ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। রমজান মাসের এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ উদযাপন করি আমরা। ধনী-গরিব ঈদের দিন একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। পবিত্র ঈদে সব গ্লানি এবং দুঃখ ভুলে বন্ধু-মিত্র-শত্রু সবাইকেই গলায় মিলিয়ে নিই। জানাই ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছো। ঈদের খুশিকে ভাগাভাগি করে নিতেই শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। জানানো হয় ‘ঈদ মোবারক’।
ঈদের আনন্দ উদযাপনের বড় একটি অংশ হচ্ছে শুভেচ্ছা বিনিময়। দূরের-কাছের সব বন্ধু-আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে জানানো হয় ঈদ শুভেচ্ছা।
‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলনটা বেশ সুন্দর। তবে মুসলিমদের আগে সালাম দিয়েই এই শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হয়। সালামের পর ‘ঈদ মোবারক’ বলা উচিত। এছাড়া হাদিসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতির কথাও জানানো হয়েছে। ঈদ শুভেচচ্ছায় এ দোয়া পাঠ করা সর্বোত্তম— ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ বলা। যার অর্থ হলো, আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন।
ওয়াসিলা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। মহানবী (সা.) বললেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৩/৪৪৬)’
হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী এভাবেই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। এরপরই ঈদ আনন্দে কাঁধে কাঁধ মেলানো, উষ্ণ অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা বিনিময়, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, পরস্পর মিলে-মিশে খাবার গ্রহণ করা ভালো।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মুসলিম সংস্কৃতির আরেকটি অংশ হচ্ছে কোলাকুলি ও আলিঙ্গন করা। কোলাকুলি মানে মুআনাকা করা। ঈদের দিন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে মুআনাকা করা সুন্নত। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরা পরস্পর সাক্ষাৎ হলে হাত মেলাতেন। আর তারা সফর থেকে আগমন করলেও মুআনাকা করতেন। (তাবরানি, হাদিস : ৩/২২)
এছাড়া ঈদের দিন বড়দের বা ছোটদের হাতে চুমু খেয়েও শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। এটি ইসলামি অভিবাদনের বৈধ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা পরস্পরের হাতে চুমু খেয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এটি গুরুজনদের প্রতি ইসলামি শিষ্টাচারের অংশও বটে।
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) মদিনায় আগমন করে আমার বাড়ির বাইরে এসে হাজির হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দিকে দৌড়ে গেলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন ও চুমু খান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫/৭৬)
ইসলামি শরিয়ত মতে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পন্থায় আপনিও এবার ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পারেন। এছাড়া দূরের স্বজনদের ফোন করে বা ঈদ বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা দিতে পারেন।
ঈদের শুভেচ্ছা জানানো যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধুদের জন্য় লিখে দিতে পারেন শুভাকাঙ্ক্ষিত কোনো বাণী। কিংবা শুধু ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ লিখে বা ‘ঈদ মোবারক’ লিখেও ঈদ শুভেচ্ছা জানানো যায়।
ঈদ শুভেচ্ছায় আগে ঈদ কার্ডের ব্যবহার ছিল। সময়ের গতিতে তা এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। রঙিন-সাজানো ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হতো। দেওয়া হতো ঈদের নিমন্ত্রণ। কিন্তু এখন প্রথা প্রায়ই বিলুপ্ত। তবে চাইলে আপনি সেই ঐতিহ্যকে আগলে রাখতে পারেন। প্রিয়জনকে স্পেশাল ঈদ শুভেচ্ছা দিতে উপহার দিতে পারেন ‘ঈদ কার্ড’।