কোরবানির মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২১, ১১:৪০ এএম

আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। কোরবানি নিয়ে অনেক প্রস্তুতি থাকে। ঈদের আগে যেমন প্রস্তুতি নিতে হয়, কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পরও সব গুছিয়ে নিতে হয়।

কোরবানির ঈদে পশু জবাই দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘরে মাংস আনা শুরু হয়।এই সময় মাংস সংরক্ষণ করতে অনেকেরই প্রায় হিমশিম খেতে হয়। সঠিক ও সহজ কিছু উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করা সম্ভব। সঠিক উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করলে যেকোনো পদ রান্নায় স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকবে।

গরুর মাংসে ২৩ থেকে ২৭ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এ ছাড়া থাকে লৌহ, ফবফরাস ও ভিটামিন ডি। মাংসের পুষ্টিগুণ যাতে অতি সহজেই নষ্ট না হয়, সে জন্য সঠিক নিয়মে মাংস সংরক্ষণ করতে হয়। পুষ্টিবিদরা জানান, অল্প তাপে বেশি সময় ঢেকে রান্না করলে মাংসের ভিটামিন সুরক্ষিত থাকে।

খাদ্যবিজ্ঞানে বলা হয়, অতি পচনশীল খাদ্যের তালিকায় একটি হচ্ছে মাংস।অর্থাৎ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা না হলে মাংস খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। পশু জবাইয়ের পর মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রেখে দেওয়া যায় না। এতে মাংসের পেশিগুলো খুব নরম হয়ে যায়। মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ দুটোই নষ্ট হয়ে যায়।

কোরবানির মাংস সংরক্ষণের সঠিক কিছু পদ্ধতি জানাব এই আয়োজনে।

  • ফ্রিজে মাংস রাখার আগে অবশ্যই ফ্রিজ পরিষ্কার করে নেবেন। অপরিষ্কার ফ্রিজে দুর্গন্ধ হয়। সেখানে মাংস রাখাও ঠিক নয়।
  • সাধারণত জবাইয়ের অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাংসে রক্ত থাকে। সে অবস্থায় কোনোভাবেই মাংস ফ্রিজে রাখা যাবে না। ফ্রিজে মাংস রাখার আগে ভালোভাবে রক্ত ধুয়ে মাংস পরিষ্কার করে নিতে হবে। অথবা ধোয়ার পর অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য বড় ঝুড়িতে রেখে দিতে হবে।
  • পানি ঝরে গেলে পলিথিন প্যাকেটে রেখে ভালোভাবে মুখ পেঁচিয়ে বন্ধ করে ফ্রিজে রাখতে হবে। এভাবে মাংস অনেক দিন ভালো থাকবে।
  • মাংস যদি ধুতে না চান তাহলে পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে মাংসের গায়ে লেগে থাকা রক্ত ভালোমতো মুছে নিন। এবার পলিথিনে করে ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করুন।
  • খেয়াল রাখুন যেন মাংসের টুকরা বেশি বড় না হয়। ছোট ছোট টুকরা করে মাংস সংরক্ষণ করা ভালো।
  • যে পলিথিন দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করবেন, সেটি যেন বড়, মোটা ও পরিষ্কার হয়। তাহলে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করার সময় প্যাকেট ছিঁড়ে যাবে না।
  • মাঝে মাঝে ফ্রিজে রাখা প্যাকেটগুলো একটু নাড়াচাড়া করুন। এতে করে প্যাকেট একটার সঙ্গে অন্যটা লেগে যাবে না।
  • আগে ব্যবহার করা হয়েছে এমন পলিথিন না নেওয়াই ভালো, কারণ এতে মাংসে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিন। তাহলে মাংস দ্রুত জমে শক্ত হবে।
  • মাংস হালকা সিদ্ধ করেও সংরক্ষণ করা যায়। মাংস ভালোভাবে ধুয়ে পরিমাণমতো হলুদ, লবণ মাখিয়ে পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে রাখতে পারেন। এই পদ্ধতিতে মাংস ফ্রিজে না রেখে বাইরেও সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। তবে দিনে অন্তত দুবার ভালোভাবে জ্বাল করে নিতে হবে। এতে মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে মাংস অনেক দিন ভালো থাকে।
  • রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। মাংসে চর্বি ফেলে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এবার চিকন তারে গেঁথে মাংস রোদে শুকিয়ে নিন। এতে মাংসে থাকা পানি শুষে নেয় রোদ। মাংস অনেক দিন ভালো থাকে।
  • পরপর ৫-৬ দিন মাংস রোদে দিন। মাংস শুকিয়ে একদম শক্ত হলে মুখ বন্ধ করা পাত্রে বা টিনের কৌটায় মাংস ভরে ভালো করে মুখ বন্ধ করে রাখুন। মাঝে মাঝে কৌটা ধরে মাংস রোদে দিন। তাহলে পোকার আক্রমণ হবে না।
  • রোদে শুকানো মাংস রান্না করার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাংস নরম হবে।
  • মাংস রান্না করে ছোট ছোট বক্সে সংরক্ষণ করতে পারেন। ফ্রিজের নরমাল চেম্বারে রেখেও সংরক্ষণ করা যাবে রান্না করা মাংস।