কবি, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই আজকের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’, ‘জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার’, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক’ ও ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন।
আলাউদ্দিন আল আজাদের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদীর রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে। তার পিতার নাম গাজী আব্দুস সোবহান। নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (১৯৪৭), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৪৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৫৩) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৪) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি (১৯৭০) লাভ করেন তিনি।
আলাউদ্দিন আল আজাদ জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে এক দীপ্তিমান প্রতিভা। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় তার ছিল সফল ও সার্থক পদচারণা। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪৯। গুণী এ লেখকের রচনাবলি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার জনপ্রিয় উপন্যাস `তেইশ নম্বর তৈলচিত্র` ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও বুলগেরীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। তারই উদ্যোগে প্রকাশিত হয় একুশের প্রথম বুলেটিন। প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের পর তিনি রচনা করেন ঐতিহাসিক ও অমর কবিতা `স্মৃতিস্তম্ভ`। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামেও তিনি একজন গর্বিত সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত তার বিখ্যাত গ্রন্থ `ফেরারী ডায়েরী` ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠ দলিল।
আলাউদ্দিন আল আজাদের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথমদিন, কর্ণফুলী, খসড়া কাগজ, কায়াহীন ছায়াহীন, ক্যাম্পাস। এ ছাড়া ছোটগল্প জেগে আছি, বৃষ্টি, মৃগনাভি, অন্ধকার সিঁড়ি, জীবনজমিন। কবিতা মানচিত্র, ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ, লেলিহান পাণ্ডুলিপি, আমি যখন আসবো, চোখ এবং কাব্যনাট্য ইহুদির মেয়ে, রঙিন মুদ্রারাক্ষস ইত্যাদি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তার নাটকের মধ্যে রয়েছে মরক্কোর যাদুকর, মায়াবী প্রহর, ধন্যবাদ, নিঃশব্দ যাত্রা, নরকে লাল গোলাপ উল্লেখযোগ্য।