মনে কত বাসনা নিয়ে কত শত দিন পার করলেন। কতজনের কাছে মনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন। প্রতিশ্রুতিও পেলেন। কিন্তু কোনো আশা পূরণ হলো না, কেন? আবার ঈর্ষণীয় সফলতার পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটিকে দেখে চিন্তা করছেন, কোন যোগ্যতা বলে সে এমনটা করছে! মাথা চুলকিয়েও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তাহলে উপায়!
মনের আশা পূরণে বা সফলতা অর্জনে সহায়ক একটা যোগ্যতার কথা বলে দিচ্ছি। সেটা হলো, প্রভাবিত করার কৌশল। এই কৌশলই আপনাকে প্রতিশ্রুতি আদায়ে যথেষ্ট যোগ্য করে তুলবে। এখন এই কৌশল অর্জনে আপনাকে কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে।
মায়ের কাছে এক গ্লাস পানি চাইলেন। মা চটজলদি আপনাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। এর বিনিময়ে মায়ের কিন্তু কিছুই চাওয়ার নেই। এখন চিন্তা করুন, আপনার সহকর্মী বা ব্যবসায়ী কোনো অংশীদারকে আপনার স্বার্থে কিছু কাজ করতে বললেন। স্বাভাবিকভাবে তাদের কাছে নিজ মায়ের মতো নিস্বার্থ আচরণ কখনোই প্রত্যাশিত নয়। কাজেই আপনার চাহিদা পূরণে আগে অন্যের চাহিদা জেনে নিন। আপসরফা করে আপনার কাজটি আদায় করে ফেলুন।
লেখাপড়া করে এবং নানা রকম প্রশিক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট যোগ্যতা অর্জন করলেন। এত সব যোগ্যতা নিয়ে এখন বসে থাকলে কি আর সফলতা পাওয়া যাবে। পছন্দের কর্মক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিদের আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। কার্যকর যোগাযোগের ওপর মতানৈক্যে পৌঁছানোর অন্যান্য কৌশল নির্ভর করে। কাজেই বসে না থেকে এখনই নিজেকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করুন, সফলতার পথে এগিয়ে যান।
ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্কের সবারই নানা জিজ্ঞাসা, প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। এবার এমন কাউকে পেলেন, যিনি আপনার অনুসন্ধিৎসু মনের দিগ্দর্শক। হড়বড় করে কথার মাঝে কথা না বলে আগে ভালো করে শুনে নিন। অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে ব্যাঘাত কার পছন্দ। কাজ আদায় করে নিতে চাইলে বিরক্তি উদ্রেক না করে সম্মানের সঙ্গে উক্তি ও যুক্তি শুনে নিন। অপরকে চিনুন এবং বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করুন।
আচ্ছা বলুনত “সূর্য দক্ষিণ দিকে উদিত হয়”- এই কথা বললে কে আপনাকে জ্ঞানী বন্ধুর তকমা দেবে? অবশ্যই কথা গ্রহণযোগ্য হবে, যদি বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত হয়। নিজের কাজটি অন্যকে দিয়ে আদায় করে নিতে হলে বাস্তব উদাহরণ ও যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। ঐকমত্যে আসতে কোনো ধরনের চাপ বা ভয়ভীতি দেখালে জনবহুল জায়গায়ও বনবাসের মতোই একাকি কাটাতে হবে।
মানুষের কাছে প্রিয় ব্যক্তি হওয়া সবার জন্য সহজ নয়। স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মক্ষেত্রে জনপ্রিয় ব্যক্তিটিকে দেখে কিছুটা ঈর্ষা লাগতে পারে। আবার খেয়াল করলে দেখা যায় পছন্দের ব্যক্তিটির কথা সবাই খুব সহজেই মেনে নেয় বা প্রতিপালনে মনোযোগী হয়। সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
কক্ষে প্রবেশ করে কর্মকর্তাকে হাসিমুখে ‘কেমন আছেন?’ জিজ্ঞাস করলেন। প্রত্যুত্তরে সুন্দর সৌজন্য প্রত্যাশা দূরের কথা, হলো বিপরীত। বুঝতে পারলেন কর্তার মনমেজাজ দেখে নেওয়া উচিত ছিল। অন্যের মন জয় করে নিজের কার্য হাসিলের অন্যতম হাতিয়ার অনুভূতিশীলতা। অপরের অবস্থা পরিস্থিতি বুঝে নিন, স্বার্থ সিধ্যি সহজ হবে।
অপরের মন জয়ের একটি সহজ উপায় হচ্ছে, মিল-অমিল খুঁজে নেওয়া। দেখুন তার সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাওয়ার মতো বিষয় পাচ্ছেন কি না। হয়তো সিনেমা, খাবার বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার স্থান, এমন কিছু নিয়ে আলাপ করে মিল সখ্যতা বাড়িয়ে নিন। আপনার চিন্তাভাবনা, চাহিদা, প্রয়োজনের বিষয়ে অন্যকে রাজি করানো- অনেকটা সহজ হবে।
আস্থা- বিশ্বাস অর্জন করা অন্যতম কঠিন কাজ। আপনার কথা অন্যরা তখনই শুনবে, যখন আপনি নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরশীলভাবে উপস্থাপন করবেন। অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করুন। সহমর্মিতা নিয়ে সবার সঙ্গে ব্যবহার করুন। তাহলেই আপনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা প্রত্যাশা করতে পারেন।
খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য জানতে অথবা প্রয়োজনে কাউকে ফোন দিতে হবে। কিন্তু বুঝতে পারছেন না ফোন দেবেন কি না। ব্যস্ত জীবনে আপনার প্রয়োজনের কথায় গুরুত্বের সঙ্গে শোনার সময় কারও নেই। কাজেই শ্রোতাকে এমন জায়গা বা সময়ে খুঁজে নিন, যেখানে সে প্রফুল্ল থাকেন। চায়ের আড্ডায় কিংবা নিজ বাসায় দাওয়াত দিয়েও তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপটা সেরে নিতে পারেন।
একজন সক্রিয় বক্তাকে উপেক্ষা করা সহজ নয়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই সহজ সাবলীল ও যৌক্তিকতার সঙ্গে মানুষকে প্রভাবিত করা একটা বড় গুণ। প্রতিশ্রুতি আদায়, কৃতিত্ব ও সফলতা অর্জন, এমনকি নিজেকে চিনতেও প্রভাবিত করার কৌশল অত্যন্ত ফলদায়ক।
তাই বসে থেকে সময় নষ্ট করে উপদেশের বিষয়গুলোতে চর্চা শুরু করুন। নিজের জগৎটাকে প্রসারিত করন।