সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। বাঙালির ইতিহাসের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর। ঐতিহাসিক সব ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিকামী জনগণের আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরার জন্যই এই নির্মাণ।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বিবর্তনের ধারায় ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ এই প্রান্তরে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন বাঙালির হৃদয়ে। দৃঢ় প্রত্যয়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
তারই ক্রমধারায় ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই। আর এই প্রেক্ষাপটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর স্থাপন করা হয়।
জানা যায়, ৬৭ একর বিস্তৃত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ বর্গমিটার পাকা চাতাল বা প্লাজা এবং এর চারপাশে রয়েছে তিনটি জলাশয়, বাঙালি জাতিসত্তার অমরতার প্রতীক ‘শিখা চিরন্তনী’ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভিত্তি করে নির্মিত একটি দেয়ালচিত্র।
বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে সুগভীর তাৎপর্য, তার সঙ্গে সংগতি রেখেই সুউচ্চ স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং গগনচুম্বী আলোকরশ্মিমালার পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাধীনতা জাদুঘরটি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বাস্তব নিদর্শনে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৪৪টি প্যানেলে বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতিসত্তার স্বাধীনতার ইতিহাস আলোকচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে।
জাদুঘরের উপরিভাগে রয়েছে ১৫৫ আসন সংখ্যার আধুনিক মানের মিলনায়তন। স্বাধীনতা স্তম্ভটি বস্তুত ১৫০ ফুট উচ্চ একটি গ্লাস টাওয়ার। গ্লাস টাওয়ারে স্থাপিত লাইটের আলোকরশ্মি ৫ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে প্রক্ষেপিত হয়।