৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার হিন্দুধর্মাবম্বলীদের অন্যতম উৎসব সরস্বতী পূজা। সাধারণত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা হয়। বাণী অর্চনার মধ্যে দিয়ে পালিত হবে সরস্বতী পূজা। এই দিন ঘরে ঘরে পূজিত হবেন বিদ্যা-বুদ্ধির দেবী। পূজা উপলক্ষে এরই মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়েছে বিশেষ আয়োজন।
সরস্বতী পূজা হিন্দু বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। এটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। এই তিথি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত।
শ্রীপঞ্চমীর দিন ভোরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত রয়েছে।
এই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলোতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মা জগৎ সংসার, গাছপালা, জীব-জন্তু সৃষ্টি সত্ত্বেও কিছুর অভাব লক্ষ করেন। তখন তিনি নিজের কমন্ডল থেকে পানি ছিটালে এক স্ত্রী প্রকট হন। তার এক হাতে বীণা ও অপর হাতে পুস্তক ছিল। আবার তৃতীয় হাতে ছিল মালা আর চতুর্থ হাতে ছিল বরমুদ্রা। তিনিই হলেন সরস্বতী। ওই সময় সরস্বতীর বীণা বাদনের সঙ্গে সঙ্গে সংসারের সমস্ত জিনিসে স্বরের সঞ্চার হয়। বসন্ত পঞ্চমীর দিনেই সরস্বতীর উৎপত্তি। সে সময় থেকেই দেবলোক ও মৃত্যুলোকে সরস্বতী আরাধনা শুরু হয়।
সাধারণত ২৩ মাঘ, ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে শুরু হবে শ্রীপঞ্চমী তিথি, যা শেষ হবে ২৩ মাঘ ১৪২৮, ৬ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল ৭টা বেজে ৩৯ মিনিটে। এই দিন সকালে উঠে গোসল দিয়ে শুদ্ধ, পবিত্র, পরিষ্কার পোশাক পরতে হয়। অনেকে পূজার আগের দিন নিম ও হলুদ বাটা মেখে শরীর ও মনের শুদ্ধি করে নেন।
পুজোর স্থানে একটি পিঁড়ির ওপর সাদা কাপড় রেখে সেখানেই সরস্বতীর মূর্তি স্থাপন করা হয়। মূর্তির সামনে পানিভর্তি ঘট বসিয়ে এর ওপর আম্রপত্র রাখা হয়। এর ওপর থাকে পান পাতা।
পুজোর স্থানে একপাশে হলুদ, কুমকুম, চাল, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুল-মালা দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। কুল ও নানান রকম ফলের সমাহার থাকে সেখানে।
সাধারণত কুলই হলো সরস্বতী পূজার প্রধান ফল। প্রচলিত রীতি মেনে অনেকেই সরস্বতী পুজোর আগে কুল খান না। পুজোর অঞ্জলির পর সাধারণত কুল খাওয়া হয়।
যেহেতু এই পূজায় বিদ্যাদেবীর আয়োজন করা হয় তাই সরস্বতী মূর্তির এক পাশে দোয়াত, খাগের কলম ও বই রাখা হয়। সঙ্গে থাকে আমের মুকুল, পলাশ ফুল।
সংগীত বা নৃত্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত সামগ্রীও বিদ্যাদেবী সামনে রাখুন। এরপর সরস্বতী পুজোর মন্ত্র পাঠ করতে হবে। মন্ত্র পাঠ শেষে দেবীর চরণে ভোগ নিবেদন করুন।