মহররম মাসের ১০ তারিখ হচ্ছে আশুরা। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য বিশেষ ফজিলতের দিন এটি। নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আজকারের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনটি পালন করবেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, পবিত্র আশুরাতেই পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও অবনমন ঘটেছিল এই আশুরায়। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রারম্ভ ও বন্যাবস্থার সমাপ্তি হয়েছিল আশুরার দিনেই।
হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লামের সমুদ্রপথের ধাবমান রওনা ও এর তাওয়াক্কুল যাত্রায় সময় পবিত্র আশুরার দিনই বেছে নেওয়া হয়েছিল। আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরার সময়ই কিয়ামত হওয়ার সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এই দিনে তিনি রোজা রাখতেন এবং বিনম্র থাকতেন। (তাফসিরে তাবারি, ইবনে জারির)।
ইসলাম ধর্মের বর্ণনা অনুযায়ী এই দিনটির ফজিলত অনেক। পবিত্র কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯, তাওবা, আয়াত: ৩৬)।
এই আয়াতে ‘অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই ৪ মাসকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)।
হাদিস শরিফেও মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
হিজরি বছরের হিসেব মতে ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে আশুরার শুভক্ষণ, যা শুক্রবার সন্ধ্যা তথা সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
পবিত্র আশুরার ফজিলত
সব নবী রাসুল এই পবিত্র আশুরার দিনটিতে রোজা রাখেন। তাই আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নাত। মহানবী (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি মহররমের ৯-১০ অথবা ১০-১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়।
হজরত কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)।
উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা.) বলেন, “রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪টি কাজ কখনো পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, আইয়ামে বিদের রোজা তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা এবং ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের ব্যয় বৃদ্ধি করবে, ভালো খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবে; আল্লাহ সারা বছর তার প্রাচুর্য বাড়িয়ে দেবেন।’ (মিশকাত: ১৭০; ফয়জুল কালাম: ৫০১, পৃষ্ঠা ৩৪৯; বায়হাকি ও রাজিন)।
আশুরার দিন ও মহররম মাসজুড়ে বেশি তাওবা-ইসতেগফার করার ফজিলত রয়েছে। এই মাসের বিশেষ মুহূর্তে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে রয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহররম হলো আল্লাহ তাআলার (কাছে একটি মর্যাদার) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি)
দ্বীন ও ইসলামের কল্যাণে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু জীবন থেকে আত্মত্যাগের শিক্ষা নেওয়াও সব মুসলমানের জন্য জরুরি। হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঈমানি চেতনা জাগ্রত হলে ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয় আসবে।
পবিত্র আশুরা দিন রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্যে ফজিলত রয়েছে। এই দিন নিজে রোজা রাখুন এবং অন্য রোজাদারদের ইফতার করান। এছাড়া দান-সাদাকাহ করা, গরিবদেরকে পানাহার করানোর মধ্যেও ফজিলত রয়েছে।