শীত আসতে আসতেই ত্বকের নানা সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভুগতে হয় ঠোঁট ফাটাসহ ঠোঁটের নানা সমস্যায়। অনেক সময় শুষ্ক ও প্রচণ্ড রুক্ষ হয়ে যায় ঠোঁট। আবার দিনের পর দিন অযত্নে ঠোঁটে পড়তে পারে কালচে দাগ। ফলে অল্প বয়সী সেই গোলাপি ঠোঁট আর থাকে না। তা ছাড়া মানহীন লিপস্টিকের ব্যবহারের কারণেও আপনার ঠোঁটের হতে পারে ভয়াবহ আবস্থা
সাধারণত জীবনযাত্রায় অনিয়ম, খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, ধূমপান ইত্যাদি কারণে মেলানিন বেড়ে গেলে ঠোঁট কালচে হতে পারে। আবার বংশগত কারণেও এটি হতে পারে। কারও পরিবারে আগে থেকেই ঠোঁট কালচে হওয়ার ইতিহাস থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে তিনিও এই সমস্যায় ভুগবেন। কিছু ভিটামিন আছে, যার অভাব দেখা দিলে তার প্রভাব পড়ে ঠোঁটে। ফলে রং হয়ে যায় কালচে। তবে নিয়মিত যত্ন নিলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হবে ঠোঁটের কালো দাগ।
লেবু অ্যাসিডিক গুণসম্পন্ন। এটা প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করে। লেবু ব্যবহার করলে ঠোঁটের মৃত কোষ উঠে গিয়ে ভেতরের গোলাপি আভা বাইরে চলে আসবে। লেবু কেটে নিয়ে তাতে সামান্য চিনি ছিটিয়ে দিতে হবে। টুকরোটা আলতোভাবে ঠোঁট ঘষতে হবে। এভাবে দিনে একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
ত্বক কোমল রাখতে গোলাপজলের জুড়ি নেই। এক চা-চামচ মধুতে দুই তিন ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে নিন। দিনে দুইবার ঠোঁটে ব্যবহার করতে হবে। সরাসরি গোলাপের পাপড়ি বেটেও ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে একটু মাখন মিশিয়ে নিলে আরও কার্যকর হবে।
এখন বাজারে খুব সহজে বিট পেয়ে যাবেন। এক টুকরা বিট নিয়ে ঠোঁটে ভালো করে ঘষতে থাকুন। ১৫-২০ মিনিট পর ভালো করে তা ধুয়ে ফেলুন। বিটের রস ঠোঁটের পোড়া ও কালচে ভাব দূর করবে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে সতেজতা এনে দিতে পারে এবং ত্বক সুস্থ রাখে।
বেকিং সোডার সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। চক্রাকারে ২-৩ মিনিট ঠোঁটে মাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ভেজা ভাব শুকিয়ে গেলে ঠোঁটের কোনো জেল ব্যবহার করুন।
এক চা-চামচ পানিতে এক চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার নিয়ে তুলা দিয়ে ঠোঁটে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দানকারী উপাদান হিসেবে কাজ করবে এটি।
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে তুলা দিয়ে একটু গ্লিসারিন মাখিয়ে রাখুন। এতে ঠোঁট আর্দ্র থাকবে। শুষ্কতা দেখা যাবে না।
অনেকক্ষণ যাদের রোদে থাকতে হয়, তারা লেবুর সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারেন। এ মিশ্রণ কিছুক্ষণ ঠোঁটে রাখুন। এরপর ভেজা নরম কাপড় দিয়ে তা মুছে ফেলুন।
মধু, চিনি আর বাদামের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে মালিশ করুন। এই মিশ্রণ আপনার ঠোঁটের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার কোমলতাও বাড়াবে।
প্রতিদিন অন্তত দুবার করে টমেটোর রস ঠোঁটে মাখুন। এতে আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল হবে।
ঠোঁটকে উজ্জ্বল করতে ল্যাকটিক অ্যাসিড খুবই উপকারী। দুধ বা টক দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড। দুধ বা টক দই তুলোয় নিয়ে প্রতিদিন অন্তত দু’বার করে ঠোঁটে মালিশ করুন। এটি ঠোঁটের মরা চামড়াগুলোকে ঘষে তুলে দিতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল ঠোঁটের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে চমৎকার কাজ করে। এক চা-চামচ নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলে সামান্য চিনি মিশিয়ে গুলিয়ে নিন। স্ক্রাব যেভাবে ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবে ঠোঁটে ঘষুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতিতে ঠোঁটের যত্ন নিলেই হবে। দূর হবে কালচে ভাব। এতে যে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তা ঠোঁট আর্দ্র ও সবল রাখে।
ঠোঁটে বেদানার রস ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এক টেবিল চামচ বেদানা ব্লেন্ড করে নিন। পানি দেয়া যাবে না। পেস্টটা দুই ঠোঁটে মেখে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেদানার রস মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ঠোঁটের কালচেভাব দূর করবে।
শসার রসে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটা দ্রুত পিগমেন্টেশন কমাতে পারে। শসা কেটে আগের মতোই ব্লেন্ডারে পেস্ট বানিয়ে নিন। দেুই ঠোঁটে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হবে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।