বাঙালি নারী মানেই শাড়ি। শাড়ি পরতে পছন্দ করেন না এমন নারী খুঁজে পাওয়া ভার। দেশিয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে শাড়ির রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সুতি, জামদানি কিংবা তাঁত সব শাড়িতেই নারীদের বিশেষ আকর্ষণ থাকে। আলমারির তাকজুড়ে শাড়ির কালেকশনের কমতি নেই। পছন্দ হলেই শাড়ি কিনতে হবে কিংবা উত্সব মানেই নতুন শাড়ি কেনা চাই। শাড়ি কিনে আলমারিতে জমিয়ে রাখতে রাখতে তা নষ্টও হয়ে যায়। এভাবে পছন্দের শাড়িও দীর্ঘ সময় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শাড়ির বুননে আর উপকরণে নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। তা পার হলে শাড়ি নষ্ট হবে স্বাভাবিক। কিন্তু অযত্নে রাখলে সময়ের আগেই শাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শাড়ির যত্নে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি_
হরেক রকম শাড়ির প্রচলন রয়েছে। শাড়িভেদে যত্নও তাই ভিন্নরকম। কোন শাড়ির যত্ন কীভাবে নিতে হবে তা নিয়ে থাকছে আজকের এই আয়োজন_
সুতি শাড়ির যত্ন করা সহজ। এটি পরিষ্কার ও সংরক্ষণেও ঝামেলা নেই। বাড়িতেই এই শাড়ি ধুয়ে নেওয়া যাবে। সুতি শাড়ি পরিষ্কার পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে নিন। গরম পানির ব্যবহার করবেন না। এতে শাড়ির রং নষ্ট হয়ে যায়। সুতি শাড়ি ধোয়ার পর এরারুট দিয়ে নিন। এরপর টানটান করে মেলে দিন। শুকিয়ে গেলে ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে রাখুন।
মনে রাখবেন, বাটিক করা শাড়ি সরাসরি রোদে শুকাতে দেওয়া যাবে না। আর ব্লকের শাড়ি ধোয়ার আগে উল্টো পিঠে আয়রন করে নিতে হবে। এরপর রোদে শুকিয়ে নিয়ে ধুতে হবে। এতে ব্লকের রং নষ্ট হয় না। বাসাতেই এসব শাড়ি পরিস্কার করে নেওয়া যাবে। ব্লক বা বাটিকের শাড়ি প্রথমবার ধুতে হলে লবন পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ঝুলিয়ে পানি ঝরিয়ে নিবেন। এরপর দুই পাশ সমান করে মেলে দিন। শুকিয়ে গেলে ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে রাখুন।
মণিপুরী শাড়ি বাড়িতে পরিস্কার করে নিতে পারেন। হালকা ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করুন। ভুলেও এই শাড়ি কচলিয়ে ধুবেন না। শাড়ি রোদে শুকাতে ঝুলিয়ে দিন। দুই পাশ সমান রেখে ঝুলিয়ে দিবেন। না হলে মণিপুরী শাড়ির ধরণ বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
তাঁত শাড়ি বাড়িতে পরিষ্কার না করাই ভালো। ড্রাই ক্লিনিং করিয়ে নিন। ওয়াশিং মেশিনেও শাড়ি ধুতে দিবেন না। এতে তাঁতের শাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। শাড়ি আলমারিতে রাখার আগে আয়রন করে রাখুন। অনেকদিন পরা না হলে মাঝে মাঝে খুলে ভাজ উল্টেপাল্টে নিন।
কাতার ও বেনারসি শাড়ি ক্যালেন্ডার ওয়াশ করতে হয়। এই শাড়িও হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। কিছুদিন পরপর এসব শাড়ি বের করে নিন। রোদে দিয়ে হালকা শুকিয়ে নিন। রোদে দেওয়ার সময় উল্টো করে দিবেন। এরপর ভাঁজ পাল্টে আলমারিতে রাখুন।
সিল্ক শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে আলমারিতে রাখুন। ড্রাই ওয়াশ করতে হবে। বাড়িতে ধোয়া যাবে না। এই শাড়ি উল্টো করে ইস্ত্রি করান। সিল্ক শাড়িতে দাগ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে দাগের অংশে পাউডার দিয়ে রাখুন।
জর্জেট ও শিফন শাড়ি আলমারিতে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভাজ করেই রাখুন। কাজ করা জর্জেট শাড়ি উল্টো করে ভাঁজ করুন। এই ধরণের শাড়ি ড্রাই ওয়াশে দিয়ে পরিস্কার করে নিন। বাসায় ধুতে চাইলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। পানি ঝড়িয়ে মেলে দিন।
জামদানি শাড়িকে কাটা ওয়াশ করতে হয়। এই শাড়ি আলমারিতে ভাঁজ করে রাখবেন না। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন বা রোলারে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। ভাঁজ করে রাখলে জামদানি শাড়ির মাঝে মাঝে কেটে যায়। শাড়ি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।