আজকাল ফেসবুকে কেবল বন্ধুত্ব নয়, প্রেমের সম্পর্ক হওয়াটা খুব সাদামাটা একটা ঘটনা। অবসর সময় কাটানো কিংবা দূরে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম এই ফেসবুক। তেমনি অসংখ্য মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমও ফেসবুক। এই পরিচয় থেকেই তৈরি হচ্ছে বন্ধুত্ব, এমনকি হচ্ছে প্রেম ও পরিণয়।
তবে এসব কিছুর সঙ্গে আছে ফেসবুকের একটি ভয়ানক ব্যাপার-‘অনিরাপত্তা’। ভার্চুয়াল জগতে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আর প্রেম যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ধোঁকা- প্রতারণা- যৌন হয়রানির মতো মারাত্মক অপরাধ। কারো ব্যক্তিগত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া, ব্ল্যাক মেইল, ফেক আইডি খুলে অপরাধ সংগঠন করাসহ নানান ঘটনা। তাই ভার্চুয়াল জগতে সম্পর্ক তৈরিতে প্রয়োজন সচেতনতা।
চলুন জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল সম্পর্কে নিরাপদ থাকার কিছু কৌশল-
ছবির প্রাইভেসি
আমাদের ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা হয়তো অনেক বেশি। কিন্তু বাস্তবে তাদের অর্ধেক মানুষকে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। যে মানুষটিকে আপনি বাস্তবে চেনেন না, তাকে কি করে অনুমতি দিচ্ছেন আপনার ব্যক্তিগত ছবি দেখার জন্য? আপনার ছবি দেখে হয়তো অনেকেই লাইক, কমেন্ট করছে। আর সেটা দেখে আপনার ভালোও লাগছে। তবে এই সুযোগে চুরি হয়ে যাচ্ছে আপনার ছবি। অনেকেই হয়তো আপনার ছবি সেভ করে রাখছে নিজের কম্পিউটারে। আর সময় সুযোগ বুঝে তা ব্যবহার করছে ফেক আইডি ব্যবহার করতে, কিংবা বিভিন্ন পেজে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে আপনার আত্মীয় পরিজন ও একান্ত আপন বন্ধুদের নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপ করে রাখবেন। প্রাইভেসি সেটিঙয়ে এমন ব্যবস্থা করে রাখবেন, যেন শুধু সেই মানুষগুলোই আপনার ব্যক্তিগত ছবিগুলো দেখতে পারে।
একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে নয়
অনেক তরুণ তরুণী (বিশেষ করে মেয়েরা) নিজেদের নানান অঙ্গ ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করে। ছবিটি দেয়ার সময় মেয়েটি হয়ত কল্পনাও করতে পারে না, এর ভবিষ্যৎ কি হতে পারে! নিতান্ত ভালো লাগা থেকে এরকম ছবি আপলোড করে মেয়েরা। অনেক সময় মেয়েদের একান্ত ব্যক্তিগত এসব ছবি প্রতারক দল ব্যবহার করে বিভিন্ন পর্ণ সাইট ও পেজে। তাই ফেসবুকে ছবি আপলোড করার সময় ছবি নির্বাচনে সচেতন হয়ে যান।
ম্যাসেঞ্জারে ব্যক্তিগত ছবি নয়
কারো সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হলেই তার সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো ছবি শেয়ার করবেন না। অনেক সময় দেখা যায় পরিচিত বন্ধুই আপনার কাছে ছবি চেয়ে বসেছে। আপনি নিশ্চিন্তে তাকে আপনার ব্যক্তিগত একটা ছবি দিয়ে দিলেন। এর ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। কোনো প্রলোভনে ( বিয়ে বা প্রেমের) পড়েই এমন কাজ করবেন না। মনে রাখবেন জীবন আপনার আর জীবনের নিরপত্তাও আপনার কাছেই।
ঠিকানা ও ফোন নম্বর
ফেসবুকে কখনও নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর প্রোফাইল তথ্যতে লিখে রাখবেন না। তাতে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে পারেন আপনি। অবার নজরে পড়তে পারেন কোনও অপরাধ চক্রেরও। ফেসবুকে কোনও বন্ধু ঠিকানা আর ফোন নম্বর চাইলেই চট করে দিয়ে দেবেন না।
প্রেমের ব্যাপারে সচেতনতা
ভার্চুয়াল সম্পর্ককে আপনার কাছে খুব রোমান্টিক মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নাও থাকতে পারে। এটা মাথায় রাখবেন, যে মানুষটিকে আপনি এখনও বাস্তব জীবনে চেনেননি তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে যাওয়া কতটা সঠিক! ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা, প্রতারণা ও অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে এই প্রেমের উপরে ভর করেই। তাই সচেতন হয়ে যান ফেসবুকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির আগে।
ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে
আমরা অনেকেই ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে থাকি। দেখা যায় ফেসবুকের বন্ধুটি একসময় আমাদের বাস্তব জীবনেরও বন্ধু হয়ে গেছে। তবে কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস না করাই ভালো। সতর্ক থেকে মানুষটাকে যাচাই করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি তার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় দেখা করবেন না, কোনো নির্জন জায়গা বা দূরে কোথাও দেখা করতে রাজি হবেন না। লঙ ড্রাইভে যাবার প্রস্তাব করলে প্রথমেই প্রত্যাখ্যান করুন। প্রথম সাক্ষাতে দেখা করতে পারেন পাবলিক প্লেসে যেমন, কোনো মার্কেট বা কোনো খাবার জায়গা বেছে নিন দেখা করবার জন্য, যেখানে সবসময় মানুষ থাকে।