বই পড়লেই কারামুক্তি!

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২২, ১০:৩৩ এএম

বই অবসরের বন্ধু, একাকিত্ব দূর করে। আবার জ্ঞানার্জনেও বই পড়ার বিকল্প নেই। মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে বই। মানুষের ধ্যানধারণাকে বিকশিত করে। সেসব ধারণাকে মাথায় রেখেই  কারাবন্দিদের জন্য় বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলিভিয়ায় বেশ কিছু কারাগারে। 

ডয়চে ভেলে সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার বেশ কিছু কারাগারে লাইব্রেরির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে কারাবন্দিরা বই পড়ছেন। বই পড়ার বিনিময়ে তারা পুরস্কৃতও হচ্ছেন। পাচ্ছেন তিন ধরনের পুরস্কার।

বলিভিয়ার মোট ৪৭টি কারাগারে চালু করা হয়েছে ‘বুকস বিহাইন্ড বার’ প্রকল্প। এর অধীনে প্রতিটি কারাগারেই রাখা হয়েছে লাইব্রেরি। যেখানে কারাবন্দিদের জন্য বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ পেয়ে কারাবন্দিরাও ভীষণ উচ্ছ্বসিত। রীতিমতো হিড়িক পড়ে গেছে বইপড়ায়!

বলিভিয়াতে কারাবন্দিদের জন্য় মৃত্যুদণ্ডের প্রথা নেই। সেখানে বিচারপ্রক্রিয়া ধীরস্থির। কেউ কারাবন্দি হলে তার বিচার শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর বিচার শুরু হলেও তার পুরো প্রক্রিয়া শুরু হতে সময় লাগে অনেক দিন। এরপর শাস্তি দেওয়া হলে আরও অনেক বছর কারাগারেই কেটে যায়। আর শাস্তির মেয়াদ শেষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া ভাগ্যের বিষয়। তাই তাদের কারাজীবনের একঘেয়ে কাটাতে বই পড়ার সুযোগ করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির প্রশাসন। 

প্রতিবেদনে আরও জানায়, ৪৭টি কারাগারে চালু থাকা লাইব্রেরিতে কারাবন্দিরা আগ্রহ নিয়ে বই পড়ছে। রীতিমতো ৮৬৫ জনের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হয়ে গেছে বই।

বই পড়ার বিনিময়ে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে কারাবন্দিদের। তার সঙ্গে বিশেষ দুটি প্রণোদনাও দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। ‘বুকস বিহাইন্ড বার’ প্রকল্পে সফলতা আনতেই এই সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।

কারা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও জানায়, অনেক কারাবন্দিই নিরক্ষর ছিলেন। তারা বর্ণমালার সঙ্গেও পরিচিত ছিলেন না। তাদের জন্য় নতুন জীবন নিয়ে এসেছে এই প্রকল্প। কারাজীবনে একঘেয়ে ভাব কাটাতে এবং জ্ঞানার্জনে এটি সুফল দিচ্ছে। তার নতুন জীবন পাচ্ছে। কারাবন্দিরা বিভিন্ন কাজের বিনিময়ে প্রতিদিন ৮ বলিভিয়ানো, অর্থাৎ ১.১৮ ডলার পান। আর বই পড়লে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়।

শুধু বই পড়া নয়, কারাবন্দিদের পরীক্ষাও নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। যারা পাস করেন তাদেরই বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এ সুযোগ পেয়ে আনন্দিত কারাবন্দিরাও। কারাবন্দি থাকা জ্যাকুলিন এক বছরে আটটি বই শেষ করেছেন এবং পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। যা নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। শাস্তি মওকুফের জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বলিভিয়ার আগে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এক কারাগারে বন্দিদের জন্য বই পড়ার সুযোগ প্রথম চালু হয়। সেই দেশেও বিচারপ্রক্রিয়া ধীরস্থির। কারাগারের জীবনকে ‘অর্থবহ’ করতেই এই অভিনব উদ্যোগ নেয় দেশটির প্রশাসন।