ধাতব মূর্তির ভেতরে পদ্মাসনে ধ্যানে মগ্ন এক সন্ন্যাসী!

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১, ১১:৪৯ এএম

হাজার বছর বয়সী এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তি স্ক্যান করে চমকে দিলেন গবেষকরা। রহস্যময় এই মূর্তিটি ছিল নেদারল্যান্ডসের মিউজিয়ামে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য মিয়েন্ডার মেডিক্যাল সেন্টারে বয়স্ক রোগীদের চিকিত্‍সা করা হয়। সেখানেই হাজার বছর বয়সী ওই মূর্তির স্ক্যান করা হয়।  বিজ্ঞানীরা ওই মূর্তির মধ্যে মানবদেহের অস্তিত্ব পেয়েছে। যদিও বহু আগ থেকেই মুখে মুখে প্রচার ছিল বিষয়টি। এবার প্রমাণ মিলেছে তাদের।

সিএনএন জানায়, প্রাচীন এই রহস্যের উপর আলোকপাত করার জন্যই মিউজিয়াম থেকে ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখারেই অবাক হয়ে যান চিকিত্‍সক এবং গবেষকরা।

গবেষকরা জানান, সোনালি রঙের ওই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তির সিটি স্ক্যান করার পরই দেখা যায়, বাইরে দেখে মূর্তি, কিন্তু এর ভিতরে রয়েছে পদ্মাসনে ধ্যানে মগ্ন এক সন্ন্যাসী! যার নাম লিউকুয়ান।

গবেষকরা আরও জানান, ওই সন্ন্যাসীর দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিছুই ছিল না। তবে তার দেহের ভিতরে বৌদ্ধ ভাষায় লেখা কাপড় ভরা ছিল। কীভাবে তার দেহ থেকে সব অঙ্গ বের করে নেওয়া হলো, কীভাবে তার মমি তৈরি হলো তা এখনো রহস্যই রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর গবেষণাও চলছে।

বিভিন্ন গবেষণায় তারা প্রমাণ পেয়েছেন, জাপানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে খুবই প্রচলিত প্রথা ছিল নিজেই নিজের দেহের মমিফিকেশন করা। পুরো এশিয়াজুড়েই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে এই  রীতির চল ছিল।

লেখক জেরেমিয়া কেনের ‘লিভিং বুদ্ধা’ নামক বইয়ে এই বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়ে, কীভাবে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেদের দেহ মমি বানাতেন। সন্ন্যাসীরা খুব কঠিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেই এমনটা করতেন।

বইতে বলা হয়, এটা খুব ধীরগতির প্রক্রিয়া। তারা বাদাম, বেরি, গাছের ছাল খেতেন। এতে নাকি ক্রমে তাদের শরীরের চর্বি গলে যেত এবং শরীর আর্দ্রতা হারিয়ে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে উঠত। মৃত্যুর পর শরীরে ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি আটকাতে জীবিতাবস্থায় বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ খেতেন তারা। আরও খেতেন বিশেষ এক ধরনের চা, যা বিষাক্ত হার্ব দিয়ে বানানো হতো। এই চা পান করে তাদের শরীরও বিষাক্ত হয়ে উঠতো। তাই মৃত শরীরে ম্যাগট তৈরি হতে পারত না।

এইভাবে দীর্ঘদিন কড়া ডায়েটে করে ওই সন্ন্যাসী যখন একেবারেই মৃতপ্রায়, তখন তাকে মাটির নিচে একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হতো। তিনি সেই কক্ষের ভিতরেই ধ্যানে বসতেন। আর বাঁশের তৈরি একটি ফানেলের মধ্যে দিয়ে শ্বাস নিতেন। এই ভাবেই তিনি মাটির নিচে ওই কক্ষে পড়ে থাকতেন।

প্রায় তিন বছর পর ওই সন্ন্যাসীকে কক্ষ থেকে বের করে মন্দিরে নিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেন অন্য সন্ন্যাসীরা। কোনও সন্ন্যাসীর যদি মমিফিকেশন না হয়, তা হলে তাকে কবর দেওয়া হতো। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কাছে মমিফায়েড সন্ন্যাসীরা মৃত নন। তারা অমরত্ব লাভ করেছেন এবং এভাবেই ধ্যানে মগ্ন। তবে নিজেদের মমি করার চেষ্টায় অনেকেই সফল হননি বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মাসনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় থাকা প্রায় দুইশো বছরের পুরোনো এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মমি উদ্ধার হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার মঙ্গোলিয়ায় ওই মমির খোঁজ মেলে। তার সারা দেহ পশুর চামড়া দিয়ে আবৃত ছিল।

তবে ইতিহাসবিদরা জানান, বৌদ্ধ মূর্তির মধ্যে সন্ন্যাসীর মমির খোঁজ এই প্রথম মিলল। হাঙ্গেরির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে ওই মূর্তি বহুদিন ধরেই প্রদর্শিত হয়। এরপর ইউরোপের লুক্সেমবার্গ মিউজিয়ামে রাখা হয় কিছুদিন। সেখানে থেকে নেদারল্যান্ডের ড্রেন্টস মিউজিয়ামে নিয়ে আসা হলে সেখানেই হয় তার ঠিকানা।

 

সূত্র: ডেইলি হান্ট