ঈদুল ফিতর উৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে ঈদি বা সালামি। নতুন পোশাক পরে নামাজ শেষে কোলাকুলি করে সবাই। এরপরই শুরু হয় বড়দের পা ধরে সালাম করা। আর ঈদি নেওয়া। ঈদি নেওয়ার প্রথা বহু আগ থেকেই চলে আসছে। বড়রা ছোটদের সালামি দেবে, এটাই থাকে মূল আকর্ষণ।
যুগ পাল্টেছে। কিন্তু ঈদি বা সালামি নেওয়ার প্রথা পাল্টেনি। এখনো ছোটরা বড়দের কাছে ভিড় করে ঈদ সালামি নিতে। বয়স যা-ই হোক, সম্পর্কে বড় হলেই ঈদ সালামি দেওয়া যেন বাধ্যতামূলক রীতি। এতেই যেন ঈদ আনন্দ। স্বজনদের বাড়ি ঘুরে সেমাই-পায়েসে মিষ্টি মুখ করা আর ঈদ সালামি দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই কেটে যায় ঈদের দিনটি।
ঈদ সালামি মানেই নতুন টাকা। বড়দের সালাম করলেই নতুন টাকা সালামি মিলে। ব্যাংক থেকে নতুন টাকা আগেই সংগ্রহ করে রাখা হয়। ছোট-বড় নোটগুলো বান্ডেল করে পকেটে নিয়ে রাখে বড়রা। আর ছোটদের সালামি দেয়। ছোটরাও উপহারে নতুন নোট পেয়ে বেজায় খুশি হয়। তারা টাকার নতুন নোটগুলো ভাজে ভাজে গুজে রাখে ব্যাগ বা পকেটের কোনায়।
ছোটবেলা থেকে বড়বেলা, ঈদের আমেজে সালামির রীতি কিন্তু পাল্টায়নি। শুধু পরিবর্তন হয়েছে, দেওয়া-নেওয়ার প্রথায়। ছোটবেলায় সালামি পাওয়া সুযোগ বেশি থাকে। আর বড়বেলায় সালামি দেওয়ার হার বাড়ে। বয়স যত বাড়বে সালামি পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার অঙ্কটাও বাড়বে। বয়সে ছোটদের সংখ্যা বেড়ে যায়। তখন সালামিও গুনতে হয় দ্বিগুণ।
বড়রা এখন ঈদে নতুন পোশাক উপহারের পাশাপাশি সালামির বাজেটও আলাদা করে রাখে। ঈদের সকালে কাকে কত টাকা সালামি দেবে, তা-ও ঠিক করে রাখে। সালামির অঙ্কটাও এখন আগের চেয়ে অনেকটা বেড়েছে। আশির দশকে সালামি দেওয়া হতো দুই টাকা করে। কিন্তু এখন সালামির অঙ্কটা বেড়ে দাড়িয়েছে সর্বনিম্ন ১০ টাকায়। এছাড়া সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় এই অঙ্কটা আরও বাড়ে। তবে সালামির অঙ্কটা যাই হোক এর মাঝেই যেন ঈদ আনন্দ লুকিয়ে থাকে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সালামিতে আরও নতুনত্ব জুড়ে গেছে। সালামি দেওয়া-নেওয়ার রীতি আগে পরিবার আর স্বজনদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেই গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে গেছে চারপাশে। অফিস বা কর্মস্থলেও এখন চলে ঈদ সালামি। ঈদের আগে বা পরে কিংবা ঈদের দিনই দেখা হলে সালামি দেওয়া-নেওয়ার ধুম পড়ে। অফিসের বস কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঈদ সালামি উপহার দিচ্ছেন তাদের ছোট সহকর্মীদের। ঈদ উৎসবে যা নিতান্তই আনন্দের ও আন্তরিকতার।
ডিজিটাল যুগে সালামির দেওয়া-নেওয়াতেও এসেছে নতুনত্ব। যুক্ত হয়েছে অনলাইন সেবা। এখন অনলাইনের মাধ্যমেও ঈদ সালামি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঈদ সালামির আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে এই সুযোগ করে দিয়েছে। তাই দূরে থেকেও এখন সালামি বাদ যাবে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ঈদ সালামি পৌঁছে যাবে আপনার পকেটে।