আগুনে পুড়ে গেলে কী করবেন তা বুঝে উঠতেই দেরি হয়ে যায়। ছুটাছুটি করেও কোন উপায় মেলে না। অথচ প্রাথমিক কিছু ব্যবস্থা নিলেই অগ্নিকাণ্ডের পুড়ে যাওয়ার ক্ষত অনেকটাই কমানো সম্ভব। অগ্নিকাণ্ডে শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিন। কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ-এনএইচএস-ও কিছু পরামর্শের কথা জানিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই যে ব্যবস্থা নিতে হবে তাই জানাব এই আয়োজনে_
আগুনে পোড়ার প্রথম আধাঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে রোগীর শরীরের পোড়া স্থানে প্রচুর পানি ঢালার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি'র সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি। তিনি বলেন, "শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। যেখানে ২০% পুড়ে যেত সেখানে হয়তো ১৫ বা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে।"
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পোড়া জায়গায় অন্তত ২০ মিনিট ধুয়ে নিতে হবে। এতে পুড়ে যাওয়া অংশে ক্ষতি কমানো সম্ভব।
ভুলেও বরফ বা বরফ শীতল পানি কিংবা কোন ধরণের ক্রিম ও তৈলাক্ত পদার্থ পোড়া স্থানে দেওয়া যাবে না।
পানি ঢালার পর রোগীর শরীর গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন হাইপোথারমিয়া না হয়। রোগীকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশে কোনও ধরণের কাপড় না থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে পরিহিত কাপড় ও গহনা যত দ্রুত সম্ভব খুলে ফেলুন।
শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপি কিংবা ডায়াপার থাকলে খুলে ফেলুন।
পোড়া চামড়া বা পেশীর সঙ্গে কোন ধাতব পদার্থ বা কাপড়ের টুকরো আটকে গেলে তা সরানোর চেষ্টা করবেন না। ক্ষত বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নেওয়া হলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
ডাক্তাররা জানান, প্রথমত ২৪ ঘণ্টায় রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত স্যালাইন দেওয়া যায়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় হলে ৩ থেকে ৪ লিটারের বেশি স্যালাইন দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অনেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে টুথপেস্ট, লবণ, ডিমের সাদা অংশ দেন। যা মোটেও ঠিক নয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে জীবাণুমুক্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পোড়া স্থান সংক্রমণের শঙ্কা থাকে।
আগুনে মুখ কিংবা চোখ পুড়ে যায় তাহলে রোগীকে যতক্ষণ সম্ভব সোজা করে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে ফোস্কা পড়া বা ফুলে যাওয়া কমে যায়।
পোড়া রোগীকে যতটা সম্ভব বেশি করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। স্যালাইন দেয়া সম্ভব না হলে মুখে অন্তত স্যালাইন, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।