ঢাকা শহরের দীর্ঘ যানজটের কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় অপচয় হয়। অনেক সময় এই বিরক্তিকর বিষয়টি আমাদের মানসিকতাকে বিকৃত করে দেয়। প্রচণ্ড খারাপ লাগা কাজ করে যানজটে পড়লে।
তবে এই বিরক্তিকর সময়কেও কাজে লাগানো যেতে পারে, যদি আপনার সদিচ্ছা থাকে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নেতিবাচকতার মাঝেও ভালো কিছু করার ক্ষেত্র তৈরি করা যায়। নিত্যদিনের যানজটের সময়টা কাজে লাগাতে বরং কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যা আপনাকে এই একঘেয়ে সময়টা পার করতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
অনেকসময় দীর্ঘক্ষণ জ্যামে বসে থাকলে মানসিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ কাজ করে। আর এসব থেকে মুক্তি পেতে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। যানজটের দুর্ভোগের কথা ভুলে গিয়ে পছন্দের কোন কিছুতে মনোযোগ দিন। সাময়িক উদ্বেগকে পাত্তা না দিয়ে বরং শান্ত থাকতে চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে বড় করে জোরে জোরে নিশ্বাস টেনে নিন এবং আস্তে আস্তে তা ছাড়ুন। আবার চোখ বন্ধ করে কোনো ভালো স্মৃতি কিংবা শৈশবের কোনো মজার ঘটনার কথাও ভাবতে পারেন। এতে আপনার সাময়িক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ অনেকটাই কেটে যাবে।
ঢাকা শহরের দুর্বিষহ জ্যামে যখন আঁটকে থাকে গাড়ির চাকা। তখন মন মেজাজ ঠিক রাখতে কিংবা মানসিক প্রশান্তির জন্য হাতে তুলে নিতে পারেন প্রিয় লেখকের কোনো বই। এমন অনেক বই হয়তো পড়বো পড়বো করে আর পড়া হয়ে উঠেনি। জ্যামের কথা মাথায় রেখে গাড়িতে ওঠার আগে বই নিয়ে নিন। জ্যামে আটকে থাকার সময়ে পড়তে পারেন সেই বই। সঙ্গে বই না থাকলে নেটে সার্চ দিয়ে ফ্রিতে বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ ভার্সন পাবেন। পড়তে পারেন সেটাও। বই পড়ার ফলে আপনার মনের জানালা যেমনি খুলতে থাকবে তেমনি জ্যামের বিরক্তিকর সময়ও কেটে যাবে। ব্যস্ত জীবনেও এই যানজট আপনাকে বই পড়ার জন্য কিছুটা সময় তো বের করে দিচ্ছে। অনেক সময় নেতিবাচকতার মাঝে থেকেও ইতিবাচক কিছু খুঁজে বের করা যায়।
গাড়ির এফএম রেডিও চালিয়ে দিতে পারেন যানজটের সময়টাকে। বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম শুনতে শুনতে আপনার সময় এমনিতেই কেটে যাবে। রেডিওতে দারুণ সব গান শুনতে পাবেন যানজটের সময়। তাই মেজাজ ঘরম না করে রেডিওর চ্যানেল ঘোরাতে থাকুন। আর নিজের পছন্দ মতো গান শুনুন।
সময় কাটাতে বিভিন্ন টাইপের গেমস খেলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ব্রেইন ট্রেইনিং গেমস’গুলো খেলতে পারেন। এগুলো আপনার মানসিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। স্মার্টফোনে এলিভেট, পিক, লুমোসিটি ইত্যাদি ব্রেইন ট্রেইনিং গেমসগুলো খেলুন। এগুলো আপনার ব্রেনকে শার্প করবে এবং চিন্তাশক্তি বাড়াবে। এ ছাড়া নিউজপেপার কিংবা ম্যাগাজিনের দেয়া কোনো মজার শব্দজট বা ধাঁধা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।
সময়ের অভাবে হয়তো পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে জ্যামে বসে ইউটিউবে তা দেখে নিতে পারেন। আজকাল প্রায়ই সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। এ ছাড়া ল্যাপটপ কিংবা ট্যাব তো আছেই। সুতরাং পছন্দের যে কোনো টিভি সিরিজ দেখে নিতে পারেন যানজটের বিরক্তিকর সময়টাতে।
সময় কাটাতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেন। সারা দিনের কাজের প্ল্যান, রুটিন কিংবা কোনো প্রোজেক্টের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। আর এর ফলে মাথায় নতুন কোনো আইডিয়া এলে তা ডায়েরি কিংবা নোটবুকে টুকে রাখলে সেটা পরবর্তী সময়ে কাজে দিবে। কখন কোন আইডিয়া কাজে লেগে যায় তা তো বলা যায় না। তাই সারাদিন কি কি করবেন, সে বিষয় নিয়েই ভাবতে থাকুন এ সময়।
ট্র্যাফিক জ্যামের সময় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করে নিতে পারেন কিংবা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে তাও রেডি করতে পারেন। এ ছাড়া চাকরি প্রার্থীরা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য স্টাডি করতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক সাইট আছে, যা থেকেও আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। ইউটিউবের বিভিন্ন শিক্ষণীয় টিউটরিয়াল দেখেও অনেক কিছু শেখা যায়। যেমন-ইউটিউব দেখে দেখে মাইক্রোসফট এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টের কিংবা টুকটাক গ্রাফিক্সের কাজও শিখতে পারবেন।
মাতৃভাষার পাশাপাশি বাড়তি একটা ভাষা শিখে রাখা যেতেই পারে। এতে মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। গাড়িতে ভাষা শিক্ষার বই রাখুন। সাহায্য নিতে পারেন ইন্টারনেটেরও। বলা ও পড়তে পারার পাশাপাশি লিখতে পারাটাও এই সময়ে শিখে নিতে পারেন।
ব্যস্ততার কারণে হয়তো কাছের আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেয়া হয় না অনেক সময়। জ্যামে আটকে থাকা সময়টা কাটাতে পারেন কাছের মানুষের খোঁজখবর নিয়ে। এ সময় ফোন করতে পারেন তাদের। যোগাযোগ করতে আত্মীয়স্বজনরাও সন্তুষ্ট হবে। অন্যদিকে আপনার সময়টাও সুন্দরভাবে অতিবাহিত হলো।
যানজটের দীর্ঘ সময়টা কাজে লাগাতে পারেন ফটো এডিটরের কাজ করে। ফোনের ছবিগুলো এডিট করেই পোস্ট করা হয় সাধারণত। এবার যানেজটে বসেই সে কাজ সেরে ফেলুন। ক্যাপশনের লেখাটাও প্রস্তুত রাখতে পারেন যানজটে বসেই।
জ্যামে পড়ে গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে হয়তো খারাপ লাগা শুরু হতে পারে। তখন এই পীড়াদায়ক সময়কে কাজে লাগাতে সৃজনশীল কোন কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার মনের অপ্রকাশিত ভাবনাগুলো ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করুন। কিংবা আশেপাশের মানুষজনের জীবনযাপন অথবা দৃশ্যপটগুলোকে লেখনীর ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন।