মুখবন্ধ
শার্ল বোদলেয়ার প্রণীত এবং কবির মৃত্যুর দুই বছর পর প্রকাশিত ‘পারির পিত্ত’ নামক গদ্যে লেখা পদ্যগ্রন্থের প্রথম ছয়টি পদ্যের তর্জমা ১৭ মার্চ ২০২২ তারিখে ছাপা হইয়াছিল। আজ দ্বিতীয় কিস্তিস্বরূপ আরো ছয়টির (৭-১২) তর্জমা ছাপা হইতেছে। এইগুলি লওয়া হইয়াছে ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত দুই খণ্ড বোদলেয়ার রচনাবলীর প্রথম খণ্ড হইতে। এই রচনাবলী সম্পাদনা করিয়াছেন ক্লদ পিশোয়া। এই তর্জমা ফরাশি হইতে করা হইয়াছে। তবে আমি একাধিক ইংরেজি, একটি করিয়া হিস্পানি, ইতালিয়া এবং বাংলা তর্জমা পড়িয়া দেখিয়াছি। তর্জমা শেষ বিচারে ব্যাখ্যাবিশেষ। ব্যাখ্যার দায়দায়িত্ব—বলাবাহুল্য—আমি গ্রহণ করিতেছি।
এই পদ্যগুচ্ছে বুর্জোয়া সমাজে জনসাধারণের রুচি কি আকার ধারণ করে তাহার একটা পরিমাপ করিয়াছেন বোদলেয়ার। বুর্জোয়া সমাজে রূপোপজীবীর ব্যবচ্ছেদ ‘নাদান ও হ্বেনাস’ পড়িলে ঠাহর করা যায়। ‘কুকুর আর শিশি’ কবিতায় বুর্জোয়া রুচিকে তিনি সযত্নচর্চিত বর্জ্যরে সহিত তুলনীয় মনে করিয়াছেন। বুর্জোয়া নীতিকথার ভিত্তি কতখানি নড়বড়ে—অর্থাৎ যুগপদ কেমন ‘আকস্মিক আর অযৌক্তিক’—‘দুষ্ট কাঁচুয়া’ কবিতায় তাহা তিনি একটা উপকথার আঙ্গিকে দেখাইয়াছেন।
‘রাত একটায়’ নামের কবিতায় কথকঠাকুর জানাইতেছেন এই জীবন আর এই শহর কতখানি ভয়াবহ। এই দুনিয়ার সমস্ত মিথ্যা আর দুর্নীতিপরায়ণ বাষ্প হইতে পরিত্রাণের পথ হয়তো দুই চারিটি সুন্দর কবিতা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাইবে না। তবে কবিতাও শেষকথা নয়। কবিতার কথকঠাকুর নিজেও আত্মম্ভরিতা আর মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে অপরাধের দায় এড়াইতে পারেন না। সে কথা তিনি এখানে অকপটে স্বীকার করিতেছেন।
‘বন্যবিবি আর ভদ্রমহিলা’ কবিতাটি বুর্জোয়া সমাজে পবিত্র পরিবার কি রকম ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রতিরূপ হইয়া দাঁড়ায় তাহার একরূপ প্রকাশ পরিচ্ছন্ন। কপটতা মানব-সম্পর্ককে একপ্রকার অসম্ভবের পায়ে ঠেলিয়া দেয়। যে সমস্ত সমাজে ধনতান্ত্রিক উৎপাদন প্রণালী দিব্য বিরাজমান সেখানে ব্যক্তিমানুষ শেষ পর্যন্ত লোকারণ্যে হারাইয়া যাইতে বাধ্য। এই গুচ্ছের শেষ কবিতা—'লোকারণ্য'—সেই সত্যের সামান্য প্রকাশ বৈ নহে। হ্বালটার বেনিয়ামিন সত্য কথাই বলিয়াছিলেন, ‘শার্ল বোদলেয়ার: ধনতন্ত্রের মধ্যযুগারূঢ় গীতিকবি’।
২১ মার্চ ২০২২
দোহাই
Charles Baudelaire, Oeuvres complètes, I, texte établi, présenté et annoté par Claude Pichois (Paris: Éditions Gallimard, 1975), pp. 283-292.
৭
নাদান ও হ্বেনাস
কি দারুণ দিন! জ্বলন্ত সূর্যের গনগনে চোখের নীচে বিশাল উদ্যান—প্রেমদেবীর বশীভূত হইয়া যৌবন যেমন ঝিমাইতে থাকে তেমন—ঝিমাইতেছে।
বস্তুজগতের এই সার্বজনীন পুলক এখানে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে কোন প্রকার সাড়াশব্দ ছাড়াই; স্বয়ং পানির দুনিয়াও যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এক্ষণে এখানে যে নীরব শিহরণ তাহার সহিত মনুষ্য-সমাজে প্রচলিত উৎসব অনুষ্ঠানের পার্থক্যটা বেশ।
বলা চলে, ক্রমবর্ধমান আলোর তোড়ে যাবতীয় বস্তু হইতে যেন বা আলোর ঝিলিক ছড়াইয়া পড়িতেছে, যেন বা আপন আপন গাত্রবর্ণে বলীয়ান হর্ষোৎফুল্ল পুষ্পরাজি আকাশি নীলের সহিত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হইবার বাসনায় পুড়িতেছে; আর যেন বা এ উত্তাপে দৃশ্যমান সুগন্ধরাজির ধোঁয়া তারকামণ্ডলের দিকে উড়িয়া যাইতেছে।
ইত্যবসরে এই সার্বজনীন আনন্দমেলার মধ্যে দুঃখে জর্জর একটি প্রাণী আমারে নজরে পড়িল।
দেখি বিশালাকার এক হ্বেনাসের পায়ের তলায় জাতে মাতাল তালে ঠিক গোছের এক পাগল, রাজা-মহারাজারা পরিতাপে কি বিষাদে-বৈরাগ্যে পড়িয়া একশেষ হইলে—গায়ে রঙচঙে আর হাস্যকর জামা-কাপড় চড়াইয়া, মাথায় শিঙ আর ঝুনঝুনি বাঁধিয়া—মুখে হাসি ফোটাইবার কোশেস যাহারা করে মূর্তির পাদদেশে সাষ্টাঙ্গ প্রণতাবস্থায় তাহাদের গোত্রের এক সঙ মৃত্যুঞ্জয়ী দেবীর দিকে অশ্রুপরিপূর্ণ দুইটি চোখ তুলিয়া তাকাইয়া আছে।
তাহার চক্ষুদ্বয় বলিতেছে: “মানবকুলে আমি দীনের হইতেও দীন, একার হইতেও একা; আমার না আছে প্রেম, না আছে বন্ধুভাগ্য, এমন কি পশুজগতের নাচিজ পশুটির তুলনায়ও নাচিজ আমি। তারপরও আমাকে—এই আমাকেও—মৃত্যুঞ্জয়ী রূপের মহিমা বুঝিবার আর বেদনা ধারণ করিবার প্রতিভা দিয়া তৈয়ার করা হইয়াছে। হায়! দেবি! আমার বেদনা, আমার বিভ্রান্তি আপনি ক্ষমা করুন!”
এদিকে অনমনীয় হ্বেনাস মার্বেল পাথরের দুইটি চোখ মেলিয়া দূরে—কে জানে কোথায়—একটা কিছুর দিকে তাকাইয়া রহিলেন।
৮
কুকুর আর শিশি
“সোনা কুকুর আমার, সোনা কুকুর আমার, আদরের কুকুরু আমার, এদিকে আসুন তো, এই মেশক আম্বরটা একটু শুঁকিয়া দেখুন দিকি! শহরের সেরা আম্বরখানা হইতে কিনিয়া আনিয়াছি এই আতর।”
কুকুরটি লেজ নড়াইতে নড়াইতে—মনে হয় এহেন অভাগা প্রাণীদের জগতে ইহা হাসি আর মৃদুহাস্যের চিহ্ন—কাছে আসিয়া ঔৎসুক্যের সহিত ভেজা নাকটি ছিপিখোলা শিশির কাছে নিল, তারপর হঠাৎ ভয় পাইয়া পিছাইয়া আসিল; অনেকটা ভর্ৎসনার ভঙ্গিতে আমার দিকে ফিরিয়া ঘেউ ঘেউ করিতে লাগিল।
“—আহা রে! হতভাগা কুকুরের বাচ্চা! আপনাকে এক পুঁটুলি বিষ্ঠা আনিয়া দিতাম তো আপনি আনন্দে নাচানাচিই করিতেন, হয়তো গিলিয়াও ফেলিতেন। তাই বলি আপনি—আমার এই বেদনাহত জীবনের অপদস্থ সহচর আপনি—সেই জনসাধারণের অনুরূপ উৎকৃষ্ট আতর-আম্বর যাহাদের বিরক্ত করে, যাহাদের কখনো আতর দিতে নাই—যাহাদের দিতে হয় সযত্নচর্চিত বর্জ্য।”
৯
দুষ্ট কাঁচুয়া
এমন কিছু নির্ভেজাল ধ্যানী আর আদ্যোপান্ত অকর্মণ্য চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় যাহারা রহস্যাবৃত আর অজ্ঞাতনামা কোন ঝোঁকের বশে মাঝেমধ্যে এমন দ্রæততার সহিত একেকটা কাণ্ড ঘটাইয়া বসেন যে কাণ্ডটা ঘটাইতে সক্ষম বলিয়া তাহারা নিজেরাও বিশ্বাস করিবেন না।
পাছে বাড়ির পরিচারকের মুখে অপ্রীতিকর খবর শোনেন এই আশংকায় কেহ কেহ ঘরে ঢুকিবার সাহস পান না বলিয়া ঘণ্টাখানেক সীমানা প্রাচীরের বাহিরে বিচলিতচিত্তে পায়চারি করেন; কেহ বা গোটা দুই সপ্তাহ একটা চিঠি না খুলিয়া পাহারা দিতে থাকেন কিংবা দরকারি যে কাজটা অন্তত বছরখানেক আগেই সারিয়া ফেলা উচিত ছিল তাহার ছয় মাস পার হইবার পর মাত্র কাজটায় হাত দিতে সম্মত হন—এমন লোকও কখনও হঠাৎ ধনুর্মুক্ত শরের ন্যায় অদম্য চাপে পড়িয়া একেকটা কাণ্ড ঘটাইয়া বসেন। এ জাতীয় কুঁড়ের বাদশা আর ইন্দ্রিয়াসক্তদের এহেন উন্মত্ত বলটা কে যোগায় আর যিনি যৎসামান্য আর একান্ত দরকারি কাজটা পর্যন্ত সারিতে অপারগ তিনিও বিশেষ মুহূর্তে এমন পরম দুঃসাহস কোথা হইতে পান যাহার জোরে অকস্মাৎ এমন সাংঘাতিক অসম্ভব আর সদা বিপজ্জনক সব কাণ্ড ঘটাইতে পারেন তাহা যাঁহারা নিজেরা সব জানেন বলিয়া দাবি করেন সেই নীতি-ব্যবসায়ী আর চিকিৎসা-ব্যবসায়ীরা বলিতে পারেন না।
আমার এক বন্ধু, যাহার মতন নির্দোষ স্বপ্নচারী লোক জগতে দ্বিতীয়টি হয় না, একবার এক বনে আগুন দিয়াছিলেন—সত্যটা জানাইলেন তিনি নিজেই—আগুন যত দ্রুত ছড়ায় বলিয়া লোকে দাবি করে আসলেই তত দ্রুত ছড়ায় কিনা পরীক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে। পরীক্ষাটা পর পর দশবার ব্যর্থ হইলেও এগারো বারের বার বড় ভালোভাবেই সফল হইয়াছিল।
আরেকজন একটা বারুদের পিপা ঘেষিয়া চুরুট ধরাইলেন শুদ্ধ দেখিতে, জানিতে, নিয়তিকে হাতছানি দিতে, মনের জোরটা কতখানি তাহার পরীক্ষায় নিজেকে বাধ্য করিতে, উদ্বেগে কি আনন্দ তাহার একটা হিসাব লইতে, কিছুনার খাতিরে, ঝোঁকের মাথায়, করিবার মতন বেহতর কিছু না থাকার অজুহাতে।
এ বস্তুটি এমন এক বল যাহা জন্মায় বিতৃষ্ণা হইতে, জন্মায় সুখস্বপ্নের ঘোর হইতে, আর যাহাদের মধ্যে ইহার প্রকাশ এতই মধুর তাহারা—আগেই বলিয়াছি—এই দুনিয়ার প্রাণীকুলে সর্বাধিক কুঁড়ে আর আত্মকেন্দ্রিক।
আরেকজন এতই ভীতু চরিত্রের যে কোন মনুষ্যসন্তান তাহার দিকে দৃকপাত করিলেও নিজের চোখটা নামাইয়া লইতেন, এমনই ভীতু প্রকৃতির যে কোন ক্যাফে কি থিয়েটারে ঢুকিতেও দুনিয়ার সমস্ত সাহস একত্র করিতে হইত তাহার—থিয়েটারুদের তিনি ভাবিতেন মিনোস, এয়াকস কিংবা রাদামান্তসের মতন মহিমার অধিকারী—ঐ ভদ্রলোকই একদিন পথিমধ্যে অকস্মাৎ দুই বাহু বাড়াইয়া এক বুড়ো ভদ্রলোককে জড়াইয়া ধরিলেন আর হতবাক পথচারীদের চোখের উপর তাহার গালে সোৎসাহে চুমু দিতে লাগিলেন।
কারণ? লোকটার চেহারা-সুরতের আকর্ষণ তাহার চোখে অপ্রতিরোধ্য ঠেকিয়াছিল বলিয়া? হইতে পারে; তবে কারণটা তিনি নিজেও জানিতেন না ধরিয়া লওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত।
আমি নিজেও একাধিকবার এই জাতীয় একটা ঝোঁকের কবলে পড়ি, যে কারণে আমরা বিশ্বাস করিতে বাধ্য যে দুষ্টমতি দৈত্যদানবের দল আমাদের ভেতর সন্তর্পণে ঢুকিয়া পড়িতে পারে আর আমাদের অজান্তেই আমাদের দিয়া আপনাদের সাংঘাতিক অসম্ভব সব কামনা-বাসনা পূরণ করাইয়া ছাড়ে।
একদিন সকালবেলা ঘুম হইতে উঠিয়াছি একটা নিরানন্দ, গুমোট, আলস্যে অবসন্ন মনে আর—তখন মনে হইয়াছিল—কিছু একটা এলাহি কারবার, একটা চোখধাঁধানো কাণ্ড ঘটাইবার তাগিদে-তাড়নায়; উঠিয়াই জানালাটা খুলিলাম, হায়!
(দয়া করিয়া মনে রাখিবেন, কাহারও কাহারও মাথায় সরেজমিন ঠাট্টার তাড়নাটা দেখা দেয় বিশেষ কোন ভাবনাচিন্তা কিংবা পরিকল্পনা অনুসারে নয়, দেখা দেয় আচমকা কোন ঝোঁকের কারণে—ঝোঁকটার জোর যত তাহার বাসনাও ততই পোক্ত হয়—ঘটনাটা চিকিৎসা-ব্যবসায়ীরা বলিয়া থাকেন স্নায়বিক বিকারের ফল, আর যাঁহারা চিকিৎসা-ব্যবসায়ীর তুলনায় অধিক জানেন তাঁহারা বলেন কারসাজিটা শয়তানের—যাহাতে আমাদের অপরিমেয় খতরনাক কি অনুচিত কর্মকাণ্ডে ঝাঁপাইয়া পড়িবার তাড়না অদম্য হয়।)
রাস্তায় সর্বপ্রথম যে লোকটা আমার চোখে পড়িল তিনি একজন কাঁচুয়া যাহার তীক্ষণ কর্কশ আওয়াজ পারির ভারি, নোংরা বাতাস ছাপাইয়া আমার দিকে ভাসিয়া আসিল। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া রাখি, এই হতভাগা লোকটির উপর কি কারণে আমার মনে এত রোষের উদয় হইল তাহা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব; এই রোষটা ছিল যুগপদ আকস্মিক আর অযৌক্তিক।
“এই ব্যাটা!” আমি ডাক পাড়িলাম, “এই নীচে, উপরে আসেন!” অপেক্ষায় থাকিতে থাকিতে আমার মনে হইল—আর তাহাতে খানিক মজা যে পাই নাই তাহাও নয়—আমার বাসাটা তো সাততলায় আর সরু সিঁড়ি ভাঙিয়া উপরে উঠিতে লোকটাকে বড় দেখিয়া শুনিয়া, পাশ কাটাইয়া, গা বাঁচাইয়া উঠিতে হইবে; তাহার ভঙ্গুর সদাইপাতির কোনাকাঞ্চি যে সিঁড়িপথের বাঁকে বাঁকে ধাক্কা খাইবে তাহাতে সন্দেহ নাই।
শেষমেষ তিনি আবির্ভূত হইলেন। আমি ঔৎসুক্যভরে তাহার তাবত কাঁচের পালা পরীক্ষা করিয়া দেখিলাম আর বলিলাম: ‘ব্যাপারখানা কি? আপনার সকাশ রঙিন কাঁচটাচ কিছু নাই? গোলাপি, লাল, কি নীল কাঁচ, যাদুর কাঁচ, বেহেস্তের কাঁচ? আপনার সাহস তো দেখি কম নয়। এই গরীবদুঃখীর পাড়ায় ঘোরাফেরার সাহস করেন অথচ যে কাঁচে জীবন সুন্দর দেখায় তেমন কাঁচও নাই আপনার!” কথাটা বলিতে না বলিতেই আমি তাহাকে সিঁড়ির দিকে ঠেলিয়া দিলাম—শ্বাসটা কোনমতে চাপিয়া গজর গজর করিতে করিতে একটা টক্কর খাইলেন তিনি।
আমি গেলাম ঝুলবারান্দায়; হাতে লইলাম ছোট্ট একটি ফুলের টব আর যখন লোকটি নীচে বাড়ির সিংহদরওয়াজা পার হইবেন হইবেন তখনই আমার হাতের যুদ্ধাস্ত্রটি ছাড়িয়া দিলাম যাহা সোজা তাহার বোচকা-বুচকির পিছ বরাবর পড়িল। ধাক্কার জোরে পা হড়কাইয়া পড়িয়া গেলেন তিনি, তাহার পিঠের যৎসামান্য চলন্ত ধনসম্ভার ভাঙিয়া-চুরিয়া একশেষ হইল; এই ভাঙনের কর্ণপটাহবিদারী শব্দে মনে হইল কোন কাঁচের প্রাসাদে যেন আকাশ হইতে বাজ পড়িতেছে।
এই উচ্চণ্ড বোকামির প্রসাদে পুলকিত আমি রাগের মাথায় তাহার উদ্দেশ্যে চিৎকার করিলাম: “জীবন সুন্দর দেখায়! জীবন সুন্দর দেখায়!”
এ ধরনের একান্ত গোমূর্খগোছ ঠাট্টা আদৌ বিপম্মুক্ত নয়; আর অনেক সময় এ বাবদ চরম মূল্যশোধও করিতে হইতে পারে। তবে যে ব্যক্তি কিনা মুহূর্তের মধ্যেই অনন্ত আনন্দের সন্ধান পান তাহার সকাশ অনন্ত অভিশাপের বোঝা বহনটা এমন কি ব্যাপার আর?”
১০
রাত একটায়
শেষ পর্যন্ত! একেলা! গোটাকয়েক পিছাইয়া পড়া আর খোড়া স্যাকরাগাড়ির গরগরটা বাদ দিলে আর কোন সাড়াশব্দ শোনা যায় না। কয়েক ঘণ্টা ঘুম না হোক, অন্তত নৈঃশব্দ্য বিরাজ করিবে। শেষ পর্যন্ত! মনুষ্য-সুরতের অত্যাচারটা দূর হইল, আর খোদ আমাকে বাদ দিলে যন্ত্রণা দেওয়ার মতন কেহ আর রহিল না।
শেষ পর্যন্ত! তো অন্ধকারে একবার অবগাহনের বিশ্রামটা নিতে পারি! বিসমিল্লাহয়, তালাটায় এক এক করিয়া দুই প্যাঁচ ঘুরাইলাম। মনে হইল চাবির দুইটা ঘূর্ণি আমার নির্জনতা খানিক বাড়াইয়া দিল আর এ মুহূর্তে গোটা দুনিয়া হইতে যে বাধার প্রাচীরটা আমাকে তফাতে রাখিয়াছে তাহাকে আরও সুরক্ষিত করিল!
ভয়াবহ জীবন! ভয়াবহ শহর! আসুন, দিনটার একটা হিশাব লওয়া যাক: কয়েকজন বিদ্বান লোকের সহিত দেখা করিলাম, তাঁহাদের একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন স্থলপথে রাশিয়া যাওয়া যায় কিনা (উনি নিঃসন্দেহে ধরিয়া লইয়াছিলেন রাশিয়া দ্বীপবিশেষ); এক সাময়িকী সম্পাদকের সহিত প্রাণ খুলিয়া তর্ক করিলাম, যে যুক্তিই দিই না কেন ভদ্রলোক বলিতেই থাকিলেন: “আমরা সৎলোকের দল,”—এই কথাটার তাৎপর্য দাঁড়ায় আর পত্র-পত্রিকা যাঁহারা চালাইতেছেন তাঁহারা দুর্বৃত্ত বটে; গোটাবিশেক লোককে সালাম করিলাম যাহাদের পনেরজনই আমার অপরিচিত; একই অনুপাতে অন্য কজনের সঙ্গে করমর্দন করিলাম, তাহাও আবার হাতমোজা কিনিবার সাবধানতাটা অবলম্বন না করিয়া; একপশলা বৃষ্টির ফাঁকে, সময় কাটাইবার মতলবে, সস্তা এক অভিনেত্রীর বাসায় গেলাম, তিনি অনুরোধ করিলেন তাহার জন্য একপ্রস্ত হ্বেনাসের পোশাক নকশা করিতে; জনৈক থিয়েটার পরিচালকের সঙ্গে আড্ডা দিলাম; বিদায়বেলা তিনি আমাকে বলিলেন: “—আপনি যদি চন্দ্রবিন্দু সাহেবের সঙ্গে একটু দেখা করেন তো ভালো হয়..., আমার খাতায় যত লেখক আছেন তিনিই তাঁহাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মূর্খ, সেরা গর্দব এবং খ্যাতিতে সবাইকে ছাড়াইয়া গিয়াছেন, তাহাকে ধরিলে হয়তো আপনার কিছু একটা কার্যসিদ্ধি হইবে, আগে তাঁহার সহিত দেখা করেন, তারপর দেখি কি করা যায়;” যে অপকর্ম আমি কস্মিনকালেও করি নাই কয়েক দফা সে অপকর্মের বড়াই করিলাম (কেন করিলাম?); আর জীবনে সানন্দে যে কয়টি দুষ্কৃতি সম্পাদন করিয়াছি কাপুরুষের মতো সেগুলি—আত্মম্ভরিতার মতন অপকর্ম, মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রভৃতি—অস্বীকার করিলাম; এক বন্ধুকে খুব সাধারণ একটা সাহায্য করিতেও অস্বীকৃতি জানাইলাম; আর জনৈক পাক্কা ভাঁড়কে লিখিত প্রত্যয়নপত্রই দিয়া বসিলাম; উহ্! ইহাতেই কি সব শেষ?
আমি ক্ষুব্ধ সকলের উপর এবং ক্ষুব্ধ নিজের উপরও। এখন আমি রাত্রির নৈঃশব্দ্য আর নির্জনতার অবসরে নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের আর খানিকটা আত্মমর্যাদা ফিরিয়া পাইবার চেষ্টা করিব। যাঁহাদের ভালোবাসিয়াছি তাঁহাদের আত্মা, যাঁহাদের বন্দনা করিয়াছি তাঁহাদের আত্মা, আমাকে শক্তি দিন, আমাকে সাহস দিন, এই দুনিয়ার যত মিথ্যা আর দুর্নীতিপরায়ণ বাষ্প তাহা হইতে তফাতে রাখুন, আর আপনি, হে আমার পরমেশ্বর, আমাকে দয়া করুন, দুই চারিটা সুন্দর কবিতা লেখার শক্তি আমাকে দিন যেন আমি নিজের কাছে নিজে প্রমাণ করিতে পারি মানবকুলে আমি নিতান্ত নাচিজ নহি, যাহাদের আমি অবজ্ঞা করিয়া থাকি আমি তাহাদের অধম নহি।
১১
বন্যবিবি আর ভদ্রমহিলা
“প্রিয়তমা আমার, সত্য বলিতে কি, আপনি আমাকে হয়রান করিতেছেন সীমাহীন, দেখাইতেছেন বড় নিষ্ঠুরতা; আপনার দীর্ঘশ্বাস একেকটা শুনিলে মনে হয় কষ্টটা আপনার ষাটোর্দ্ধা ন্যাতাকুড়োনি আর হোটেল-রেস্তোরাঁর দরজায় রুটি-তরকারির উচ্ছিষ্টের জন্য ভিড় করা ভিখিরিণী বুড়িদের কষ্টের চাহিতেও বেশি।
“আপনার দীর্ঘশ্বাসে অন্তত খানিক অনুশোচনার প্রকাশও যদি ঘটিত বলা চলিত ভালো একটা কাজ করিয়াছেন; কিন্তু আপনার আচার-ব্যবহারে যাহা প্রকাশ পাইতেছে তাহা তো সুখস্বাচ্ছন্দ্যে তৃপ্তির আর বিশ্রামজনিত আলস্যের জের মাত্র। অধিক কি, আপনার অফুরান অর্থহীন বাক্যমালা—এই যেমন ‘আমায় চুটাইয়া সোহাগ করুন, ও না হইলে আমার চলিবে না’ প্রভৃতি—তো আছেই। শুনুন, আপনার একটা নিরাময় আমি খুঁজিয়া বাহির করিতে চাহি; কোন গ্রামীন মেলায় দুই পয়সা খরচা করিলেই তাহা পাওয়া যাইবে; বেশিদূর যাওয়ার দরকার পড়িবে না।
“এক্ষণে অনুগ্রহ করিয়া ঐ ইস্পাতের খাঁচাটার দিকে একবার চোখ রাখুন তো, দেখিবেন উহার ভিতরে একটা লম্বাচুলো দানব—আকারে-অবয়বে যাহাকে আপনার মতোই মনে হয়—যিনি দণ্ডিত অপরাধীর মতন হাউমাউ করিতেছেন, দীর্ঘদিন নির্বাসিত ওরাংওটাঙের মতন শিক কাঁপাইতেছেন, কখনও বাঘের মতন চক্রাকারে নিখুঁত লাফ দিতেছেন, কখনও বা শ্বেত ভল্লুকের মতন গড়াগড়ি যাইতেছেন।
“এ দানব তো আর কিছু নহেন, যে প্রাণীদের লোকে হরদম ‘সোনামনি আমার’ বলিয়া ডাকে তাহাদের গোত্রভুক্ত অর্থাৎ মহিলাবিশেষ! তাহার সঙ্গের অপর যে দানবটি মুগুর হাতে হুংকার ছাড়িতেছেন তিনি তাহার সোয়ামি! শাস্ত্রসম্মত উপায়ে পরিণীতা বিবিকে পশুর মতন শিকলে বাধিয়া শহরতলির ছোট ছোট মেলায় প্রদর্শন করিতে বাহির হইয়াছেন তিনি, প্রশাসনের এজাজত লইয়াই বাহির হইয়াছেন—এ কথা না বলিলেও চলিবে।
“ভালো করিয়া নজর করুন। দেখুন, নিদারুণ ক্ষুন্নিবৃত্তির প্রয়োজনে (হয়তো আদৌ ভান করিয়া নয়!) কিভাবে তিনি মালিক মহোদয়ের ছোঁড়া জ্যান্ত খরগোশছানা আর কঁ কঁ করা মুরগি ছিঁড়িয়া টুকরা করিতেছেন। ভদ্রলোক কহিতেছেন, “আরে, থামেন থামেন, সবটা একদিনেই খাইতে হয় না”, আর এই সুসমাচার জাহির করিবার পরপরই নির্দয়চিত্তে শিকারটা ছিনাইয়া লইলেন তিনি; শিকারের জড়ানো-প্যাঁচানো নাড়িভুড়ি এখনও ঐ হিংস্র পশুটার—মানে মহিলার—দাঁতে লাগিয়া আছে।
“ঠিক তখনই! তাহাকে শান্ত করিবার দাওয়াস্বরূপ মুগুরের ঘা পড়িল একটা, কারণ মহিলা কাড়িয়া লওয়া খাদ্যবস্তুটার দিকে ভয়ানক লোলুপদৃষ্টিতে তাকাইয়া ছিলেন। ও আল্লাহ! মুগুরটা মোটেও মঞ্চের মুগুর নহে; কৃত্রিম পশমের ঢাকনা ভেদিয়া মাংসধুনার যে শব্দটা ভাসিয়া আসিল তাহা শুনিলেন তো?
“এক্ষণে মাথার কোটর ঠিকরাইয়া বাহির হওয়া চোখ দুইটা পুরা বাহির করিয়া তিনি আরো স্বাভাবিক গলায় হাউমাউ করিতেছেন, হাপরে লোহা পিটাইলে যেমন ফুলকি ছোটে রাগের মাথায় তেমন ফুলকি ছিটাইতেছেন।
“ও আল্লাহ! আপনার হাতের কীর্তি, আদম আর হাওয়ার এই দুই বংশধরের দাম্পত্যকলা এরকমই। এ মহিলা যে আদতেই সুখী নহেন তাহা ফকফকে, দুর্নামের কাতুকুতুও অবশ্য মজার একথা হয়তো তাহার একেবারে অজানা নয়, তবু তাহার কষ্টটা অপূরণীয়, পরিত্রাণহীন। যে দুনিয়ায় তিনি অবতীর্ণ সেখানে নারীর ভাগ্যে ভিন্ন কিছু জুটিতে পারে—একথা হয়তো ভাবিতেই পারেন নাই তিনি।
“এক্ষণে নিজেদের কথায় ফিরিয়া আসি, মহামূল্য প্রিয়তমা আমার! দোজখপুর এই দুনিয়ার মাপে আপনার মনোহর ছোট্ট দোজখটি লইয়া আমি কি আর করিতে পারি মনে হয় আপনার? আপনি তো নিজের চামড়ার মতন মসৃণ চাদর না বিছাইলে শয়ন করিবেন না, আর অভিজ্ঞ ভৃত্যের হাতে পাতলা ফালি ফালি মাংস রান্না না হইলে আপনার মুখে রুচিবে না?
“কামবিলাসিনী স্বৈরিণী আমার, এ সমস্ত ক্ষুদে দীর্ঘশ্বাসের দৌলতে আপনার আতরসমৃদ্ধ বক্ষটা ফুলিতেছে, ইহার আর কি অর্থ করিতে পারি? এই পুথিপড়া সঞ্চিত ভান-ভণিতা, আর এই নিরন্তর বিষাদ, এই অভিনয় কি দর্শকপ্রাণে করুণা উদ্রেকের ছল নয়? সত্য বলিতে কি, মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে আসল দুর্ভাগ্য কি বস্তু তাহা আপনাকে শিখাইয়া ছাড়ি।
“সুন্দরীতমা আমার, কাদায় আপনার পা আটকাইয়াছে আর বাষ্পে পরিপূর্ণ নেত্রের কুহেলিকা ফুঁড়িয়া আপনি আকাশপানে তাকাইয়া আছেন যেন রাজা বর মাগিতেছেন—আপনাকে দেখিলে নবকুমার ব্যাঙের কথা মনে পড়ে যে আদর্শ বর মাঙিয়াছিল। আপনি যদি এই নিরপরাধ কাষ্ঠরাজার নিকুচি করেন— আপনি ভালোই জানেন এক্ষণে আমিই সেই কাষ্ঠ—তবে বক হইতে সাবধান যে আপনাকে চিবাইবে, গিলিয়া খাইবে আর যখন ইচ্ছা প্রাণবধ করিবে।
“আমি কবি হইতে পারি তবে আপনি যত ভাবিতেছেন তত নির্বোধ নহি; আর এই মহামূল্য নাকিকান্না কাঁদিয়া কাঁদিয়া আমাকে যদি হামেশা এমন হয়রান করিতে থাকেন তো আপনার সহিত বন্যবিবির মতন ব্যবহার করিব, কিংবা খালি বোতলের মতন জানালার বাহিরে ছুঁড়িয়া মারিব।”
১২
লোকারণ্য
লোকসমুদ্রে স্নান করিবার প্রতিভা সকলের থাকে না; লোকারণ্যে শিহরণলাভ একটা শিল্প বটে; মানবজাতির ভাণ্ডার হইতে জীবনানন্দের পুলক কেবল তাহারাই নিংড়াইতে পারেন একান্ত দোলনায় থাকিতেই যাহাদের কানে কানে কোন পরীরাণী সাজপোশাক আর মুখোশে অনুরাগ, বদ্ধঘরে বিরাগ আর দূরযাত্রার আবেগটা ঢুকাইয়া দিয়াছিলেন।
লোকারণ্য, নির্জনতা: সৃষ্টিশক্তি আর উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী কবির দৃষ্টিতে সমান ও সমার্থক শব্দ। যিনি নির্জনতার মধ্যে লোকসমাগম ঘটাইতে জানেন না, ব্যস্ত লোকসমাগমের মধ্যস্থলে কি উপায়ে একা হইতে হয় তাহাও তিনি জানেন না।
এই অতুল সৌভাগ্যপুলকে আপ্লুত হন কবি, যিনি আপন ও পর দুই রূপেই সমান ব্যক্ত হইতে পারেন। যে সকল পথভ্রষ্ট আত্মা ঢুকিবার মতন পাত্র খুঁজিয়া বেড়াইতেছেন তাহাদের মতন তিনিও যখন ইচ্ছা যে কাহারও ব্যক্তিস্বরূপে প্রবেশ করিতে পারেন। শুদ্ধমাত্র তাঁহার চোখে পাত্র মাত্রেই শূন্যবিশেষ; আর তাঁহার কাছে কোন স্থান যদি নিতান্ত বন্ধ প্রতিভাত হয় তো কারণ স্থানটা কষ্ট করিয়া বেড়াইতে যাইবার উপযুক্ত হয় নাই।
এই সর্বজনীন সমাবেশে সোহবত করিতে করিতে নিঃসঙ্গ আর চিন্তাশীল পথিকমনে বিশেষ আসক্তি জন্মায়। যিনি অনায়াসে লোকারণ্যে একা হইয়া যান তিনি এই চরম পুলকের সন্ধান লাভ করেন—এই পুলকের স্বাদ হইতে কৌটাবন্দী স্বার্থপর আর শামুকের খোলসে কুলুপমারা কুঁড়ে চিরকালই বঞ্চিত। এই দুনিয়ায় যত বৃত্তি আছে আর পরিস্থিতির সুবাদে যত আনন্দ কি বেদনার মুখোমুখি তাহাকে হইতে হয় তাহার সবই তিনি আপন দেহে ধারণ করিতে পারেন।
এই অনির্বচনীয় পুলক যাহার বলে সকলই—কবিত্ব আর ঔদার্য—লভ্য, অদৃষ্টপূর্ব দৃষ্ট আর অজ্ঞাতপূর্ব জ্ঞাত হয় তাহার আর আত্মার এই পবিত্র গণিকাবৃত্তির তুলনায় লোকে যে বস্তুকে প্রেম বলিয়া থাকে তাহা বড়ই তুচ্ছ, বড়ই কৃশ আর বড়ই ভঙ্গুর পদার্থ।
মনুষ্য-সমাজের সুখী-সাধারণ্যে মধ্যে মধ্যে এই শিক্ষাটা আর কিছুর খাতিরে না হোক, কিছুক্ষণের জন্য হইলেও অন্তত তাহাদের আত্মপ্রসাদে ঘা দেওয়ার ওয়াস্তে, বিতরণ করা ভালো: জগতে তাহাদের এই সুখের তুলনায় ভালো সুখ আছে যে সুখ ঢের বড় মাপের, বড় সাধনার ফল। উপনিবেশের প্রতিষ্ঠাতৃবৃন্দ, জাতির নেতা, আর দুনিয়ার শেষমাথায় নির্বাসিত জীবন কাটানো ধর্মসাধক ও ধর্মপ্রচারকগণ নিঃসন্দেহে এই রহস্যমোড়া আবেগের স্বাদ কিছুটা পাইয়াছেন; আর আপন আপন প্রতিভার বরকতে গড়া বড় পরিবারের বক্ষদেশে বসিয়া তাঁহাদের নিশ্চয়ই মাঝেমধ্যে ঐ লোকেদের কথা স্মরণে উদিত হইলে হাসি পায় যাহারা এই বিপদসংকুল ভাগ্য আর নির্মল জীবনকে করুণার পাত্র জ্ঞান করেন।
তর্জমা: সলিমুল্লাহ খান