একুশের চেতনাবাহী সাহিত্যকর্ম ছড়িয়ে দিতে হবে : ইমদাদুল হক 

তাহনিয়া ইয়াসমিন প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২২, ০৯:২৯ পিএম
ছবি: সংবাদ প্রকাশ

অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন ছিল শনিবার (১২ মার্চ)। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একুশের গল্প ও উপন্যাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশীদ।

এছাড়া আলোচনা করেন নাসের রহমান, পাপড়ি রহমান ও স্বকৃত নোমান। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমদাদুল হক মিলন।

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, “মহান একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালির চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, রঙিন করে তুলেছিল। আর সেই চেতনা থেকে উপাদান নিয়েই লিখিত হয়েছে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক গল্প ও উপন্যাস। একুশের চেতনাবাহী তাদের সাহিত্যকর্মকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।”

বিকেলে আয়োজিত বইমেলার মূলমঞ্চে ‘একুশের গল্প ও উপন্যাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশীদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাসের রহমান, পাপড়ি রহমান এবং স্বকৃত নোমান।

প্রাবন্ধিক রফিকুর রশীদ বলেন, “সাংস্কৃতিক আন্দোলন কীভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হতে পারে, তার এক মহান দৃষ্টান্ত বাঙালির ভাষা আন্দোলন। ছাত্র, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে শুরু হলেও ভাষা আন্দোলন একসময় বাংলার আপামর জনসাধারণের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত হয়। একুশের ভাষা আন্দোলনের পরপরই এর চেতনা ও আবেগ-মথিত গল্প সংকলন প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলা সাহিত্যে ‘একুশের সাহিত্য’ নামে নতুন একটি ধারা সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরই মহান একুশের প্রেক্ষাপট ও চেতনাকে উপজীব্য করে লিখিত হচ্ছে নতুন নতুন গল্প ও সাহিত্য। এমনকি বায়ান্ন-পরবর্তীকালে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন কথাসাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাসেও বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে মহান একুশ। আমাদের কথাসাহিত্যিকগণ ৫২’র ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়কে যেমন তুলে এনেছেন, তেমনি একুশ পরবর্তী সময়ে একুশের প্রভাবকে তাঁদের গল্প ও উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন।”

আলোচকবৃন্দ বলেন, “ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির মনে ভাষার চেতনা দৃঢ় রূপ লাভ করে যা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে এবং এর প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়। অমর একুশ বিষয়ে রচিত গল্প ও উপন্যাসে সংঘবদ্ধ বাঙালির প্রতিবাদী চেতনা স্থান পেয়েছে। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমকালীন ও ভবিষ্যতের কথাসাহিত্যিকদের হাতে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক মহান সাহিত্য রচিত হবে-এ আশা আমরা করতেই পারি।”

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজের বই নিয়ে আলোচনা করেন পাপড়ি রহমান। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি সৈয়দ আহমদ আলী আজিজ, মিনা মাশরাফী এবং জায়েদ হোসাইন লাকী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জিনিয়া রুনা ও নুরুজ্জামান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এবং জিনিয়া জ্যোৎস্নার পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘জিনিয়া নৃত্যকলা একাডেমী’ এবং ফিফা চাকমার পরিচালনায় ‘আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর পরিবেশনা।

আর সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সালমা চৌধুরী, আবিদা রহমান সেতু, টুম্পা সমদ্দার, নকুল চন্দ্র দাস, আইয়ুব মোহাম্মদ খান এবং খালেদ মাহমুদ মুন্না। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন জয় প্রসাদ সিংহ রায় (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা) মো. বজরুল ইসলাম বিজু (কী-বোর্ড)।

বইমেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন বই। মেলার ২৬তম দিনে ছিল শিশুপ্রহর। এদিন নতুন বই এসেছে ৮০টি।

এদিকে আগামীকাল রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া : নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

এছাড়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন দেলওয়ার হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোফাকখারুল ইকবাল, মো. মিনহাজ উদ্দীন এবং শেখ আদনান ফাহাদ। সভাপতিত্ব করবেন আবেদ খান।