প্রতিবছরের মত এবারও অমর একুশে বইমেলায় তরুণ লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাই বেশি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা ও প্রবন্ধ গ্রন্থসহ সাহিত্যের সবক্ষেত্রেই তরুণ লেখকদের রয়েছে পদচারণা।
তবে তরুণ এসব লেখকদের লেখা প্রকাশ এতটা সহজ নয়। কারণ তাদের বই প্রকাশ করতে প্রকাশকরা সাধারণত আগ্রহী হন না বলে কিছুটা অভিযোগের সুরে তারা জানান।
এদিকে আবার তরুণ লেখকদের শত শত নতুন বই প্রকাশিত হলেও পাঠকদের মন কাড়তে পারে না অনেক বই বলেও মনে করেন অনেক প্রকাশকরা। তাই প্রকাশকদের পরামর্শ লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগের নিয়মিত পত্র-পত্রিকার লেখালেখি করা উচিত।
শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে তরুণ লেখক বোরহান আহমেদ রাকিবের ‘প্রথম উৎসর্গ’ বইটি। এই বইটি তার রচিত প্রথম বই। নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তিনি বইটি প্রকাশ করেছেন। দৌঁড়েছেন অনেক প্রকাশনলায়ে।
এ প্রসঙ্গে লেখক বোরহান আহমেদ রাকিব বলেন, “আমি লেখক হিসেবে এ বছরই আত্মপ্রকাশ করেছি। প্রথম দিকে ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিল না আমার কাছে। অনেক প্রকাশনালয়ে পান্ডুলিপি জমা দিয়েছি কিন্তু তারা আগ্রহ দেখায়নি, আবার অনেকে কেবল সময় দিয়েছেন। আমি মনে করি নতুন ও তরুণদের এই ঝুঁকি নিয়ে লিখে যেতে হবে।”
সাহিত্যদেশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে তরুণ কথাসাহিত্যিক সাইদুর রহমানের দুইটি বই। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বইপ্রকাশের বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখলে চলবে না। লেখা চালিয়ে যেতে হবে। আপনার প্রতিভা থাকলে একদিন তার সম্মান আপনি পাবেন। তাছাড়া আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে বন্ধু ও প্রিয়জনদের সমর্থন। আমার মনে হয় তাদের উৎসাহ একজন তরুণ লেখককে সব থেকে বেশি আগ্রহী করে তোলে।”
এছাড়া ‘টাঙ্গন’ থেকে প্রকাশ পেয়েছে নবীণ রম্য লেখক শফিক হাসানের একটি বই। বই প্রকাশের আগে তরুণ এই লেখকও পড়েছেন বিপাকে। পান্ডুলিপি জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকটি প্রকাশনালয়ে। কিন্তু তার বই প্রকাশ হয়নি।
শফিক হাসান বলেন, “লেখকবান্ধব প্রকাশক বাংলাদেশে নেই। তরুণ লেখকদের লেখা প্রকাশে বেশিরভাগ প্রকাশকের থাকে অনাগ্রহ। তরুণ যারা লিখছেন তাদের লেখা প্রকাশে এখন তরুণ প্রকাশকরায় এগিয়ে আসেন। আমি মনে করি যারা অভিজ্ঞ প্রকাশক তারা যদি আমাদের বই প্রকাশে আরও আগ্রহী হয়, তাহলে তরুণরা লিখতে উৎসাহিত হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘টাঙ্গন’ এর প্রকাশক অজয় কুমার রায় বলেন, “তরুণদের বই প্রকাশকালে আমরা বইয়ের কনটেন্টের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকি। তাছাড়া আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, লেখকের পরিচিতি। তরুণদের মিডিয়াতে কেমন পরিচিতি আছে সেটাও কিন্তু বিবেচ্য। কেননা আমাদের ব্যবসায় দিকটা দেখতে হলে এই বিষয় মাথায় রাখতে হয়।”
‘প্রতিভা’ প্রকাশনীর কর্ণধার মঈন মুরসালিন বলেন, “তরুণদের বই প্রকাশে প্রকাশকের একটা ব্যবসায়ী ঝুঁকি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমার প্রকশনালয় থেকে প্রতিবছরই তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ পাই। সেক্ষেত্রে আমি একটা বিষয় খেয়াল রাখি, সেটা হলো তরুণদের লেখার হাত, অর্থাৎ পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত লেখেন কিনা। লেখালেখির ধারাবাহিকতা না থাকলে আসলে বই প্রকাশ করে লাভ নেই। আর এর মধ্য দিয়ে তরুণ লেখকের লেখার মান ও তার প্রতি পাঠকের আগ্রহ জানা যায়।”
সাহিত্যদেশ প্রকাশনীর কর্ণধার শফিক সাইফুল বলেন, “তরুণ লেখকদের আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। শখের বসে একটা বই প্রকাশ করলেন, তারপর লেখালেখি বন্ধ। এটা মোটেও ভালো দিক নয় একজন লেখকের জন্য।”
‘পেন্ডুলাম’ প্রকাশনীর কর্ণধার রুম্মান তার্শফিক বলেন, “আমার মনে হয় তরুণদের লেখা প্রকাশে একটা বাড়তি খাটনি আছে। এজন্য প্রকাশকরা অনেক সময় বই প্রকাশ করতে চান না। তরুণ লেখকদের বাক্যগঠন, প্যারা নির্ধারণ এমনকি বিরামচিহ্নের ব্যবহার নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়, যেটা একজন অভিজ্ঞ লেখকের জন্য করতে হয় না। তাই প্রকাশকরা পিছিয়ে যায়।”