ে চিপস বানিয়ে তা বাজারে বিক্রিও করছে থাইল্যান্ড। কাঁঠালের আঠা কাঠ ও তৈজসপত্রের ছিদ্র বন্ধ করার কাজে ব্যবহার করা যায়।

কাঁঠাল গাছ সাধারণত ৭-৮ বছরেই ফল দেয়া শুরু করে। তবে ১৬ বছর বয়স থেকে বেশি-বেশি ফল দেয় গাছটি। একেকটি গাছে এ সময় ফল ধরতে পারে ২০০-২৫০টি পর্যন্ত। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে যারা মাঝারি আকারের ফলবান গাছ দেখেছেন তারা বলতে পারবেন কাঁঠালের ফলনপ্রাচুর্য কাকে বলে! কাণ্ড ও প্রধান ডালগুলোতে বিপুল পরিমাণে বিশালাকারের ফলগুলো ঝুলতে দেখা বাঙালিজীবনের এক অমোচনীয় দৃশ্য—বলাই বাহুল্য। পরিণত ও পুষ্ট ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে ঘরেই পাকানো যায়। তবে ঘরে তোলার আগে রোদে রেখে দিলে পাকার ব্যাপারটি দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। তা ছাড়া শিরদাঁড়া বরাবর লোহাজাতীয় দণ্ড ঢুকিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি ফলটি পেকে যায়।

কাঁঠালের ঔষধি গুণও রয়েছে অনেক। এর ফলের রসে রয়েছে উদ্দীপক শক্তি। ক্লান্তি, অরুচি, শারীরিক দৌর্বল্যে কাঁঠালের কোয়ার রসের ব্যবহার রয়েছে। এর এঁচোড়ের রস দুধসহ খেলে হার্টের দৌর্বল্য সারে বলে জানা যায়। ফলের মাঝ-বরাবার দাঁড়াটি কুচি-কুচি করে কেটে সিদ্ধ করে বাতের ব্যথায় খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কচি পাতার থেঁতলানো অংশ দাদ, একজিমা, চুলকানিতে ব্যবহৃত হয়। কাঁঠালের বীজে রয়েছে রক্তপিত্ত রোগ সারার গুণ।

কাঁঠাল গাছ আমাদের দেশীয় বলে দেশজ বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, পাখি ও প্রাণী এর শরীরে আশ্রয় নেয়, একে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। বিনিময়ে তারা পরাগায়ণে সহায়তা করে। অনুপকারী বিদেশি গাছ বাদ দিয়ে পথপাশ ও বসতবাড়িতে কাঁঠালের মতো দেশীয় গাছগুলো লাগালে দেশীয় প্রাণীপ্রজাতিগুলোও রক্ষা পাবে নিশ্চিত। কাঁঠাল গাছ  বিচি দিয়ে তার বংশবৃদ্ধির কাজটা সারে। তা ছাড়া কলমেও তা চলে।