বর্ষাকালের রিমঝিম বৃষ্টিতে কেউ হয়তো মন ভেজাচ্ছেন। আবার কেউ ভেসে যাচ্ছেন বন্যায়। একই দেশের দুই ধরনের চিত্র। প্রচণ্ড তাপদাহ শেষে বর্ষার আমেজে মন ভেজে একাংশের। বর্ষার ধারায় নেচে গেয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল মন। কিন্তু এই বর্ষাতেই আবার ডুবে যাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের মানুষে জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ।
দেশের অধিকাংশ জেলায় এখন ভয়াবহ বন্যা। অনবরত বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। যার দরুন তলিয়ে গেছে দেশের নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য বসতবাড়ি। অসংখ্য মানুষের দিন কাটছে পানির নিচে। অনাহার আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে আঁকড়ে ধরছে রোগবালাইও।
বন্যা হচ্ছে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ কিছু অঞ্চলের জন্য় প্রতিবছরই অবধারিত। কিন্তু এই বছর বন্যার চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের একাংশ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। যা স্বাস্থ্য সুরক্ষা আর জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্য়া হলে আমাদের করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে জানুন এই আয়োজনে।
বন্যার পানিতে বর্জ্য পদার্থ মিশে একাকার হয়ে যায়। তাই এই সময় ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, পেটের পীড়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস ও চর্মরোগসহ নানা রোগ হতে পারে। এর জন্য় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানি ভালোমতো ফুটিয়ে পান করতে হবে। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল ডুবে গেলে এক কলস পানিতে চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে তা টিউবওয়েলের ভেতরে ঢেলে দিন। আধা ঘণ্টা পর একটানা চেপে পানি বের করে নিন। এরপর সেই পানি পান করার উপযোগী হবে। এছাড়াও টানা একঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে নিলেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে। সেই পানি ৩০ মিনিট ফুটিয়ে এরপর পান করুন।
ফোটানো পানি পানের ব্যবস্থা না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতি দেড় লিটার খাওয়ার পানিতে ৭.৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালো ট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। পানি বিশুদ্ধ হবে।
এছাড়া পানির ট্যাংকিতে প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার এক ঘণ্টা রেখে দিলেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে।
যেকোনো কিছু খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। টয়লেট থেকে ফিরেও সাবান ব্যবহার করুন। ডায়রিয়া শুরু হলে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। দুই বছরের কম শিশুকে ১০-১২ চা চামচ এবং ২-১০ বছরের শিশুকে অন্তত ২০ চা চামচ খাওয়ার স্যালাইন দিন। খাওয়ার স্যালাইন না পেলে লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়ান।
খাওয়ার স্যালাইন না পেলে ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন। শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না। বমি থাকলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেতে হবে।
বন্যায় খাবার সংকট দেখা যায়। এই সময় রান্নার ব্যবস্থা থাকে না। কোনোমতো কিছু খেয়ে বেঁচে থাকাটাই বড় হয়ে যায়। তাই এই সময় খিচুড়ি হতে পারে আদর্শ খাবার। কম ঝামেলায় এটি রান্না করা যায়। পেটও ভরা থাকবে অনেকক্ষণ।
খাবার প্লেট অবশ্যই সাবান ও নিরাপদ পানি দিয়ে ধুতে হবে। স্বাভাবিক পানিতে প্লেট বা রান্নার পাত্র ধুয়ে নিন। এরপর ফোটানো পানি দিয়েও ধুয়ে নিন। এতে রোগজীবাণু থাকবে না।
বন্যায় মলত্যাগের সমস্যাতেও পড়তে হয়। যদিও সব জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবু যেখানে-সেখানে মলত্যাগ করা ঠিক হবে না। এটি আপনার জন্যও ক্ষতিকর হবে। পেটের অসুখ বেড়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করুন। যেখানে পরিবারের সবাই মলত্যাগ করতে পারবেন। মলত্যাগের সময় খালি পায়ে থাকা যাবে না। কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মলত্যাগের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
বন্যার সময় বিদ্যুতের লাইন পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া পানিতে ডুবে কিংবা সাপের কামড়ে প্রাণনাশের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই এই সময় সাবধান থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক লাইনের নিচ দিয়ে নৌকা চালানো যাবে না। যথাসম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
বন্যার সময় বীজতলা গেলে নানানভাবে চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা জানুন। কলাগাছের ভেলা বানিয়ে সেই ভেলার ওপর কাদামাটির প্রলেপ দিয়ে বীজ ছিটিয়ে দিন। বীজতলায় চারা থাকলে তা মাটিসহ তুলে উঁচু স্থানে নিয়ে যান।
বন্যার শঙ্কা থাকলে গবাদিপশুকে টিকা দিয়ে নিতে হবে। বন্যায় যদি কোনো গবাদিপশুর প্রাণহানি হয়, তবে তাকে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। মাটিতে পুঁতে ফেলুন।