বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি সারাদেশের মানুষ উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদযাপন করে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবেগের প্রতীক। এই দিনে মানুষ নিজেকে সাজিয়ে তোলে নতুন বছরের শুভ সূচনা করতে। বৈশাখের সাজ-পোশাক থাকে উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাঙালিরা এই দিনে নিজেকে নতুন রূপে উপস্থাপন করে। লাল সাদা রঙের পোশাকে সেজে উঠে। হাতে চুড়ি, কপালে টিপ পরে হাত রাঙিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সারদিন আনন্দ উদযাপন করে। তাই নববর্ষের সাজ-পোশাক থাকে অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ।
নারীদের বৈশাখী সাজ বলতে প্রথমেই আসে শাড়ির কথা। বৈশাখের সকালে লাল-সাদা শাড়ি যেন এক অনবদ্য ঐতিহ্য। সাধারণত সুতি বা হ্যান্ডলুম কাপড়ের লাল-সাদা শাড়ি এই দিনে বেশি জনপ্রিয়।
কেউ কেউ জামদানি, কটন, টাঙ্গাইল বা ঢাকাই শাড়িও পরেন। অনেক সময় নারীরা সাদা জমিনে লাল পাড়ের শাড়ি বেছে নেন, যা বৈশাখের প্রতীকী রঙের প্রতিফলন।
শাড়ির সঙ্গে মানানসই রঙের ব্লাউজ পরা হয়। আজকাল অনেকেই কস্টিউম জুয়েলারিতে বৈচিত্র্য আনেন। কানে ঝুমকা, হাতে চুড়ি, গলায় টেরাকোটার হার কিংবা কাঠের গয়না বেশ জনপ্রিয়। লাল টিপ ও খোলা চুল বা বেণি করে ফুল লাগানো সাজকে দেয় পূর্ণতা।
বৈশাখের সাজে হালকা মেকআপই বেশি মানায়।হালকা ফাউন্ডেশন, কাজল, লাল বা গোলাপি লিপস্টিক, ও একটি টিপ—এই কম্বিনেশনেই তৈরি হয়ে যায় নিখুঁত বৈশাখী সাজ। চুলে বেলি, রজনীগন্ধা বা গাঁদা ফুলের মালা জুড়ে দিলে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া আরও বেশি প্রকাশ পায়।
পুরুষদের বৈশাখের পোশাকে পাঞ্জাবি সবচেয়ে প্রচলিত। সুতি কাপড়ের হালকা রঙের পাঞ্জাবি গরমে আরামদায়ক। সাদা, অফ-হোয়াইট, লাল, কমলা বা হলুদের মিশ্রণে ডিজাইন করা পাঞ্জাবি এই দিনে বেশি চলে। অনেকে ফতুয়া বা কুর্তা-ধরনের পোশাক বেছে নেন, যা দেখতে আধুনিক এবং পরতে আরামদায়ক। পাঞ্জাবির সঙ্গে সাধারণত সুতি পায়জামা, সাদা ধুতি, কিংবা আজকাল জিন্সও পরে অনেকে। ট্র্যাডিশনাল ধুতি-পাঞ্জাবি যারা পরেন, তারা রীতিমতো এক ঐতিহ্যের ধারক হয়ে ওঠেন।
সানগ্লাস, ঘড়ি, অথবা ছোট খাটো হাতে বাঁধা রক্ষাসূত্র অনেকেই পরেন। যারা আধুনিক সাজে বিশ্বাসী, তারা পাঞ্জাবির সঙ্গে স্নিকার্স বা লোফার পরেও একটি ফিউশন লুক নেন।
শিশুদের বৈশাখী সাজে সবসময় থাকে উচ্ছ্বাস আর রঙের ছটা। ছোট মেয়েরা সাধারণত ফ্রক বা ছোট শাড়ি পরে। অনেকে সালোয়ার-কামিজ বা লেহেঙ্গাও পরেন। ছেলেরা পরতে পারে ছোট পাঞ্জাবি-পায়জামা বা টি-শার্ট ও জিন্স। শিশুদের পোশাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আরাম ও সহজ চলাফেরা। অতিরিক্ত গরমে অস্বস্তি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
বৈশাখী সাজের সময় খেয়াল রাখতে হবে পোশাক যতই সুন্দর হোক না কেন, যদি তা গরমে অস্বস্তিকর হয়, তবে ঘুরাঘুরি ও আনন্দ বিঘ্নিত হয়। তাই আরামদায়ক সুতি পোশাক বেছে নেওয়া উচিত।
বৈশাখ মানেই রঙের উৎসব। তাই পোশাকে উজ্জ্বল রঙ যেমন—লাল, কমলা, হলুদ, সাদা, নীলের ব্যবহার দিনটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
অনেক সময় শুধু দামি পোশাক পরলেই সাজ পূর্ণ হয় না। পরিষ্কার, পরিপাটি ও পরিপূর্ণভাবে পোশাক পরা, সঙ্গে গুছানো চুল ও সঠিক অ্যাকসেসরিজ ব্যবহারে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
বৈশাখের সাজ-পোশাকের মাধ্যমে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বর্ণিল রঙে, ঐতিহ্যের পোশাকে নিজেকে ভিন্ন রূপ তুলে ধরতে প্রস্তুত থাকে বাঙালিরা।