অমর একুশে বইমেলা জমজমাট হচ্ছে দর্শনার্থীদের পদচারণায়, তবে অনেকটা দর্শনার্থীশূন্য লিটল ম্যাগজিন চত্বর। শিল্পসাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে চলমান ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাধারা ও মতামত ব্যক্ত করার মুদ্রিত বাহনকে বলা হয় লিটল ম্যাগাজিন। এ ম্যাগাজিন অনেকটা অনিয়মিত এবং অবাণিজ্যিক। লিটল ম্যাগজিন চত্বরের ম্লানভাব নিয়ে কথা বলেছেন সম্পাদক ও প্রকাশক।
লিটল ম্যাগজিন সংক্ষেপে হচ্ছে লিটল ম্যাগ। এবারের বইমেলায় লিটল ম্যাগ জায়গা করে নিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে। গতবার মেলার পূর্বাংশে রমনা কালীমন্দিরের পেছনে স্থান হলেও পরে আন্দোলনের মুখে আগের জায়গায় ফিরে আসে লিটল ম্যাগ চত্বর। কারণ সে জায়গাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রকাশক-সম্পাদকরা। স্থান পরিবর্তন হলেও এবারও দর্শনার্থী কম লিটল ম্যাগ চত্বরে।
প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার দশম দিনে পাঠক, বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। তবে লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে দেখ যায়, প্রায় দর্শনার্থীশূন্য এই চত্বর। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অন্যান্য অংশে দর্শনার্থীদের আনাগোনা দেখা গেলেও লিটল ম্যাগ চত্বরে দেখা যায়নি। বিক্রেতারা তাই নিজেদের মধ্যে গল্পে-আড্ডায় ব্যস্ত।
এ বিষয়ে লিটল ম্যাগাজিন ‘মগ্নপাঠ’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক আহমেদ শিপলু বলেন, “গতানুগতিক ধারার বিপরীতে যারা মুক্তচিন্তায় ভিন্নধারায় কিছু লিখতে চায় তারাই মূলত এসব ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। লিটল ম্যাগজিন মূলত সমকালীন চিন্তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নতুন চিন্তাকে ধারণ করে। তাই অনেক সময়ই এ ধরনের লেখাগুলো স্রোতের প্রতিকূলে যায়। যে কারণে পাঠক চাহিদা কম থাকে।”
এ প্রসঙ্গে ‘দৃষ্টি’ এর সম্পাদক ও কবি বীরেন মুখার্জি বলেন, “অভিযোগ আছে লিটল ম্যাগ যারা চর্চা করেন তারা গোষ্ঠীভিত্তিক চর্চা করেন। যার কারণে অনেক সময় পাঠক বিমুখ হয়ে যায়। বর্তমানে লিটল ম্যাগজিন চর্চার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে ম্যাগজিন প্রকাশের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রকাশকদের বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে আমরা আশাবাদী আগামী দিনগুলোর জন্য।”
লিটল ম্যাগের পাঠক ও দর্শনার্থী কমে যাওয়ার করণ জানতে চাইলে ‘মাদুলি’ এর সম্পাদক ও কবি অরবিন্দু চক্রবর্তী বলেন, “লিটল ম্যাগজিনের একটা ম্লানভাব চলে এসেছে। এই ম্লান আবস্থার কারণ হতে পারে সেই উপযোগিতা কমে গেল কি না, সেটা নিয়ে ভাববার বিষয়। অথবা যারা কর্মী আছেন তারা লিটল ম্যাগের সংগ্রাম ও আন্দোলনের কথাটা মাথায় রাখেন কি না, এটা একটা প্রশ্ন। আমার বিশ্বাস ‘যখনই সংকট তখনই সম্ভাবনা’। সেই ভাবনা থেকেই আমারা কাজ করে যাচ্ছি।”
এদিকে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আজ মোট ১০৬টি নতুন বইমেলায় এসেছে। অমর একুশে বইমেলার দশমতম দিন পর্যন্ত মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৯৯৩টি।
নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে কবিতা ২৭, উপন্যাস ২৬, গল্প ১৪ ও প্রবন্ধ ৫টি, গবেষণা ও জীবনীগ্রন্থ ৪টি করে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক, বিজ্ঞান ও অনুবাদ ৩টি করে, ইতিহাসবিষয়ক ২টি এবং শিশুসাহিত্য, রচনাবলী, রাজনীতিবিষয়ক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক, অভিধান ও সায়েন্স ফিকশন একটি করে।