ঘুম থেকে উঠেই টিভিতে কার্টুন দেখার জন্য বায়না শুরু করে দেয় দৃশ্য। না দিলেই চিৎকার, কান্নাকাটি। সেই একই সমস্যা খাওয়ার সময়ও। এমনিতে খাওয়া নিয়ে ছেলের রাজ্যের টালবাহানা। কিন্তু টিভিতে কার্টুন চালিয়ে খেতে বসালেই দিব্যি খেয়ে নেয়। তাই দৃশ্যকে খাওয়াতে বসে রীতা টিভির শরণাপন্ন হয়।
একই অবস্থা মাইশার। ওর বয়স মাত্র আট। সারাক্ষণ টিভি দেখতে দেখতে এই বয়সেই চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা বসে গেছে। স্কুল থেকে ফিরে কোনোরকম জামাকাপড় বদলে টিভি নিয়ে বসে পড়ে। যতক্ষণ না ওর প্রিয় অনুষ্ঠান শেষ হবে, ততক্ষণ টিভির সামনে থেকে একটুও নড়বে না। বাবা-মায়ের নিষেধেও কাজ হয় না।
১৩ বছরের রিকির আবার রেসলিংয়ের নেশা সাংঘাতিক। ও নাকি বড় হয়ে ফাইটার হবে। সারাক্ষণ টিভিতে মারপিটের শো দেখে যাচ্ছে। পড়াশোনায় মন নেই। পড়তে বসেও মারপিটের কথা মাথায় ঘোরে। ঘুমের মধ্যেও এসব স্বপ্ন দেখে। ঘুষিও চালায়। এরজন্য অনেক বকাও শুনেছে। তাতে কিছু যায় আসে না ওর। টিভির নেশা কিছুতেই কমে না।
এরকম ছবি প্রায় ঘরে ঘরেই দেখা যায়। কীভাবে টেলিভিশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সন্তানকে দূরে রাখবেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান দিনা দিচ্ছেন কিছু পরামর্শ।
১. অনেকেই মনে করেন এটা ছোটখাট সমস্যা, বড় হলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা-মা হিসেবে শিশুর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আপনার। তাই নিয়ন্ত্রণ আপনাকেই করতে হবে। শিশু কতক্ষণ টিভি দেখবে, টিভিতে কোন অনুষ্ঠান দেখবে, আপনার সন্তানের ওপর তার কী প্রভাব পড়বে, এগুলো ভাবতে হবে আপনাকেই। ছোট থেকে যদি শিশুকে নিয়ন্ত্রণ না করেন তাহলে শিশু যত বড় হবে ততই এই নেশা বেড়ে যাবে।
২. শিশুকে টিভি দেখতে একেবারে বারণ করবেন না। এতে ওর জিদ আরও বাড়বে। টিভি দেখা নিয়ে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করুন। শিশুর টিভি দেখার সময় কখন কখন এবং কতটা তা তাকে বুঝিয়ে বলুন।
৩. রাত জেগে টিভি দেখতে দেবেন না। হোমওয়ার্ক না করে টিভি দেখতে দেবেন না। ছুটির দিনগুলো ছাড়া এই নিয়মের যেন ব্যতিক্রম না হয় তা খেয়াল রাখুন।
৪. শিশুর ঘরে টেলিভিশন রাখবেন না। এমনকি আপনাদের শোওয়ার ঘরেও রাখবেন না। ড্রয়িং রুমে টিভি রাখুন।
৫. শিশুর সঙ্গে বসে মাঝে মাঝে ওর পছন্দের অনুষ্ঠান দেখুন। শিশুকে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে উৎসাহ দিন। এসব অনুষ্ঠান একসঙ্গে বসে দেখে, তা নিয়ে শিশুর সঙ্গে আলোচনা করুন।
৬. টেলিভিশনে এমন অনুষ্ঠান শিশুকে দেখতে উদ্বুদ্ধ করুন যেগুলো ওকে একটু ভাবতে, চিন্তা করতে, নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করবে।
৭. শিশু যেন টিভি মানেই শুধু কার্টুন না ভাবে। টেলিভিশনের মাধ্যমে ওরা বাইরের জগতের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারে। ট্রাভেলিং, অ্যানিমেল ওয়ার্ল্ডের মতো অনেক চ্যানেল আছে যেগুলো মনের পরিধিটাকে আর একটু বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে, শিশুকে সেগুলো দেখান।
৮. অনেক সময় বাবা-মায়েরাই ব্যস্ততার কারণে শিশুদের টিভি দেখতে উৎসাহ দেন। এতে শিশুর দেখার নেশা বাড়ে। তাই এইরকম পরিস্থিতিতে টেলিভিশন না দেখতে দিয়ে সন্তানকে অন্যান্য সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন।
৯. শিশুকে ভালো ভালো বই কিনে দিন, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, ফুটবল, ছবি আঁকা, নাচ, গান—যা ওর পছন্দ তাতে উৎসাহ দিন। এতে ওর টিভির আসক্তি কমবে।
১০. শিশু বাবা-মাকে দেখেই শেখে। তাই ওর সামনে আপনারাও অনবরত টিভি নিয়ে পড়ে থাকবেন না।