‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ পেলেন নুসরাত নুসিন ও নূরে জান্নাত

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে পাক্ষিক ‘অনন্যা’ সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরে অন্যতম বড় সম্মাননা ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪৩১’ পেলেন কবি নুসরাত নুসিন ও লেখক নূরে জান্নাত। ‘সুলতার কোকিল উড়ে যায়’ পাণ্ডুলিপির জন্য কবিতায় নুসরাত নুসিন এবং ‘পথেরও পথ নেই’ ছোটগল্প সংকলনের জন্য কথাসাহিত্যে পুরস্কার পেলেন নূরে জান্নাত।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে দুই নবীন সাহিত্যিকের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সম্মাননা চেক (৫০ হাজার টাকা) তুলে দেন পাক্ষিক ‘অনন্যা’ সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। এ সময় তাদের ফুলের শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।

‘অনন্যা’ সম্পাদকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সাহিত্যকর্ম ও সৃজনশীলতা নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান এবং কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার তাপস কুমার দত্ত। শুরুতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে তার নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

তাসমিমা হোসেন বলেন, “নবীন সাহিত্যিকদের সাহিত্য পড়লে বোঝা যায় তারা মানুষ নিয়ে ভাবছে, পরিবেশ নিয়ে ভাবছে। রাজনীতি, দল, গোষ্ঠিসহ নানা কারণে সমাজে রাষ্ট্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বেশি বৈষম্যের শিকার হয় নারী। আর বৈষম্যের শিকার নারী সাহিত্যিকদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে পাক্ষিক ‘অনন্যা’। ‘অনন্যা’ কোনো দলের না, কোনো গোষ্ঠির না, ‘অনন্যা’ সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করে।”

ঝর্না রহমান বলেন, “নবীন নারী সাহিত্যকদের সম্মাননা প্রদান করে ‘অনন্যা’ তাদের উৎসাহিত করেছে। ‘অনন্যা’র মতো সৃজনশীলতাকে জিইয়ে রাখতে পারলে সাহিত্যপ্রবাহ থামবে না।” পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে ঝর্না রহমান বলেন, “তাদের শব্দ চয়ন, শব্দ নিয়ে খেলা দেখলে মনে হয় তারা সাহিত্যের গভীরে গিয়ে উপলব্ধি করতে পারে।”

কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক বলেন, “নুসরাত নুসিন ও নূরে জান্নাতের লেখায়, কথায় প্রমাণিত হয় যে, লেখার ক্ষেত্রে গ্রাম কোনো বাধা নয়। বরং গ্রামের পরিবেশ লেখার অনুসঙ্গ হয়ে ধরা দেয়। তাদের লেখা বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে।”

পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করে নুসরাত নুসিন বলেন, “সমাজে নারী সাহিত্যিকদের বিকশিত হওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ‘অনন্যা’ পুরস্কার ও সাম্মননা আমাকে বিকশিত ও উৎসাহিত করবে।” নূরে জান্নাত বলেন, “যখন পুরস্কার পাই তখন যেমন আনন্দ হচ্ছিল, তেমনি ভয়ও হচ্ছিল। কারণ, অনেক সময় পুরস্কার পাওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পাই না।”

বক্তব্য রাখছেন পাক্ষিক ‘অনন্যা’ সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষস্থানীয় নারীভিত্তিক ম্যাগাজিন পাক্ষিক ‘অনন্যা’। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিগত ১৯৯৩ সাল (১৪০১) থেকে প্রতি বছর ম্যাগাজিনটির পক্ষ থেকে ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করা হয়ে আসছে। বিভিন্ন শাখায় দশজন করে আলোচিত ও আলোকিত কৃতী নারীকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। চলতি বছরে দুই নবীন সাহিত্যিককে এ পুরস্কার দেয়া হলো।

নুসরাত নুসিন
কবি নুসরাতের জন্ম ১৯৯০ সালের ২১ নভেম্বর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহীতে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এমফিল গবেষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গবেষণার বিষয়বস্তু ‘কাইয়ুম চৌধুরী ও সমরজিৎ রায় চৌধুরীর চিত্রকলায় লোক-ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ’। পেশাগত জীবনে নুসরাত নুসিন ঢাকা আর্ট কলেজে সাহিত্যের শিক্ষক।

গ্রামে বেড়ে ওঠার কারণে প্রকৃতির সান্নিধ্য তাকে কবিতা লিখতে প্রথম প্রভাবিত করেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন কবিতা। প্রথম পাণ্ডুলিপি ‘দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস’ এর জন্য জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০১৭ লাভ করেন। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নাম ‘কামনাফলের দিকে’। ২০২২ সালে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবি হিসেবে ভারতের কলকাতা থেকে আদম সম্মাননা লাভ করেন।

নূরে জান্নাত
কথাসাহিত্যিক নূরে জান্নাতের জন্ম ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধীতপুর কানু গ্রামে। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখেছেন। কল্প-সৃজন ভেলায় ভেসে ভেসে তিনি কথাসাহিত্যের প্রবহমান নদীতে প্রবেশে করেন। তার ছোটগল্প সংকলন ‘পথেরও পথ নেই’ প্রশংসিত হয়েছে।