কখনো কখনো আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমার
হয়তো ডুবছে শহর
পুড়ছে বস্তি
শ্বাস নিতে না পেরে মরছে নদী।
আমার সঙ্গে আকস্মিক দেখা হয়ে গেল আমার।
এমনও হয় গাজী গোলাম মোস্তফা প্রসঙ্গে
শেখ সাহেবের টেবিলের ওপর জোরে থাপ্পড়
দিয়ে বসলেন তাজউদ্দীন সাব
টেবিলে রাখা কাপ থেকে চা পড়লো শেখ মুজিবের পাঞ্জাবিতে
বঙ্গবন্ধু পাঞ্জাবি ঝাড়তে ঝাড়তে চুপ করে রইলেন
তারপর দুজনেই গম্ভীর
অল্প সময় পর বেরিয়ে গেলেন তাজউদ্দীন সাহেব।
আমার সঙ্গে ঠিক তখন দেখা হয়ে গেল আমার।
অথবা
আহমদ ছফা যেদিন স্থান ত্যাগ করলেন
ঢাকার আকাশে ছফার ছাদে পৃথিবীর সব কাক
কাকের কান্না
বিশুদ্ধ মানুষের চোখে জল
হৃৎপিণ্ড জখম
শিল্পী, কবির চোখে আগুন
থেমে থেমে বৃষ্টি
ছফা কোথায় ঘুমাবেন স্থির হতে দিচ্ছে না রাষ্ট্র
আওয়ামী লীগের রাজ্জাক ছফাকে চিনতে পারছেন না মর্মে বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে ঘুমানোর
অনুমতি না দিয়ে মূক ও বধির হয়ে রইলেন
পাথরমানব হয়ে গেলেন তিনি
ছফা কফিনে থেকেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন
হাসতে হাসতে মানচিত্র আর পতাকার দিকে তাকিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন: “জাগ্রত রহো বাঙলাদেশ!”
আমার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেল।
কিংবা
নেরুদার কফিন বন্দুকধারী প্রহরী পরিবেষ্টিত হয়ে মানুষের সুবিশাল মিছিলের পেট থেকে যখন শোকচিহ্ন মুছে যাবার আগেই
মাটির আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে
গাঢ় স্বরে আবৃত্তি করছে সহস্র জনতা নেরুদার কবিতা
সেইসব কবিতার ফুল ও বারুদ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বহারার আকাশে
মুক্তিকামী মানুষের আকাশে
দ্রোহের আগুন ও বাতাসে
যখন কালো পোশাকে আবৃতা জনৈক নারী ছুড়ে দিলেন নেরুদার কফিনে লাল গোলাপ
যে গোলাপে লেগে আছে কোটি জনতার ধমনিপুঞ্জের গাঢ় লাল রক্ত
যে গোলাপে মিশে আছে প্রতিবাদ ও প্রেমের আগুন
সে গোলাপ ও নেরুদার কফিনের জল রঙের খেলা দেখার কালে
আকস্মিক আমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল আমার।
এমনকী বসন্তের এক রাতে হে আমার প্রিয়তমা, তুমি যখন তাচ্ছিল্যের হাসি অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিয়ে মায়াকোভস্কির প্রেমিকা লিলিয়ার মতো বললে, “নিমক হারাম”
আমার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেল।
আমি ফিরলাম মাঝে মাঝে নিজেকে খুঁজে
পাওয়া আমার কাছে!