“যে পিতা সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পায়, আমি তাকে ঘৃণা করি/ যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে, আমি তাকে ঘৃণা করি/ যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানি প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না, আমি তাকে ঘৃণা করি।” জ্বালাময়ী এই পঙ্ক্তির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! বিপ্লবী এই কবিতার স্রষ্টার নাম নবারুণ ভট্টাচার্য। আজ তার ৭৪তম জন্মদিন।
১৯৪৮ সালের এই দিনে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে বিখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবীর ঘর আলো করে আসেন সাহিত্যের এ বিপ্লবী সন্তান। তিনি পড়াশোনা করেছেন কলকতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে এবং আশুতোষ কলেজে প্রথমে ভূতত্ত্ব নিয়ে ও পরে সিটি কলেজে ইংরেজি নিয়ে |
কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক—এই তিনটি পরিচয়ের মিশেলে নবারুণ গড়ে তুলছিলেন স্বকীয় একটি ধারা। নাটক করেছেন কলকাতার মঞ্চে। বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নবারুণ দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায়।
নবারুণ ভট্টাচার্যের সাহিত্য সৃষ্টিতে ছিল সর্বাহারাদের দুঃখের কথা। তার প্রতিটা লেখায় পাঠক পেয়েছে প্রান্তিক মানুষের বেদনার কথা। কবিতায় উঠে এসেছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সমালোচনা। তিনি লিখেছেন রাষ্ট্রের আসল সত্তা মানে, সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, কারাগার এবং বলপূর্বক অন্যের ইচ্ছাকে আয়ত্তে আনার অন্যান্য উপায়। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার একশো উনিশ লাইনে এঁকেছেন রাষ্ট্রের স্তম্ভ ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বাস্তবিক চিত্র।
১৯৬৮ সালে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রথম ছোটগল্প ‘ভাসান’। প্রথম কবিতার বই ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘হারবার্ট’ প্রকাশ পায় ১৯৯২ সালে। ‘হারবার্ট’ উপন্যাসের জন্য নবারুণ নরসিংহ দাস (১৯৯৪), বঙ্কিম (১৯৯৬) ও সাহিত্য আকাদেমি (১৯৯৭) পুরস্কার পেয়েছেন | কাঙাল মালসাট, অটো ও ভোগী, হালাল ঝান্ডা ও অন্যান্য, মহাজানের অন্য, ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচক, মসোলিয়ম, রাতের সার্কাস, খেলনানগর, ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য পুস্তক।
বাংলা সাহিত্যের এ কালজয়ী লেখক ২০১৪ সালের ১ আগস্ট আন্ত্রিক ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতায় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।