এটা কি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চল?
কমান্ডোর লুনি নিশ্চিত নন। এমন একটা জায়গায় তারা আছে, শত শত মাইলের মধ্যে বালু আর পাথুরে টিলা-পাহাড় ছাড়া কিচ্ছু নেই। পেছনে বাকি চারজন কমান্ডোসহ বালুতে পা টেনে টেনে হাঁটছেন তিনি। এমন কাজ আগে তারা কখনো করেনি। এই দলের প্রত্যেকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ডিউটি করেছে।
‘যুদ্ধ থেমে যাবারও খারাপ দিক আছে,’ সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ কমান্ডো লামার বলল। ইরাক আর আফগানিস্তানে অপারেশন করেছে অনেকগুলো।
‘অথচ আমাদেরকে এখন একটা পাথরখণ্ড টোকানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। অবমাননাকর।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল লামার। দুভার্গ্যরে ব্যাপার হলো, গতকাল তাদের ফ্লিটটা পশ্চিম-আফ্রিকার উপকূল দিয়ে যাচ্ছিল। নইলে অন্যদের কাজটা দেওয়া হতো।
‘বায়নোকুলার দিয়ে চারপাশটা দেখো,’ নির্দেশ দিলেন লুনি।
ড্রপের ঠিক আগমুহূর্তে লামার যখন বলেছিল, ‘স্যাড হিল সেমেট্রি,’ তার দিকে কটমট চোখে তাকিয়েছিলেন কমান্ডার। বিখ্যাত এক ওয়েস্টার্ন সিনেমায় এ রকম একটি বৃত্তাকারের গোরস্তানে তিনজন মারমুখী বন্দুকবাজ মুখোমুখি হয়েছিল।
‘অনেকের মতে এখানেই ছিল হারানো সভ্যতা আটলান্টিস,’ গর্ডন নামের এক কমান্ডো বলল দুরবিনে চোখ রেখে। খুব বই পড়ে সে। ‘প্লেটো তার বই টিমেয়াস ও ক্রিটিয়াসে এ কথা বলেছেন, আজ থেকে বারো হাজার বছর আগে এক রাতেই এই উন্নত সভ্যতা ভূমিকম্প আর সুনামিতে পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেকের ধারণা, আটলান্টিস ছিল খুবই অগ্রসর একটি সভ্যতা।’
লামার বিরক্ত হয়ে বায়নোকুলার নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে গেল।
‘প্লেটোর বর্ণনার সঙ্গে এ জায়গাটা পুরোপুরি মিলে যায়। এতটাই মিলে যায় যে চমকে ওঠার মতো।’
‘আমাদের অবজেক্ট হলো একটা অবজেক্ট খোঁজা!’ কমান্ডার কাটাকাটাভাবে বললেন। ‘ইতিহাস সাবজেক্টটা বন্ধ করো, বাবা। আমরা এখানে আটলান্টিসের সন্ধানে আসিনি।’
গর্ডন কাঁচুমাচু খেয়ে মাথার ওপরে সূর্যটা দেখল। তাদের টিমের প্রত্যেকের রয়েছে বছরের পর বছর ধরে মরুভূমিতে অপারেশন করার অভিজ্ঞতা। এটা তাদের জন্য মোটেও নতুন অভিজ্ঞতা নয়।
‘কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না,’ অনেকটা পথ এগোতেই হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল কাকো।
চার দিন আগে এটা প্রথম ধরা পড়েছিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে। এত ক্ষুদ্র একটি জিনিস পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ায় সহজে চিহ্নিত করা যায়নি। নাসার কেউ কেউ মনে করছে এটা প্রাকৃতিক কোনো কিছু নয়। বাকিরা অবশ্য এটাকে অ্যাস্টরয়েডের টুকরো ছাড়া আর কিছু ভাবছে না। দেখতে অনেকটা শুকনো পাতার মতো আকৃতি। লম্বায় সাড়ে আট ফুটের মতো, চওড়ায় তিন ফুটের বেশি হবে না। নাসা এর নাম দিয়েছে ‘অবজেক্ট’। এই খুদে অবজেক্টটার ট্র্যাজেক্টরি দেখে কম্পিউটার নিখুঁতভাবে বলে দিয়েছিল, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির রিখাট স্ট্রাকচার নামে পরিচিত জনবিরল এই অঞ্চলে বিধ্বস্ত হবে। কয়েক বছর আগে ল্যান্ডস্যাট-৭ স্যাটেলাইট পশ্চিম-আফ্রিকার মৌরিতানিয়ার ওয়াদানের কাছে মরুর বুকে খুঁজে পেয়েছে এটা। বৃত্তাকারের জায়গাটার ব্যস ৪৮ কিলোমিটারের বেশি। বড় বৃত্তটার ভেতরে আছে কমপক্ষে আরও তিনটি বৃত্ত। আর মাঝখানে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ব্যাসের বিশাল একটি বৃত্তাকার জায়গা। দেখতে অনেকটা শুটিং রেঞ্জের বুল্স-আইয়ের মতো। তবে মহাকাশ থেকে এটাকে মানুষের চোখের মতো দেখায় বলে ‘আই অব দ্য সাহারা’ নাম দেওয়া হয়েছে। ফ্লিট থেকে একটা চিনুক হেলিকপ্টার তাদের ড্রপ করছে সাহারার চোখের ঠিক মাঝখানে। কপ্টারটা এখন কয়েক শ মিটার দূরে ল্যান্ড করে আছে। কমান্ডোরা নিজেদের অত্যাধুনিক ইউনিফর্মের সঙ্গে লাগোয়া লং-রেঞ্জের বায়নোকুলারগুলো খুলে চোখের সামনে ধরল। তারা কেউই ইউনিফমের্র সঙ্গে থাকা পঁচিশ কেজির সরঞ্জাম নিয়ে আসেনি। দু-একটা দরকারি ডিভাইস আর একটা ফোল্ডেড স্ট্রেচার ছাড়া বাকি সবকিছু চিনুকেই রেখে এসেছে।
‘একটা আট ফুট লম্বা পাথুরে অবজেক্ট,’ বলল লামার। ‘মহাশূন্য থেকে পড়েছে, প্রচণ্ড ইম্প্যাক্টের কারণে বালুতে ডুবে গেছে ওটা।’
কমান্ডার কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। লামার ঠিকই বলেছে। গত রাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর অবজেক্টটার গায়ে আগুন ধরে গেলেও হুট করেই আবার সেই আগুন নিভে যায়। ‘এখানেই আছে ওটা,’ দৃঢ়ভাবে বললেন কমান্ডার। বহু দূরে বালুর মধ্যে কিছু পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আকারে বেশ ছোট। ‘ওই পাথরগুলো ভালো করে দেখো। অবজেক্টটা আট ফুট লম্বা।’
টিমের চারজন এগিয়ে গেল সেদিকে। এখানকার পাথরগুলোর রং আর টেক্সচার প্রায় একই রকম। অবজেক্টটা খুব সহজেই চোখে পড়ার কথা।
উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে গর্ডনের আওয়াজটা ভেসে এলো, ‘পেয়েছি!’
টিমের বাকিরা সেখানে ছুটে যেতেই গর্জে উঠলেন কমান্ডার, ‘কেউ কাছে যাবে না! আগে পিআরডি ব্যবহার করো!’
লোবো নামের এক হিস্প্যানিক পার্সোনাল রেডিয়েশন ডিটেক্টরটা সচল করে অবজেক্টটার কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখল। ‘ক্লিয়ার, স্যার।’
গভীর করে শ্বাস নিলেন কমান্ডার। ‘মাস্ক পরো সবাই!’ নিজেও পরে ফেললেন গলায় ঝোলানো কালো রঙের বায়োহ্যাজার্ড মাস্কটা।
মহাশূন্য থেকে পতিত যেকোনো অবজেক্টই অজ্ঞাত ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসতে পারে। এমনও হতে পারে এই অজ্ঞাত জীবাণু বিনাশ করে দিতে পারে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করতে থাকা প্রায় সব প্রাণিকুল!
অবজেক্টটা বালুর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ডুবে আছে। একটা এক্স-রে ক্যামেরা দিয়ে ওটা স্ক্যান করল লামার। ‘ভেতরটা ফাঁপা! সম্ভবত কিছু আছে!’
‘দেখে তো মনে হচ্ছে পেট্রিফায়েড উড!’ বিস্ময়ে বলে উঠল গর্ডন। ‘মাটি দিয়ে ভর্তি হবে নিশ্চয়ই।’
ভুরু কুঁচকে গেল কমান্ডারের। লাখ লাখ বছর মাটির নিচে চাপা পড়ে গাছ পাথর হয়ে যায়। এ ধরনের গাছ পাথরের ভেতরটা ফাঁপা থাকে। মাটির নিচে থাকে বলে সেই ফাঁপা জায়গাটায় মাটি থাকা স্বাভাবিক। ‘এটা যদি গাছ পাথর হয়ে থাকে, তাহলে তো খবরটা এক্ষুনি বিগবয়দের জানানো দরকার,’ কমান্ডারের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস।
তাদের দলের সবাই এখন আর এই কাজটাকে পাথর কুড়ানো বলে মনে করছে না। মহাকাশ থেকে পেট্রিফায়েড উড পৃথিবীতে এসে পড়ার মানে, মহাকাশের কোথাও গাছ আছে! বর্হিজীব আছে! ঐতিহাসিক ঘটনা!
‘দয়া করে মুখ বন্ধ রাখো সবাই, আমি এখন স্ট্রিমিংয়ে যাচ্ছি।’ কমান্ডারের কাছে স্যাটফোন আছে, মাথার হেলমেটে লাগানো আছে একটি ক্যামেরা। ‘কন্ট্রোল রুম, অবজেক্টটা পেয়েছি। আমি আবারও বলছি, অবজেক্টটা পেয়েছি!’ উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন তিনি। ‘আমাদের ধারণা ওটা পেট্রিফায়েড উড!’
‘মমি! ভেতরে একটা মমি আছে!’ লামার বলে উঠল ডিপ-স্ক্যান করার পর।
বজ্রাহত হলো সবাই।
‘কী বলছ তুমি?’ চেঁচিয়ে বললেন কমান্ডার।
‘স্যার, আমি নিশ্চিত, ভেতরে একটা মমি আছে।’
‘কার মমি? কিসের মমি?’
‘হ্যালো? হ্যালো? হ্যালো?’ কমান্ডারের ভুরু কুঁচকে গেল। ‘স্যাটফোন কাজ করছে না।’ কেউ কিছু বলার আগেই তিনি আবার বললেন, ‘সমস্যা নেই, স্পেসিমেনটা নিয়ে এক্ষুনি চলে যাব আমরা। জলদি করো।’
চারজন কমান্ডো অবজেক্টটা বালু থেকে দ্রুত তুলে শুইয়ে দিল, ধারণার চেয়েও বেশি ভারী ওটা। সঙ্গে করে আনা ফোল্ডিং স্ট্রেচারে তুলে ফেলল ওটা, রওনা দিল চিনুকের দিকে। সম্ভবত কয়েক পা এগিয়েছে, অমনি প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল চারপাশ। স্ট্রেচারটা ফেলে দিয়ে বালুতে শুয়ে পড়ল সবাই। রক্তহিম করা একটি দৃশ্য দেখতে পেল চোখের সামনে।
কয়েক শ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা চিনুকটার সামনের দিক ধ্বংস হয়ে গেছে!
‘পাইলট! কো-পাইলট...!’ লামারের কণ্ঠ ধরে এলো।
‘কোনো মিসাইল না তো? নাকি ড্রোন হামলা?’ কাকোর কণ্ঠটা ভয়ার্ত শোনাল।
‘একটা অবজেক্ট পড়েছে ওটার ওপরে!’ বললেন কমান্ডার। ‘ওই যে, দেখো!’
চিনুকের কাছে দুটো অবজেক্ট বালুতে ঢুকে আছে, সেগুলোর তীক্ষè মাথা বের হয়ে আছে এপিটাফের মতো!
‘দুনিয়ার এত জায়গা থাকতে সাহারার চোখে কেন পড়ছে অবজেক্টগুলো?’ সন্দেহের সুরে বলে উঠল গর্ডন।
কমান্ডার লুনি কিছুই বুঝতে পারছেন না।
‘অশুভ কিছু মনে হচ্ছে আমার কাছে,’ লোবো বলল, প্রচণ্ড কুসংস্কারগ্রস্ত সে। তার ধারণা, গিরগিটির চামড়া দিয়ে বানানো হাতে যে ব্র্রেসলেটটা পরে আছে, ওটা তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করে।
‘ওগুলো পাথর...গাছ পাথর,’ বললেন কমান্ডার। ‘আর এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা।’
‘ওগুলো যদি অ্যাস্টরয়েডের টুকরো হয় তাহলে সব কটি এক রকম কেন হবে? পড়ছেও একই জায়গায়!’ কাকো মেনে নিতে পারল না। ‘কমিউনিকেশন্সও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে!’
‘এসব ভাবা বন্ধ করো,’ কমান্ডার মাটি থেকে উঠে বললেন। ‘সমস্যা নেই, একটা রেসকিউ টিম পাঠাবে কন্ট্রোল রুম, তারা তো জানেই আমরা এখানে আছি।’
রোদের হাত হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বালিয়াড়ির দিকে তাকালেন কমান্ডার। দুই শ গজ দূরে পাঁচ-ছয় ফিট উঁচু কিছু পাথরের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারা সবাই সেখানে গিয়ে পাথরগুলোর গায়ে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
দুই ঘণ্টা পরও কোনো রেসকিউ টিম এলো না। বরং নয়টি আগুনের বিন্দু দেখতে পেল আকাশে। তারপর নিভে গেল আগুন, প্রচণ্ড শব্দে সাহারার চোখে আছড়ে পড়ল নয়টি অবজেক্ট।
‘প্রথমে একটা, তারপর তিনটা...এখন পড়েছে নয়টা!’ ভড়কে যাওয়া কণ্ঠ কাকোর। ‘এরপর যদি একাশিটা পড়ে আমি অবাক হব না!’
‘তুমি খামোখা—’ কমান্ডার লুনির কথাটা শেষ হওয়ার আগেই একটা নয়, দুটো নয়, অনেকগুলো আগুনের বিন্দু দেখা গেল আকাশে।
‘একাশিটাই হবে!’ কাকো বলল।
তাদের থেকে শত শত মিটার দূরে, চারপাশজুড়ে একের পর এক অবজেক্ট আছড়ে পড়ল মহাকাশ থেকে।
‘এরপর পড়বে...’ হিসেব করতে বেগ পেল কাকো।
৬৫৬১টা! কমান্ডার লুনি অবশ্য দ্রুত হিসাবটা করতে পারল মনে মনে। স্কুলে তাকে জীবন্ত ক্যালকুলেটর বলা হতো।
‘এখন বুঝতে পারছি,’ প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল কাকো। ‘আমাদের সব স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে গেছে অবজেক্টের ইম্প্যাক্টে।’
‘ফ্লিটটাও!’ গর্ডন যোগ করল।
আকাশের দিকে তাকালেন কমান্ডার। হাজার হাজার আগুনের বিন্দু ধেয়ে আসছে! বুকে ক্রুশ আঁকলেন তিনি। আরমাগেডন! তার কাছে আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। মহাপ্রলয়ের মতো আঘাত হানতে লাগল অবজেক্টগুলো। এপিটাফের মতো মৃত্যুর চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল বিরান এই সাহারার বুকে।
কমান্ডোরা একেবারে ভেঙে পড়ল, থরথর করে কাঁপছে সবাই। লুনি পাথর হয়ে গেছেন, কিছুই বলছেন না। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। সাহারার চোখে নেমে এলো এক বিভীষিকাময় রাত। আর তখন মনে হলো, ওপর থেকে বুঝি নিভে যাওয়া কোটি কোটি ফানুস পড়ছে।
এই প্রলয় থেমে গেল মাঝরাতে। লামার বিড়বিড় করে প্রলাপ বকছে। গর্ডন কাঁদছে নিঃশব্দে।
‘এলিয়েনদের কফিন এগুলো। মহাশূন্যে তারা ছেড়ে দিয়েছিল...না জানি কত হাজার-লক্ষ বছর আগে!’ কাকো বলল। তার কথার কোনো জবাব দিল না কেউ।
কমান্ডার লুনি চারপাশে তাকালেন। লামারের বলা কথাটাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে—সাহারার চোখ হয়ে উঠেছে গোরস্তান! সম্ভবত সারা দুনিয়াতেই আছড়ে পড়ছে শতকোটি অবজেক্ট। চারপাশে হাজার-লক্ষ অবজেক্ট বালুতে গেঁথে এপিটাফের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ সব সময়ই আশঙ্কা করেছিল জীবিত এলিয়েনদের আক্রমণ নিয়ে। কে ভেবেছিল, ওদের কফিনই পৃথিবী বিনাশ করে দেবে!
ভোরের দিকে মৃতপ্রায় সাহারা যেন সশব্দে জেগে উঠল। কট কট করে শব্দ হতে লাগল চারপাশজুড়ে। ক্রমশ জোরালো হলো সেই অপার্থিব শব্দ। কমান্ডার লুনি দেখতে পেল অবজেক্টগুলো মাঝখান থেকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে! ভেতর থেকে আঠালো স্বচ্ছ পদার্থ মাখা নগ্ন শরীরের যে জীবগুলো বেরিয়ে আসছে, তারা মানুষের মতোই!
ভুল ভেবেছিল তারা। কফিন নয়, অবজেক্টগুলো আসলে বহির্জীবদের কোকুন!
লুনির চোখ বেয়ে এই প্রথম অশ্রু ঝরল। তার ষোলো বছরের মেয়ের জন্য। মমতাময়ী স্ত্রীর জন্য। সঙ্গে থাকা সঙ্গীদের জন্য। এই পৃথিবীর জন্য!