ব্যস্ত জীবনে হারিয়ে যাওয়া শখ

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২১, ০৫:১৪ পিএম

শখ ছাড়া মানুষ হয় না। কেউ শখ পূরণ করে বেড়ায়, কেউ তা নীরবেই চেপে যায় নিজের মধ্যে। মানুষের জীবনে কোনো না কোনো শখ থাকেই। শিশু, কিশোর ও তরুণ বয়সে শখের চর্চা বেশি হয়। কেউ শখ করে বাগান করেন, কেউ গান গান, কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজায়, কেউ বই পড়ে কিংবা কেউ ছবি আঁকে। অনেকে আবার শখ করে ডাকটিকেটের মতো কোনো বস্তু সংগ্রহ করেন।  এমন নানা ধরনের শখ ছোট থেকেই বাসা বাঁধে মনের মধ্যে।

তবে সময়ের ব্যবধানে শখের রং ফিকে পড়ে যায়। কর্মজীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই শখের সেই কাজ থেকে দূরে সরে আসেন। যান্ত্রিক জীবনে নিজের শখ পূরণে বেশ অনীহা চলে আসে।

সাধারণত দেখা যায় শৈশব, কৈশোর বা তারুণ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি মানুষ কিছুটা সময় বের করে শখের কাজ করে। কিন্তু কর্মজীবন শুরুর পর কাজের চাপে কিংবা কোনও মানসিক চাপে শখ পূরণের জন্য সময় বের করা হয় না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মারজুক ইসলামের শখ গান করা। মিউজিকে নিজের তৃপ্তি খুঁজে পান। বন্ধুদের আড্ডায় অনেক গান করে বেরিয়েছেন। স্টেজও কাঁপিয়েছেন একটা সময়। কিন্তু এখন ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ব্যস্ততায় আয়োজন করে গান করা আর হয় না। তিনি বলেন , " সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কাজের মধ্যেই থাকতে হয়। ৮ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় কাজ করে এমনিতেই ওষ্ঠাগত প্রাণ। সেখানে আলাদা করে শখের পেছনে সময় দেওয়াটা শুধুই বিলাসিতা।"

শখকে পেশায় পরিণত করে নিলে সার্থকতা পাওয়া যায়। কিন্তু শখ যদি শুধু চার দেয়ালে বন্দি থাকে তবে তা শুধুই বিলাসিতা মনে হয়। কারণ সেই শখের কাজ থেকে কোনও অর্থ যোগান হচ্ছে না। অনেকেরই ধারণা, নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য শখের কাজগুলো করা যায়। কিন্তু অর্থের যোগান দিতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিয়ে নিজের জন্য সময় বের করা হয় না। তাই শখের কাজগুলো অবহেলায় পড়ে থাকে।

শুধু তাই নয়, সমাজে অনেকেই শখের কাজকে তুচ্ছ করে দেখে। পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এই কাজকে নেতিবাচক বলে মনে করে। অনেক সময় বন্ধু-বান্ধবও উৎসাহ না দিয়ে বরং শখের কাজটিকে তাচ্ছিল্য করে দেয়। সবকিছুর ভিড়ে অনিচ্ছার সত্ত্বেও হারিয়ে যায় শখ। অজান্তেই ধীরে ধীরে তা নিজের থেকে দূরে চলে যায়।

সময় স্বল্পতা বা অর্থ যোগানের উৎস না হলেও একজন মানুষের শখ থাকা প্রয়োজন। এর জন্য চেষ্টাটাও নিজেকেই করতে হবে। সবকিছু সামলে নিজেকে সময় দিতে শখকে লালন করতে হয় নিজের মধ্যেই। এতে জীবন উপভোগ্য হয়ে উঠে।

শখের মানুষকে সৃজনশীল করে তোলে। তাই সৃজনশীল কাজটিকেই যদি কেউ পেশা বানিয়ে নেয় তাহলে আর নীরবে কষ্ট পেতে হয় না। নিজের শখকে কেউ কাজে পরিণত করতে পারলে মন যেমন ভালো থাকে, তেমনি কাজটিও হয়ে ওঠে সহজ।